- 4
- 0
সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ১৩১ বিষয় - বসন্তের শেষে
বৈচিত্র্যময় পৃথিবী অবিরাম ঘুরে চলেছে। ঋতু পরিবর্তনের কারণেই প্রকৃতির রঙিন সাজে মুগ্ধ আমরা। প্রকৃতি থেকেই পেলাম যা মনেরঝুলিতে রেখে দিলাম। দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা, টক ঝাল মিষ্টি আর তিক্ততায় ভরা জীবন নিয়ে এগিয়ে চলতে হয়। পৃথিবীতে আসা শীত গ্রীষ্ম বর্ষার মতোই জীবনে আসে কতো অপবাদ কলঙ্ক বদনাম। কেটে যায় বসন্তের দিনগুলো হোঁচট খেয়ে। কতবার যে ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে ঝড় ঝঞ্ঝাট ,তুফান,মহামারী এসেছে তার হিসাব করা মিছে।দেখলাম বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কের নামে, ভালোবাসার নামে,আর সংসারে বিছানো প্রহসনের জালিকা। রোজ নাটক,রোজ চাঁদ দেখে ঘুমোনো,সূর্যের আলোয় জেগে ওঠা, নতুন করে রোজ বেঁচে থাকার দুরন্ত লড়াই,নতুন কিছু পাওয়ার আশায় আবার অনেক কিছু হারানোর ভয় দানা বাঁধে মননে। একবুক আশা কেনার তাগিদে চলতে হয় বাঁচার নেশায়।।
এবার শতবর্ষে স্কুলে পুনর্মিলন উৎসব। সব প্রাক্তন ছাত্র- ছাত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমাদের ৮০ সালের ব্যাচের সকলের ইচ্ছা এই উৎসবে স্কুলে গিয়ে সকলের সঙ্গে দেখা করা। ফেসবুকে স্কুলের গ্রুপে মাঝে মাঝে কথা হয় অনেকের সাথেই।কেউ কেউ বলে সবাইতো ৬২তে। এই বয়সে এসে সেই ৪২বছর আগের স্কুলটা একবার দেখাও হবে আর কিছুটা স্মৃতি রোমন্থনও হবে। এই সব ভাবতে ভাবতে ফোনটা বেজে উঠল। হ্যালো আমি কানাডা থেকে রীতা বলছি। আমি তো রীতিমতো চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম আমার নন্বর তুই কি করে পেলি? বলল ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। আমি বললাম তুই কানাডায় কবে গেলি? এইতো স্কুল থেকে রিটায়ার হয়েই মেয়ের কাছে এসেছি। ফিরব খুব তাড়াতাড়ি। স্কুলের রিইউনিয়নে আসবি। দেখা হবে কথা হবে। বলে ফোন কেটে দিল। ফোন রাখতে না রাখতেই বিজনের ফোন। সে বলল রীতা আসছে কানাডা থেকে। বলার ধরনেই সে যে এতো খুশি তা আর বুঝতে বাকি রইল না। বিজনের মুখে রীতার বৈধব্যের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। অবসর আর বৈধব্য একসাথে আসে রীতার জীবনে।বৈধব্যের পর থেকেই একাকীত্বে ভুগছিল। বীজনের অনুরোধেই এই মিলন উৎসবে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি বলেছিলাম পুরনো স্কুলটা ঘুরে দেখব আমরা আর বাড়তি পাওনা হিসেবে কৈশোরের সব বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে দেখাও হবে ।
