Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

ভ্রমণে রোমাঞ্চ ধারাবাহিকে সমীরণ সরকার (পর্ব - ১৪)

maro news
ভ্রমণে রোমাঞ্চ ধারাবাহিকে সমীরণ সরকার (পর্ব - ১৪)

তীর্থভূমি বীরভূম, ভ্রমণ তীর্থ বীরভূম

(৬) মিশ্র রীতি -

(ক) দালান শীর্ষে চালা, রত্ন, শিখর পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জায়গায় বাংলার প্রথাগত মন্দির স্থাপত্যের বাইরে কিছু প্রথা বহির্ভূত মিশ্র রীতির স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায়। এই ধরনের স্থাপত্যে দালানের উপরে চারচালা সৌধ যুক্ত মন্দির, দালানের উপরে আটচালাযুক্ত মন্দির , দালানের উপর শিখর সদৃশ একরত্ন সংস্থাপিত করে অভিনব স্থাপত্য, দালান নির্ভর পঞ্চরত্ন রীতির মন্দির, দালান শীর্ষে নবরত্ন রীতিযুক্ত মন্দির, দালানের উপর পীঢ়া জগমোহন সহ শিখর দেউল ইত্যাদির নিদর্শন পাওয়া যায়। দোতলা দালান মন্দিরের উপরিভাগে নিবদ্ধ এক ক্ষুদ্রাকার দোচলাযুক্ত স্থাপত্যের নিদর্শন বীরভূম জেলার পেরুয়া গ্রামের( থানা-- খয়রাশোল) রাধা বিনোদ মন্দিরে(১৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দ,) পাওয়া যায়। অনুরূপ, দোতলা দালানের উপর এক রত্ন রীতি দেবালয়ের নিদর্শন হল বর্ধমান জেলার ক্ষীরগ্রামের ( থানা মঙ্গলকোট) যোগাদ্যা মন্দির(আঃ১৮ শতক,)।

(খ) জগমোহনের বিচিত্র রূপায়ণ - সাধারণত শিখর মন্দির সংলগ্ন জগমোহন টি হয় প্রথাগতভাবে পীঢ়া রীতির। কিন্তু কোন কোন স্থানে শিখর মন্দিরের জগমোহন টি নির্মিত হয়েছে শিখর মন্দির এর স্থাপত্য অনুসরণে, যা প্রথম দর্শনে জোড়া শিখর মন্দির বলে মনে হতে পারে। বর্ধমান জেলার বৈদ্যপুর গ্রামের( থানা কালনা) কৃষ্ণ রায় মন্দির(১৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দ) ওই রীতির। পশ্চিমবাংলার বহু স্থানে শিখর মন্দির সংলগ্ন ইমারত অর্থাৎ জগমোহন টি মন্দির স্থপতিদের কল্পনায় ভিন্ন ভিন্ন রীতির হয়েছে । এক বাংলা জগমোহন:- একবাংলা অর্থাৎ দোচালা যেসব শিখর রীতির মন্দিরে যুক্ত হয়েছে তার মধ্যে বর্ধমান জেলার দেবীপুরের( থানা মেমারি) লক্ষ্মী জনার্দন,(১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) ও বীরভূম জেলার পাঁচড়ার( থানা-, খয়রাশোল) পরিত্যক্ত পাথরের মন্দির,(আঃ ১৮ শতক) উল্লেখযোগ্য। চার চালা জগমোহন:- শিখর মন্দির সংলগ্ন চারচালা স্থাপত্য যুক্ত জগমোহরের নিদর্শন মেদিনীপুর জেলার তমলুকের বিখ্যাত বর্গভীমা মন্দির‌ এছাড়া আটচালা জগমোহন, গম্বুজাকৃতি স্থাপত্য যুক্ত জগমোহন বর্ধমান জেলার ক্ষীর গ্রামের যোগাদ্যা মন্দির(আঃ ১৮ শতক,) গঠন দোতলা দালালের উপর এক রত্ন রীতির হলেও বর্গাকার জগমোহন টির ছাদ গম্বুজাকৃতি স্থাপত্য বিশিষ্ট। এই অভিনব স্থাপত্য নিদর্শন পশ্চিমবাংলার আর কোথাও দেখা যায় না।

(৭) ব্যতিক্রমী স্থাপত্য শৈলী -

(ক) গিরি গোবর্ধন মন্দির পূর্বে আলোচিত মিশ্র রীতির উদাহরণ ছাড়াও কিছু অভিনব গঠনের ব্যতিক্রমী স্থাপত্য দেখা যায় পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন মন্দিরে। মন্দির স্থপতিরা শ্রীকৃষ্ণের গিরি গোবর্ধন লীলার ধারণা অনুসরণে মন্দিরের উপরের চালে শিলাখণ্ড বিন্যাস করে পাহাড়ের রূপ দিয়েছেন। এই রীতির প্রাচীন মন্দির বর্ধমান জেলার কালনার রাজবাড়িতে ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। (খ) আট কোনা মন্দির বিভিন্ন রীতির মন্দিরের ভূমি নকশায় বর্গাকার চার কোনার বদলে কোথাও সেটা ছকোনা বা আটকোনা করে তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে। পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জায়গায় এইরকম মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া যায়। বীরভূম জেলার সুপুরের,( থানা বোলপুর) লালবাজার এলাকার শিব মন্দির এই জাতীয় মন্দির। বীরভূম জেলার আকালিপুরে (থানা নলহাটি) মহারাজ নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত গুহ্য কালিকা দেবীর মন্দির( আঃ১৮ শতক) এই জাতীয় মন্দির। ইটের তৈরি বিশাল আকার এই মন্দিরটির উপরের ছাদ বিনষ্ট হওয়ার জন্য সেটির রীতি প্রকরণ সম্পর্কে জানা না গেলেও মন্দিরটি চারিদিকে সংযোজিত প্রাচীন ঘেরা একটা প্রদক্ষিণ পথ এই মন্দিরটির বৈশিষ্ট্য। অনুরূপ স্থাপত্যের আরেকটি আট কোনা ঘেরা প্রদক্ষিণসহ এক রত্ন রীতির মন্দির নদিয়া জেলার নবদ্বীপ পোড়া মা তলায় ভবতরণ শিব মন্দির( ১৮২৩ খ্রিস্টাব)। আবার রাসমঞ্চের আদলে নির্মিত বীরভূম জেলার হেতমপুরের( থানা দুবরাজপুর) চন্দ্রনাথ শিব মন্দির টি,(১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দ,) নটি চূড়া যুক্ত হলেও সেটি আট কোনা হিসাবে নির্মিত হওয়ায় এক অভিনব স্থাপত্য রীতির উদাহরণ হয়েছে।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register