Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুণ্ডু (পর্ব - ১২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুণ্ডু (পর্ব - ১২)

লড়াইয়ের মিছিল

পর্ব - ১২

একটা শিশুর সংগে সময় কাটানো যে কি আনন্দের যে না সময় অতিবাহিত করেছে সে বুঝতে পারবে না। হরিদাস পালের পখে ভাষা দিয়ে উপলব্ধির জগতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আজ আশি বছর বয়সে এসে এই উপলব্ধি কেন? তার তো সন্তানদের শৈশব ছিল। তিনি কি তাদের সময় দেন নি? । সময় তো দূরের কথা। সন্তানদের বুকে জড়িয়ে খনিক আদর করার অবকাশ পান নি তিনি। বেঁচে থাকার লড়াই রাখসের মতো খেয়ে নিয়েছে সব। কাগজ কলমে তিনি পিতা হয়েছেন সত্য, কিন্তু পিতা সন্তানের হৃদিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি জঠরের আগুনকে শান্ত করতে গিয়ে। তার মানে এই নয় তিনি সন্তানদের ভালোবাসেন নি। বরং অন্য অনেক পিতার চেয়ে তার নীরব ভালোবাসা বড় বাংঙময় ছিল। ছেলে মেয়েদের অসুখ বিসুখ হলে মূহুত মাত্র দেরি না করে ছুটে, সে রাত হোক কি দিন, ডাক্তার আনতেন। সারারাত জেগে অস্হির পদচারন করতেন। ভোর হলে ওষুধ এনে দিয়ে ছুটতে হকারি করতে। লড়াই করতে করতে জীবনের আলো ফুরিয়ে এলো। যারা মানুষকে বাস্তূচূত করে অকুল সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয় মানুষের জীবন, যারা সাধারণ নিরপরাধ মানুষের সুন্দর জীবনের মানচিত্র ছিঁড়ে কুচি কুচি করে উড়িয দেয় রাতের অন্ধকার আকাশে, এই পৃথিবীতে তাদের চেয়ে বড় গনশতু আর কেউ নেই। তাদের চেয়ে হিংস পশু নেই, যারা রাতের অন্ধকারে নিরীহ গৃহস্থের খরের চালায় ছঁড়ে দের আগুনের ফুলকি।এই সব সর্ব হারা মানুষ জীবনের রসদ যোগাড় করবে, না সন্তানকে বুকে টেনে সোহাগ করবে? তবু তিনি শেষ বয়সে এসে শিশুর সংগে সময় কাটানোর অবর্ননীয় আনন্দ অনুভব করলেন। রাতের অন্ধকারের দেওয়াল ভেঙে ছুটতে হবে কেন মানুষকে? একদল মানুষ হিংস হয়ে কেন ভিন্ন ধর্মের মানুষকে পুড়িয়ে মারবে? কেন নারীর সম্রভ লুটে নিয়ে ফেলে যাবে রক্তাক্ত ধানী জমিতে? কেন কিছু ক্ষমতালোভী মানুষ ভোগের আগুন বিস্তর করতে মানুষকে ঠেলে দেবে বিপন্ন মানচিত্রের দিকে? এই মানুষগুলোর জীবন হতে পারতো ফুলের মতো, পাখির মতো, প্রজাপতির মতো নদীর মতো, শান্ত অরন্যের মতো। তার বদলে কি পেয়েছে? কে দেবে এসব ন্যায্য প্রশ্নের উওর? , 'ও দাদু এদিকে এসো না।' পাঁচ বছরের কৌনিশ দাদুর হাত ধরে টানে। চিন্তামগ্ন হরিদাস পাল নড়ে ওঠেন,' হ্যাঁ দাদু বলো কি হয়েছে? '' '. ' আমার গাড়িটা ছুটছে না। একটু গিয়ে থেমে যাচ্ছে। ' ' আর কতো ছুটবে ভাই? ' ' বাবা গাড়ি কিনে দিল সেদিন। গাড়ি ছুটলো কোথায়?' , 'তাই বুঝি। আচ্ছা দেখছি। ' হাঁটু গেড়ে বসে গাড়িটাকে উল্টে পাল্টে দেখেন। চালান। না। চলছে নাতো। কিছুটা গিয়ে থেমে যাচ্ছে। তারপর এক সময় বুঝতে পারেন সুতো কেটে গেছে। বললেন,' চলবে কি করে?' 