স্কুলে এসে পরিচিতজনকে খোঁজার চেষ্টা করছি। ভীড়ের মাঝে সেই ৪২ বছর আগের চেহারার সঙ্গে বর্তমানের চেহারার তফাতের দরুন চিনতে পারিনি কাউকে। বীজন শেষে মঞ্চে উঠে ঘোষককে অনুরোধ করল একবার ঘোষণা করা হোক ৮০ সালের ব্যাচের যদি কেউ এসে থাকে মঞ্চের কাছে এসে যেন দাঁড়ায়। একে একে প্রায় আটজন বৃদ্ধ/বৃদ্ধা এসে দাঁড়ালেন। পরস্পরের নাম বলাতে সবাই সবাইকে চিনতে পারলাম। বীজন তো একেবারে টেকো।আর রীতার সব চুল সাদা।এলার্জির কারণে রং করতে পারে না।তবে দেখতে মেম লাগছিল। এরপর গল্পে গল্পে ভেসে এলো কত মধুর স্মৃতি। বীজনের মনে তখন ঝড় চলছে রীতাকে দেখে। সেই কৈশোরের রীতা যেন এই বয়সে আরও আকর্ষণীয়া। রীতাও তাঁর দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে মৃদু হাসি বিনিময় করছিল। অবশেষে কানে ভেসে এলো বিপত্নীক বীজন রীতাকে বলেই ফেলল,একটা কথা ছিল। এই বয়সে আবার কি এমন কথা থাকতে পারে। কেন থাকতে পারে না।একাকীত্বের ফাঁদে অন্তত পড়ব না। মানে বলছিলাম " তুই কি আমাকে বিয়ে করতে রাজী?" আমি সেখান থেকে সরে যেতে চাইছিলাম। ভাবছিলাম এরা কি সুস্থ? দেখলাম রীতা বীজনের হাতটা ধরে বিন্দুমাত্র কি বিবেচনা করল কি জানি। মুহূর্তে রীতা উত্তর দিলে "হ্যাঁ,..... হ্যাঁ আমি করব!" আমরা তো এখন মুক্ত। জীবন সায়াহ্ন বলে কি বসন্তের শেষ? কালের নিয়মে বসন্তকে ফিরে যেতে হয় ঠিকই। আবার কেউ যদি মনবাগিচায় তাকে ধরতে চায় জীবন সায়াহ্ন মধুর হয়ে ওঠে আবেগে।
সুখের সাগরে ভাসতে ভাসতে বাড়িতে ফিরে এলাম সবাই। কিন্তু সমস্যা হলো পরে দিন সকালে। কিছুতেই গতকালের কথা ঠিকমত মনে করতে পারছিল না বীজন,রীতা তাকে হ্যাঁ বলেছিল নাকি না বলেছিল। খুব অস্থির মনে আমাকে ডায়াল করেছিল। বলল রীতাকে ফোন করছি, ধরছে না।তারপর এ কথা সে কথার পর নিজের ভুলো মনের কথা স্বীকার করে জিজ্ঞেস করল "গতকাল আমি প্রস্তাব দেওয়ার পর রীতা হ্যাঁ বলেছিল নাকি না বলেছিল?" তুই শুনেছিলি রীতা উত্তরে কি বলেছিল?
বসন্তের শেষে তীব্র দহনে প্রাণ অস্থির। খবরের কাগজে পড়ছিলাম বৃষ্টি নেই ফসল ঝলসে যাচ্ছে। চাষীরা কপাল চাপড়াচ্ছে। এমন সময় আমি বীজনের এই বোকা বোকা প্রশ্ন শুনে ভাবলাম বীজন জীবনের বসন্তকে বিদায় জানাতে পারেনি? সে কি ডিমেনশিয়ায় ভুগছে?
তাকে বললাম,"কেমন বোকা মানুষ তুই, সে তো বলল হ্যাঁ। হ্যাঁ সে রাজি।' আমি যা শুনেছিলাম আমার কানে। সমস্তটাই বলে বোঝাতে চাইলাম।"
বীজন আমার মুখ থেকে কথাটা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর তখনই আমার কানে এলো রীতা ফোন করছে, রাখছি এখন বলে ফোন কেটে দিল। খানিক বাদে আমি বীজনকে ফোন করে জানতে চাইলাম রীতা তাকে কেন ফোন করেছিল।
বীজন বলল,হ্যালো বলতেই রীতা বলেছিল "আমি খুব খুশি যে তুমি কল করেছো। কারণ, আমি কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না কে আমাকে প্রপোজ করেছিলো।"
সে কি রে? মনে মনে ভাবলাম বসন্তময় দিন গুলোর শেষে জীবন সায়াহ্নে কি সবাই ডিমনেশিয়ায় ভোগে?
0 Comments.