Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব - ৫২)

maro news
সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব - ৫২)

বাহান্নো

ভেতরে ঢুকেই প্রথমে একটা বিরাট বসার ঘর। আসবাবপত্রগুলো বেশ পুরোনো আর বনেদি। ঘরের এক দেয়ালে হাতে আঁকা এক বিশাল ছবি। দেয়ালের ওপরেই আঁকা। ছবিটি রামকৃষ্ণর সঙ্গে আরও অনেকের। মনে হচ্ছে রামকৃষ্ণ দেব যে গিরিশ ঘোষের নাটক দেখতে গিয়েছিলেন তাকে বিষয়বস্তু করে এই ছবি। রামকৃষ্ণ হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশে গিরিশ ঘোষ আর সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে নটী বিনোদিনী। ছবিটার নীচের দিকে আর ওপরের দিকে একটি করে ছোট লাইট। আলো দুটো জ্বালিয়ে দিলে ছবিটার মহিমা যেন আরও বেড়ে যায়। দেয়ালটির নীচে মেঝেতে গদি আর কোলবালিশ দিয়ে সাজানো। আগেকার দিনে জমিদার বাড়িতে যেমন হত। বেশ শৌখিন ছিলেন ডঃ চোঙদার বোঝা যাচ্ছে। প্রায় সারাজীবন বিদেশে থেকে শেষ জীবনটা বেশি মাত্রায় নিজের ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলেন। লুলিয়া বলল, "বসার ঘরের ডানদিকে ওনার ল্যাব আর বাঁদিকে লাইব্রেরি। প্রথমে ল্যাবটাই ঘুরে দেখলাম। ইনস্ট্রুমেন্ট আর অ্যাপারাটাস ছাড়া তেমন কিছু কিছু নজরে পড়লো না। অধিকাংশ সেলফ ফাঁকা। দেখে মনে হল ডঃ চোঙদার ল্যাবটাকে ভালো করে সাজিয়ে উঠতে পারেননি। হয়তোবা ইচ্ছেও ছিল না। তারপর লাইব্রেরি ঢুকলাম। দেখার মতো বই এর কালেকশন। ঘোরে চারদেয়াল জুড়েই বিরাট আলমারি। আলমারিগুলো মাঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত লম্বা। সবকটি আলমারিই বইয়ে ঠাসা। ঘরের মাঝখানে একটি টেবিল। টেবিলে দুতিনটি বই রাখা। আর আছে একটা ছোট নোটপ্যাড। বইগুলো বাংলা সাহিত্যের নোটপ্যাডে। এলোমেলো ভাবে অনেক কিছু লেখা। বই থেকে জোগাড় করা কোটেশন। আবার কারুর নাম। দু লাইনের একটা ছড়া, হয়তো নিজের বানানো। একটা পাতায় দেখলাম লেখা আছে রুডি। তার তলায় যেটা লেখা আছে সেটা আমার ফোন নাম্বার। তার নীচে আরও একটা নাম্বার যেটা আমার এতো পরিচিত অথচ তার নীচে নাম লেখা গোগোল। একসঙ্গে দুটো প্রশ্ন মনে জাগলো। চেনা নাম্বারটা শ্রেয়ানের। শ্রেয়ানের নাম্বার ডঃ চোঙদার লিখেছেন কেন? আমার নাম্বার আর শ্রেয়ানের নাম্বার আলাদা গোল দাগ দিয়ে মার্ক করা আছে। তার মানে ডঃ চোঙদার আমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন। আর যদি যোগাযোগ করতে না পারেন তাই শ্রেয়ানের নাম্বার ও জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু শ্রেয়ানকে গোগোল লিখলেন কেন এই প্রশ্নতার উত্তর পেলাম না। আমরা এরপর ঢুকলাম ডঃ চোঙদারের বেডরুমে। সুন্দর ছিম ছাম করে সাজানো ঘরটা।লক্ষকরলাম এই ঘরের প্রধান বৈশিষ্ট হল সব সাদা চার দেয়ালের আর সিলিং এর রং সাদা। ফ্লোরের টাইলস গুলোও সাদা। ফার্নিচার, দেয়াল ঘড়ি, ল্যাম্প শেড, বিছানার চাদর দেয়াল ঘড়িটাও সাদা। একরা ওয়াল হ্যাংগিং সেটাও সাদা। শুধু ব্যাতিক্রম খাটের পেছনের দেয়ালে ঝোলানো দুটো রামকৃষ্ণের ছবি। খুব সাধারণ এবং সবসময় দেখাযায় এরম ছবি। একটাতে ঠাকুর সামনে হাত রেখে পদ্মাসনে বসে আছে। আর একটা ডান হাত উঠিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায়। ডঃ চোঙদার রামকৃষ্ণ দেবের পরম ভক্ত ছিলেন বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু একটা ব্যাপার আমার বেশ খটকা লাগলো। যেদিকে ফটো দুটো রাখা আছে ঐদিকেই ডঃ চোঙদার নিশ্চই মাথা দিয়ে শুতেন। কারণ মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল যাকে শ্রদ্ধা করা হয় তার দিকে পা দিয়ে শোয়া যাবে না। কারণ তাহলে তাকে শ্রদ্ধা করা হয়। ফটোর দিকেই যদি মাথা করে শোয়া হয় তবে দেয়াল ঘড়িটা ফটো দুটোর মাঝখানে রাখা আছে কেন। খাটে শোয়া অবস্থায় ঘড়ি দেখা যাবে না। ঘড়িটা এখন বন্ধ হয়ে পড়ে থাকলেও একসময় নিশ্চই চালু ছিল। যাইহোক খটকাটা মাথায় থাকলো। বাকি যা দেখার ছিল কিচেন, ডাইনিং, টয়লেট সবকিছুই দেখে নিলাম। কিন্তু সব আশা বৃথা। সূত্র টুত্র কিছুই পেলাম না।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register