Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্যানুশীলনে সুদীপ ঘোষাল

maro news
গদ্যানুশীলনে সুদীপ ঘোষাল

একটি গাঁদা ফুলের মালা

স্মৃতিকন্ঠ গ্রামের মান্যগণ্য লোক। বংশগত একটা বিরাট আভিজাত্য তার চলনে বলনে প্রস্ফুটিত। স্বভাবতই সবাই তাকে সমীহ করে চলেন। তার একটিমাত্র পুত্র সন্তান। তার পড়াশোনার জন্য গ্রামের স্কুলে নিজের অর্থে সাজিয়ে তুলেছেন লাইব্রেরী রুম। যতরকমভাবে স্কুলকে সাহায্য করা যায় তিনি করেন। তার ছেলের নাম রতন। স্কুলে ছেলে মেয়ে একসঙ্গেই পড়াশুনা করে। রতন পড়ে এখন ক্লাস নাইনে। আর শুভ বাবুর মেয়ে পড়ে ক্লাস সেভেনে। গ্রাম্য রাজনীতিতে রেষারেষি লেগেই আছে এই গ্রামের তিনটি পাড়ার লোকজন স্বচ্ছল। টাকা পয়সার অভাব নেই। স্মৃতিকন্ঠবাবুর পাড়ায় আভিজাত্যের লড়াই লেগেই আছে। এক বাড়িতে গাজনে একটা পাঁঠা থাকলে অন্য বাড়িতে বাঁধে দুটো। পাঁঠার ঝোল আর মদ। একদম কম্পিটিশন। প্রয়োজনে চার পাঁচটা পাঁঠা এনেও বড়লোকি দেখানোর ব্যাপারটা লেগেই থাকে। বাকি গ্রামবাসীদের ভুরিভোজ ভালোই হয়। তারা মজামারা দল। একজনকে বাহাদুরি দিয়ে তাতিয়ে দেয় তো অন্য বাবুর জেদ বেড়ে যায়। ব্যবসায়ী যারা তারা এই সুযোগটাই কাজে লাগায়। এক গানের দল হঠাৎ একদিন শুভ বাবুর নাটমন্দিরে ডেরা বাঁধল। তারা ধর্মিয় নানা গানের মধ্য দিয়ে পালাগান শোনায়। রামায়ণ, মহাভারতের ঘটনা, যীশুখ্রীষ্টের ঘটনা গান আর নাটকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে। রাত বাড়লে নাট মন্দির লোকের ভিড়ে ভরে যায়। শুরু হয় নাটক। দেবতার গলায় গাঁদা ফুলের মালা।অভিনয় দেখে সকলেই মোহিত হয়ে যায়। নাটকের শেষে দেবতার গলায় থাকা মালা নিয়ে দরাদরি শুরু হয়। স্মৃতিকন্ঠ হাঁকেন, আমি মালার দাম দশ হাজার দিলাম। শুভবাবু পারিষদদল নিয়ে বসে আছেন। তিনি ভাবলেন,এ মালা আমাকেই নিতে হবে। তা না হলে মান সম্মান থাকবে না। তিনি মালার দর হাঁকলেন কুড়িহাজার টাকা।এইভাবে চলতে থাকল নীলামের খেলা। এদিকে নাটকের দলের মহিলা একজন বলছেন, আপনাদের গ্রামের লোক এত কৃপণ কেন। এই তো পাশের গ্রামে মালার দর পেয়েছি এক লক্ষ টাকা।শুনে মালার দর আরও বেড়ে গেল। এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকায় নীলামে একটা গাঁদার মালা কিনল গাধার দল।মুচকি হাসি আগত অভিনেত্রীর চোখেমুখে। তিনি সফল আপন কারবারে। এইভাবে বেশ কয়েকদিন টাকা কামিয়ে নাটকের দল চলে যেত আরও মুরগির সন্ধানে....
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register