Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

মার্গে অনন্য সম্মান সুচন্দ্রা বসু (সর্বোত্তম)

maro news
মার্গে অনন্য সম্মান সুচন্দ্রা বসু (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ১২৫ বিষয় - বাংলা ক্যালেন্ডার

বাঙালির ঐতিহ্য

নীল ষষ্ঠীর দিন আমার মা মিলিকে ফোন করেছিল । মিলি ফোন ধরেই, তোমারা সবাই কেমন আছ?

কোনরকম চলে যাচ্ছে।বয়সের সাথে নানান রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে।চৈত্র মাস এলেই পুরোনো কথা মনে পড়ে যায়।

মিলি বলল চৈত্রের শেষেও ঝিমিয়ে আছে বাজার। বিক্রি নেই। বাজারে ক্রেতার ভীড় নেই। বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকও নেই।

মনে আছে ওদের হাঁকডাক নকল করতিস। বিভিন্ন দোকানির বিভিন্ন সুরে "সেল সেল সেল" "ফুরিয়ে গেল, ফুরিয়ে গেল"; কেউবা বলতো "তুলে নাও তুলে নাও"। বলেই মা হা হা করে হাসতেই মিলিও হেসে বলল আমি তো বরের কাছে এই সুরেই আবদার করে পকেট ঝারি। আমি মায়ের হাসি শুনে তখনই মায়ের কাছে গিয়ে জানতে পারলাম মিলির কথা।

মা মিলিকে বলছিল এই চৈত্র সেলে বিছানার চাদর, বালিশের ওয়ার, সায়া, চায়ের কাপ, পাপোশ ইত্যাদি সংসারের আরোও কত টুকিটাকি জিনিস কিনতাম।পয়লা বৈশাখে বিছানায় নতুন চাদর বিছিয়ে ঘর সাজাতাম ।

হ্যাঁ গো মাসী তখন অনলাইন শপিং ছিল না। মানুষ কেনাকাটা করত পুজোর সময়ে আর চৈত্র সেলে।এখন সারাবছর কেনাকাটা চলছে আর মোবাইল, কম্পিউটারে হিসেব রাখছে। হালখাতা বিক্রির বাজারে মন্দা। মিলি দুঃখ করে আমার মাকে বলেছিল বৈঠকখানায় ৭০বছরেরও বেশী আমাদের হালখাতার ব্যবসা, ডাঁই হয়ে পড়ে আছে খেরোর খাতা।

বলিস কি রে?

‘গত দু’ বছর তো মহামারির জন্য অনেকে দোকান খোলেনি, পুজোপাঠও করেনি, হালখাতারও দরকার পড়েনি।এবার জিনিসপত্রের আগুন দাম। কাগজের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। লালকাপড় দিয়ে বাঁধাই করার দামও বেড়েছে। মা জানতে চেয়েছিল বড়বাজারের সৈয়দ আলি লেনের ক্যালেন্ডার পট্টির দোকানের কথা।

ভাই ঝুলিয়ে রেখেছে ক্যালেন্ডার।ক্রেতার ভিড় নেই। চাহিদা টেবিল ক্যালেন্ডারের। ক্যালেন্ডার তৈরির খরচও বেড়েছে।

সে যাই হোক বাংলা ক্যালেন্ডার তার চাই। জানতে চাইল পহেলা বৈশাখে পাড়ায় পাড়ায় সঙ্ঘ থেকে বাঙালি কবিতা আবৃতি, বাঙালি গান ও নাট্যউৎসব সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হত আগে।এখনও কি তা হয়? পরিস্থিতি পালটে গেছে গো মাসী।সেসব এখন আর শোনা যায় না। আচার অনুষ্ঠান সংস্কৃতি কালে কালে উঠে যাবে । পয়লা বৈশাখের দিন মাও দিদিমার সাথে বাসনের দোকানে যেত। দিদিমা সারাবছর ধরে মাসে মাসে টাকা জমা দিত খেরোখাতায় । পয়লা বৈশাখের দিন সেই টাকা মিটিয়ে নতুন বাসন কিনত দিদিমা। মিষ্টির বাক্স হাতে ফিরে আসতো বাড়িতে। ঠাকুরের ছবি দেওয়া নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার পেয়ে ঘরের দেওয়াল থেকে পুরোনাটা নামিয়ে নতুনটাকে ঝুলিয়ে দিত ।

মিলি বলল বর্তমান প্রজন্ম তো জানেই না ইতিহাসবিদদের হিসাব অনুযায়ী ১৫৫৬ সাল থেকে বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়। মুঘল সম্রাট জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবর খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য তার সভার জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লা শিরাজীর সহযোগিতায় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে 'তারিখ-এ-এলাহি' নামে নতুন একটি বছর গণনা পদ্ধতি চালু করেন। যা কৃষকদের কাছে 'ফসলি সন' নামে পরিচিত হয়, পরে 'বাংলা সন' বা 'বঙ্গাব্দ' নামে প্রচলিত হয়ে ওঠে। যে বছর বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়, সে বছর হিজরি সন ছিল ৯২৩ হিজরি। বাংলা বর্ষের মাসগুলোর নামকরণ হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নামে। হিজরি সনেরও সংস্কার হয়েছে। ইতালিতে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি ক্যাথলিক প্রটেস্টান্ট দ্বন্দ্বের কারণে ইংল্যান্ড গ্রহণ করেছিল ৭৫ বছর পর। সূর্যের ঘুর্ণন পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে হিসেব করা হয় বলে এই পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকাও বলা হয়। একটি সৌর বছরে থাকে ৩৬৫ দিন, এবং এক বছরকে ১২ মাসে বিভক্ত করা হয়। আমরা বাঙালিরা এই পঞ্জিকার মাধ্যমে বাংলা তারিখ, কোন তিথি, বঙ্গদেশের নানান অনুষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ সকল তিথি জানতে পারি। ইংরেজি ২০২৩ সালেও গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যায় বাংলা ক্যালেন্ডার যা বাঙালির ঐতিহ্য।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register