Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় সায়ন্তন ধর

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় সায়ন্তন ধর

মাটি নয়, মানবী নয়, দুর্গা যখন প্রাকৃতিক

সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম, অতিক্রম করতে হবে অনেকটা দূরত্ব। সদর দরজাটা খুলতেই চোখ গেলো ভিজে মাটির ওপর ঝরে পড়া শিউলি ফুলগুলোর দিকে। ক্যালেন্ডারে শরতের মাঝামাঝি হলেও বৃষ্টি এখনও চলছেই। মাটি ভিজে কালো হয়ে আছে। তার ওপর সাদা ও কমলা দলের শিউলি বেশ হাইলাইটেড হয়ে হাসছে যেনো। একটা উৎসব উৎসব ভাব নিয়েই হাঁটা দিলাম মেইন রোডের দিকে। দীঘির পাশের ফুরুস গাছগুলোও সাদা ও গোলাপী ফুলে নিজেদের সাজিয়ে নিয়েছে। ওদের মন বোঝা মুশকিল। বসন্তেও ওরা এভাবে সাজে। আবার শরতেও। একটু আনন্দ পেলেই হয়েছে আর কি। মেন রোড থেকে বাস পেয়ে গেলাম খুব তাড়াতাড়িই। কিছু পরেই এসে গেলো তিস্তা ব্রীজ। এখনও জল আছে ভালোই। মাঝের সাদা চরটি দেখা যাচ্ছে না। চরের বালিতে আঘাত পেয়ে উথালপাথাল করছে ঘোলা জলরাশি। কিছুদিন আগেই কি বিপর্যয়ের মুখেই না পড়েছিল ও। সিকিমের হিমবাহ হ্রদ লোনাকের হঠাৎ ভেঙে পড়া সামাল দিয়েছিল একা হাতে। পাহাড়কে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে না পারলেও সমতলে আঁচও লাগতে দেয়নি তিস্তা। দীপ জ্বেলে যাই এর সুচিত্রা সেন বা কাহানি সিনেমার বিদ্যা বালানের মতো একা হাতে সবকিছু সামলে দিলো। গর্ব হয় ওকে দেখলে। কি অত্যাচারিত, কিন্তু তবু মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে চলেছে। দূরে যেখানে নদী আরও চওড়া, সেখানে রূপোলি কাশবনে সোনা রোদ লুটোপুটি খাচ্ছে। বাস এগিয়ে চলেছে… নয়ানজুলিগুলোতে শোভা পাচ্ছে গোলাপী শালুকের দল। সদ্য ফোটা আলস্য নিয়ে চোখ কচলে দেখছে শরতের অপার সৌন্দর্য্যকে। চখাচখি, শামুকখোল পাখিরা গেরী-গুগলি খুঁজে নিচ্ছে সেখান থেকেই। ব্রোঞ্জ উইঙ্গড জাকানা সন্তর্পনে পা রাখছে শালুক পাতার ওপর। দেখতে দেখতে জলঢাকা নদী চলে এলো, সেই ভুটানের পার্বত্য অঞ্চল থেকে কত ধারায় যে তার সৃষ্টি। ভুটানী নাম ছেড়ে জলপাইগুড়িতে জলঢাকা হলো আমাদের সে কন্যা, কোচবিহার জেলার মানুষ নাম রাখলো মানসাই ও সিঙিমারী। বাংলাদেশে পরিচিত হলো ধরলা নামে। একদম মেয়েদের মতো জীবন তার। এক নামে পরিচিত হতে নেই, বাপের বাড়ির নাম, শ্বশুর বাড়ির নাম… মানুষ তাকে নাম দেয়, কিন্তু দুঃখের দাম দেয় না। তাতে কি, তার যে বয়ে চলাই কাজ। আমার গাড়িরও ম্যাস্টিক ফোরলেন ধরে এগিয়ে চলাই কাজ, সে তাই করে চলেছে। দেখতে দেখতে তোর্ষা চলে এলো। সবার মতো সেও গাল ফুলিয়ে চোখের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে তার বুক। তোর্ষার ঠোঁটে হাসি ফোটাতে একটা ছড়া শোনালাম ওকে… যদি এমন হত, শরৎ যদি হেমন্তকে বলত ডেকে ছুটি তোমার, আসবে নাকো আমার পরে, শিশিরে হায় ভিজতো না আর ঘাস পড়তো না হায় শিউলি ভূঁয়ে ঝরে। শীতকে যদি হেমন্তিকা বাদ সাধতো ছোট দিনের আমেজ তখন পেতাম কোথা, শীতটা যদি ভীষণ রকম গরম হত মরশুমীদের প্রস্তুতি সব হত বৃথা। শীত যদি হয় গরম কালের মত গরম বসন্তের আর কি কোন কদর থাকে, ঋতুরাজ ভাববে একি অরাজকতা ফল ফলারির আকাল হবে এ বৈশাখে। বাসন্তী তার ম্যাজিক দিয়ে বর্ষা আনে গ্রীষ্ম জ্যেঠুর তাপ কিন্তু কমের দিকে, এমনটাতো হতেই পারে, অবাক কেন? কাটিয়ে দাও না উলট পূরাণ কাব্য লিখে। মেঘ যদি হার মানে দিবাকরের কাছে বর্ষার কাছে পৌঁছে না দেয় নিমন্ত্রণ পত্র, বৃষ্টি কিন্তু বড়ই অভিমানী পথ ভুলে সে চলে যাবে সত্বর। বৃষ্টি যদি বা চলেই এল শেষে ফেরার নামটি নেয়না যদি ভুলেও, শরৎ তখন হয় ভীষণ জব্দ অতিবর্ষণে লাভ হয়না কারও। শিক্ষা পেল শরৎ রানী আর করেনা ভুল, বৃষ্টি তাকে দিয়েছে সাজা গুনছে ভুলের মাশুল। এই না শুনে তাকিয়ে দেখি তোর্ষাও হাসছে তার ইস্ট ব্যাঙ্কে কাশফুলের চামর দুলিয়ে। মনটা ভালো হয়ে গেলো। আমার কাছে ওরাই তো দুর্গা। মায়ের ভূমিকায় থেকে জন্ম থেকে মৃত্যু লালন পালন করে যায়, শুধু অভিমান হলে গাল ফোলায় আর কথা না শুনলে শাসন। তাও খেয়াল রাখে সৃষ্টি যেন ধ্বংস না হয়। তিস্তা পাড় থেকে চলে এলাম তোর্ষা তীরে, আমার গন্তব্যে। ডুয়ার্সের তিন বোনের খোঁজ নিলাম, খোঁজ নেওয়া হলো না কালজানি আর সংকোশের। ওদের মনের অবস্থাও কমবেশি একই রকম। মাটির দুর্গা, মানবী দুর্গার কথা বলার জন্য রয়েছে অনেকে, কিন্তু আমাদের আসল দুর্গারা কবে ফিরে পাবে তাদের মুক্তির পথ?
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register