Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৭)

কেমিক্যাল বিভ্রাট

তিন

অভিমন্যু একেবারে হতবাক। টিউশন নিয়ে বাড়ি ফিরছিল সে। তাদের বাড়িটা একটা গলির মধ্যে। ঠিক গলি নয়, কানাগলি। সেটা চার-পাঁচটা বাঁক নিয়ে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে একটা দশাসই বাড়ি মাথা তুলে আছে। গলিটা ওখানেই শেষ। মানে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা নেই। তা ছাড়া গলিটা এত সরু যে, তার মধ্যে একটা ছোট অ্যাম্বুল্যান্স কোনও রকমে একটা-দুটো বাঁক পেরিয়ে খানিকটা ঢুকে যাবে ঠিকই, কিন্তু বেরোতে পারবে না। কারণ, গলির ভেতরে গাড়ি ঘোরানোর মতো কোনও জায়গা নেই। তার জন্য কেউ কখনও অসুস্থ হলে, হয় রোগীকে স্ট্রোচারে করে মূল রাস্তা অবধি নিয়ে আসতে হয়, কিংবা যতটা পারা যায় ব্যাক করে অ্যাম্বুল্যান্সকে ঢুকতে হয়। ফলে এ পাড়ায় যে-গুটিকতক লোকের গাড়ি আছে, সেগুলো থাকে খানিক দূরের একটা পেট্রল পাম্পে কিংবা ক’হাত দূরের সি আই টি বিল্ডিংয়ের প্রশস্ত খোলা মাঠে। অথবা আশপাশের কারও বাড়ির গ্যারেজে। সে জন্য অবশ্য প্রত্যেক মাসে ট্যাঁকের কড়ি গুনতে হয় তাদের।
এই পাড়ায় যারা সব চেয়ে আগে বাড়ি করেছিল, গলিতে ঢুকে প্রথম বাঁক নিলেই ডান হাতের দ্বিতীয় বাড়িটা তাদের। ও যখনই ওখান থেকে যায়, অভ্যাসবশত ওর চোখ ঠিক চলে যায় ওই বাড়ির নীচের তলার জানালায়। জানালাটা রাস্তার গা বরাবর। না, ওদের গাড়ি আছে বলে নয়। আসলে ও-বাড়িতে সুস্মিতা থাকে বলে। সুস্মিতা দেখতে শুনতে খুব সুন্দর। ক্লাস নাইনে পড়ে। মমতা শঙ্করের কাছে নাচ শেখে। এই নাচ দেখেই ওকে খুব ভাল লাগে গিয়েছিল তার।
ওদের গলির উলটো দিকে যে বিশাল গ্যারেজটা আছে, সেটার মালিক শর্মাকাকুরা। ওদের পাড়াতেই থাকেন। একদম শেষ বাড়িটায়। কত পুরুষ ধরে যে এখানে আছেন কে জানে। জাতে মাড়োয়ারি হলে কী হবে, ওঁরা এখন পুরোপুরি বাঙালি হয়ে গেছেন। তাই হোলির দিনে নয়, হোলির ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ দোলের দিনই ওই গ্যারেজের মধ্যে আশপাশের লোকজনদের নিয়ে প্রতি বছর খুব ধুমধাম করে ওঁরা দোল উৎসবের আয়োজন করেন।
সকাল ন’টা-সাড়ে ন’টার মধ্যেই শুরু হয়ে যায় অনুষ্ঠান। নাচ, গান, আবৃত্তি— মূলত এ পাড়া ও পাড়ার লোকেরা মিলেই করে। মঞ্চের দু’পাশে বিশাল বিশাল দুটো কাঁসার থালায় আবির রাখা থাকে। লাল, গোলাপি, সবুজ। যারা এখানে আসে তারা ওই থালা থেকেই আবির নিয়ে একে ওকে দেয়। গ্যারেজের পেছন দিকে অনেকটা খোলা জায়গা। যেখানে অন্য সময় গাড়ি থাকে, সেখানে সামিয়ানা টাঙিয়ে সকাল থেকেই একনাগাড়ে ভাজা হয়ে থাকে আলুর চপ, পেঁয়াজি, বেগুনি। ট্রে-তে করে সাজিয়ে নিয়ে সারি বেধে চেয়ারে বসে থাকা দর্শকদের মধ্যে সেগুলো বিলি করতে থাকে চার-পাঁচ জন ছেলে। যার যত ইচ্ছে নিতে পারে। ঘন ঘন চায়েরও ব্যবস্থা থাকে।
আশপাশের বড়রা যেমন সকাল সকাল ওখানে গিয়ে হাজির হন, হাজির হয় ছোটরাও। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে বেলা দেড়টা-দুটো বেজে যায়। ফের শুরু হয় সন্ধ্যা ছ’টা-সাড়ে ছ’টা নাগাদ। তখন ভিড় হয় আরও বেশি। মূল আকর্ষণ থাকে নাটক। সঙ্গে একজন কি দু’জন বিখ্যাত গায়ক। পাশাপাশি বাছাই করা কয়েক জনের গান, আবৃত্তি এবং নাচ।
সে বার সুস্মিতার নাচ তাকে চমকে দিয়েছিল। নাচ, নাকি ওর সাজগোজ, নাকি বন্ধুদের সঙ্গে ওর খলবল করে কথা বলা, নাকি অন্য কিছু... সে জানে না। আগে যাতায়াতের পথে ওকে অজস্র বার দেখলেও সে দিনই যেন সে ওকে নতুন করে দেখেছিল।
তাই তার পর থেকে ওকে আবার, আবার, আবার দেখার জন্য সে যখনই ওদের বাড়ির পাশ দিয়ে যেত, ওদের জানালাটার দিকে তাকাত। যদি একবার ওকে দেখা যায়! দেখেওছে বেশ কয়েক বার।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register