'দুদিনে খারাপ হয়ে গেল?' '. ' যন্ত্র তো, যখন তখন খারাপ হতে পারে। কেউ বুঝতে পারে না। 'তোমার যখন শরীর খারাপ হলো তুমি বুঝতে পারো নি?' ' না''। 'আমি বলবো ভালো হয়েছে।' 'কেন? ' না হলে তো তুমি এখানে আসতে না।' কৌনিশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন হরিদাস পাল। এইটুকু বয়সে ছেলেটা বুঝে গেছে, কি থেকে কি হলে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে আসে। কথাটা মিথ্যা নয়। তিনি কোনদিন ভাবেন নি ছেলে সুদর্শনের বাড়ি এসে উঠবেন। যে ছেলেকে তিনি বের করে দিয়েছিলেন। ছেলের চোখে তিনি অপরাধী। কিন্তু তিনি জানেন অন্তরে, কেন তিনি একাজ করেছেন। জীবনে সহজে সব কিছু পেয়ে গেলে মানুষ বুঝতে পারে না, জীবন কতটা দামী। আজ সুর্দশন তাকে আদর করে নিয়ে এসেছে, একদিন মনে হতে পারে এই বাবা তার বোঝা। কেন সে সেই বোঝা বহন করবে? তিনি কিছুতেই ছেলের কাছে যাবেন না। বিকাশ বলেছে, 'এবার আপনার ছেলের কাছে থাকা দরকার। ' কেন? ' ' আবার কখন কি হয়? কে দেখবে আপনাকে? 'কেন? আমার স্ত্রী রয়েছেন, তিনি দেখবেন।' ' তারও তো বয়েস হয়েছে। রাত বিরেতে মানুষের বিপদ হয় বেশি। যেমন এবার হলো।' , 'কেন যাবো ছেলের কাছে? মৃত্যু তো একদিন হবেই।' ' ছেলের কাছে যাবেন না তো কার কাছে যাবেন? আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না?' । , সব বুঝতে পারছেন উনি। উনার মানে লাগছে। 'মাসিমা আপনি একটু বেঝান। এখন কি মান করলে চলে? বিকাশ আমাকে ঠিকই বলেছে বাবাকে যতো বোঝা বাবা যাবে না আমার বাড়ি। ' কেন যাবো? যে মানুষ লড়াই করে তার সাম্রাজ্য গড়ে, সে কি কখনও তার সাম্রাজ্য ছেড়ে অন্যর্ত যায়? হঠাৎ কৌনিশ দাদুর হাত ধরে বলে, 'দাদু আমার বড় একা লাগে। আমার কোন বন্ধু নেই। তুমি আমার বন্ধু হবে না?' হরিদাস পালের সেদিন কি যেন হয়ে গেল। রক্তের অমোঘ টানই বুঝি সব বাধ ভেঙে দিয়ে তাকে নিয়ে এলে এখানে। ,' ও দাদু তুমি কি ভাবো বলো তো? ' নড়ে ওঠেন হরিদাস পাল। উঠে দাঁড়িয়ে বলেন ' কি হয়েছে দাদু ভাই? ' এসো আমরা কম্পিউটার গেম খেলি।' , 'আমি তো কিছু জানি না ভাই।' ,' আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি।' 'দেখি পারি কিনা?' কিন্তু মনের ভিতর তার প্রবল ইচ্ছে, এই জীবনে নতুন কিছু শিখবেন। সারা জীবন তো অজানা কাজে ঝাঁপ দিয়েছেন। আজ কেন পারবেন না? পারলেন। কৌনিশকে রেস খেলায় হারিয়ে দিলেন। কৌনিশের মুখ ছোট হয়ে গেল। আবার রেস শুরু হলো। এবার তিনি হেরে গেলেন। কৌনিশ লাফিয়ে উঠলো দু হাতে তালি দিয়ে। হরিদাস পাল অনুভব করলেন তারও ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। কি আশ্চর্য হরে যাওয়ার মধ্যে এতো আনন্দ! শুধু আনন্দ নয়, তিনি বুঝতে পারলেন, চোখ দুটো ভিজে আসছে। আনন্দের মাঝে অশ্রু! নাকি অশ্রুর মাঝে আনন্দ? গুলিয়ে যাচ্ছে সব। আসলে সব পাল্টে দেয় শিশু। রক্ত। উত্তরাধিকার।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register