Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 সাহিত্য মার্গ || ১৫০ তম উদযাপন || সংখ্যায় জবা চৌধুরী

maro news
T3 সাহিত্য মার্গ || ১৫০ তম উদযাপন || সংখ্যায় জবা চৌধুরী

 মেয়েবেলার একটি গল্প

একরাশ ভালো-লাগা, মন্দ-লাগা আর সাথে হাজারো প্রশ্নের অথৈ ভিড়ে জীবনের যে সময়টা কাটিয়ে এসেছি ---সে-ই আমার মেয়েবেলা। ক্লাস সিক্স। প্রথম বড় হওয়ার অনুভব। আগরতলার শঙ্করাচার্য স্কুল, যা সেই সময়ে মূলতঃ সন্ন্যাসী আর শিষ্যদের আশ্রম। গীতাপাঠ আর প্রার্থনা মন্ত্র পড়ে আমাদের দিন শুরু হতো। সেই স্কুল থেকে মহারানী তুলসীবতী স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়ে মনে হলো সাগরে পড়লাম। শাড়ি পড়া বড় মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম --- কবে ওদের মতো বড় হবো? ছোটবেলায় বেশ শান্ত আর গম্ভীর প্রকৃতির ছিলাম-- লোকজন তাই বলতো। সেটাকে বেশ কাজে লাগিয়ে স্কুলের বড় দিদিদেরকে নাম ধরে ডাকা শুরু করেছিলাম। দিদিগুলো আমায় ঘুব আদর করতো বলে সে নিয়ে কিছুই বলতো না। আর ওদের সাথে দুই পা হেঁটে আমারও মনে হতো --- এই তো বেশ বড় হয়ে গেছি !

সেই দিনগুলোতে আমার এক পিসতুতো দিদি হয়ে উঠেছিলো আমার খুব প্রিয়। খুব বড় কিছু নয় -- ওই দুই-আড়াই বছরের বড় হবে আমার থেকে। চুপি চুপি শুরু করলাম ওকে নাম ধরে ডাকতে। বড়দেরকে নাম ধরে ডাকা ? কেলেঙ্কারি কাণ্ড !! আমাদের পরিবার আর আত্মীয়দের মধ্যে তখন কপালে চোখ তুলে পরিচয় পর্ব শুরু হতো ---"তোমার থেকে ছ---য় মাসের বড় !" ওই দাদা, দিদি ডাকাটা ছিল বাধ্যতামূলক। সে যাই হোক, ওকে বড়োরা ডাকতো 'কল্পা',আমিও তাই ডাকতাম। প্রথমে ডাকতাম চুপি চুপি। তারপর সবাই একসময় 'অবাধ্য মেয়ে' ভেবে আমাকে মাফ করে দিয়েছিলো। অনেকটা বড় হয়ে জেনেছি ওর ভালো নাম স্মিতা।

ওই কল্পা ছিল সেই সময়ের আমার প্রিয় থেকেও প্রিয় বন্ধু। যে রোববারগুলোতে ও আসতো আমাদের বাড়িতে --- সেই রোববারগুলোকে ভীষণ ছোটো মনে হতো আমার। ও এলেই খাটের তলা থেকে বের করে আনতাম আমার বাক্স ভর্তি পুতুল পরিবারকে। শর্ট নোটিসে কত পুতুলের বিয়ে হতো তখন। পুতুলের নতুন জামা-কাপড়, বরযাত্রী, মিষ্টি খাওয়া, সব হয়ে যেত সন্ধ্যার মধ্যে। কারণ কল্পা ওরা থাকতো আমাদের বাড়ি থেকে বেশ একটু দূরে। আরও একটা কারণ ছিল সে-সময়কার দিনে, সন্ধ্যা হলেই একটা রেকর্ডিং কানের কাছে বেজে উঠতো, "পড়তে বসো।" সন্ধ্যা হলেই মা'কে কেমন যেন শত্রু শত্রু মনে হতো।

সেই দিনগুলোতে একান্নবর্তী পরিবারের প্রথম মেয়ে হিসেবে আমার আদরেরও যেমন কমতি ছিল না, শাসনেরও। সিনেমা দেখার নাম নিলে পুরো পরিবার সেই মুভিকে ছাঁকনি দিয়ে সেন্সর করতো। আমার মা-এর বাহিনীর (আমার কাকী সহ অন্য বন্ধুরা) একমাত্র রিসোর্স ছিল পত্র-পত্রিকা, দেশ, আনন্দলোক ইত্যাদি ম্যাগাজিন। ওরা সকলে একজোট হয়ে কাজ করতো, এমনি ছিল ওদের বন্ধুত্ব । কতবার এমনও হয়েছে, পারমিশন আপ্রুভ হতে হতে সিনেমা হল থেকে ওই মুভি চলে গিয়ে অন্য মুভি দেখানো শুরু হয়ে গেছে।

সেরকমই এক মন খারাপের দিনে কল্পা এলো আমাদের বাড়িতে পিসিমার সাথে। মন খারাপের কথাটা ওকে বললাম। ওর দেখা হয়ে গেছিলো সেই মুভি। আমাকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে পুরোটা গল্প আমায় শোনালো। দু'ঘন্টার বাংলা মুভি প্রায় দেড় ঘন্টায় ! প্রত্যেকটা ডিটেইল সহ কেউ এভাবে সিনেমার গল্প বলতে পারে --- সে ছিল অবিশ্বাস্য ! গল্প শেষে মনে হলো এবার হল ছেড়ে বেরোবো --- এতটাই ডুবে গেছিলাম সেই গল্পে। সেই থেকে বেশ অনেকদিন বাড়িতে মুভি দেখতে যাবার বায়না করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখনো মনে পড়ে ওদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েও একবার জেনেছিলাম খুব হিট একটা মুভি ও দেখে নিয়েছে । গল্প শুনতে সেই রাতটা ওদের বাড়িতেই থেকে গেছিলাম।

হয়তো কখনো সেভাবে বলা হয়নি। কিন্তু আমার ওই মেয়েবেলায় নিঃসন্দেহে কল্পা ছিল এক ভালোলাগা হিরো। সময়ের সাথে সব পাল্টে যায়। শুধু পাল্টায় না যত্ন করে রাখা স্মৃতিগুলো। ফেলে আসা জীবনের দিকে ফিরে তাকাতেই সব যেন কেমন সত্যি হয়ে, জ্যান্ত হয়ে ওঠে জীবনকে ভালোবাসতে শেখায় আরও বেশি করে !

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register