Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মার্গে অনন্য সম্মান রঞ্জনা মন্ডল মুখার্জি (সেরার সেরা)

maro news
মার্গে অনন্য সম্মান রঞ্জনা মন্ডল মুখার্জি (সেরার সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ১৮ বিষয় - বিজয়া তারিখ - ৩১/১০/২০২০

পঞ্চদুর্গার বোধন

আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে পাড়ার জনা দশেক তরুণ মিলে রামলালবাবুর নেতৃত্বে যে দুর্গাপূজা শুরু করেছিআল কালের প্রবাহে আজ তা ক্রমবর্ধিষ্ণু হয়ে মিলন সঙ্ঘ সার্বজনীন বারোয়ারী পূজার রূপ নিয়েছে। পাশ্ববর্তী এলাকায় বেশ নামডাক রয়েছে। পূজার দিনগুলোতে বেশ ভিড়ও হয়।ছোট্ট একফালি জায়গায় স্হায়ী দুর্গাবেদী তৈরী করে এই পূজা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজ পূজায় সর্বত্র আড়ম্বর - আতিশয্যের ছোঁয়া,প্রতিযোগিতার আবহে বাজেটের ছড়াছড়ি। তাই ছোটো দুর্গাবেদী এখন পরিত্যক্ত। পাড়ার মোড়ে রাস্তা জুড়ে প্যান্ডেল বেঁধে, তোরণ নির্মাণ, আলোকসজ্জায় জাঁকজমকপূর্ণ পূজার আকার নিয়েছে।
দিনকালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পূজার ভাবধারায়,পরিবেশে, মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। ক্লাবে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে বয়স্কদের মতবিরোধ দেখা দিতে শুরু করেছে। ক্রমশ পূজা শুরুর উদ্যোক্তরা ব্রাত্য হয়েছে।
শুরুর দিকে পূজা ছিল পাড়া প্রতিবেশীদের অংশগ্রহণমূলক।আন্তরিকতা - আবেগে প্রাণ পূর্ণ ছিল উৎসব।কিন্তু বর্তমানে প্রতিযোগিতার দৌড়ে, বিজ্ঞাপনের প্রচারে, আতিশয্যের আড়ম্বরে, চটকদার বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে কোথাও দুর্গাপূজা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে।
পূজা শুরুর উদ্যোক্তরা অনেকই ষাটোর্ধ্ব। নতুন পূজা কমিটিতে তাদের স্থান নেই। ওরাও পূজার এই প্রাণহীন আড়ম্বরতা মেনে নিতে পারে না।কথায় কথায় বাঁধে বিতর্ক, সংঘাত।
এবার রামলালবাবুরা ঠিক করেছে আবারও একবার নতুন করে দুর্গাপূজা শুরু করবে সেই পরিত্যক্ত একফালি দুর্গাবেদীতে।অর্থের যোগান সীমিত, অনুদান সাহায্যের পথ নেই। ডাক পড়লো সেই সপুএ পুরানো পুরোহিতের, পুরানো ঢাকির, যে কেবল ঢাকের বোলেই মাতিয়ে রাখতো পাঁচ পাঁচটা দিন।এদের থিম হল " জীবন্ত পঞ্চ দুর্গা "।এই উদ্যোগ দেখে নতুন প্রজন্ম, নিন্দুকেরা বিস্তর উপহাস- পরিহাস - ব্যঙ্গ- বিদ্রুপ করলো।
একটা অতিসাধারণ লাল হলুদ কাপড়ের প্যান্ডেলে দুর্গাবেদীতে অতি আড়ম্বরহীন ভাবে শুরু হল দুর্গা পূজা।পূজার দিনগুলোতে লোকজন আসতে শুরু করলো।মিলনসঙ্ঘের পাশাপাশি জীবন্ত পঞ্চদুর্গা দেখার জন্যও ভিড় বাড়তে লাগলো।পাশাপাশি পূজা হওয়ায় বিচারকরাও এলো।সবাই যখন মন্ডপ দর্শন করে তখন অদ্ভুত এক মনখারাপ মিশ্রিত ভালো লাগায় আবিষ্ট থাকে দর্শক। অশ্রুসজল চোখ মুছতে মুছতে যে যার মত সাহায্য করে ওদের। দুহাত তুলে আশীর্বাদ করে।
পঞ্চদুর্গার এক দুর্গা হল, এপাড়ার হারাধনের অষ্টাদশী মেয়ে চাঁপা,যে কিনা বছর দুয়েক আগে টিউশন ফিরতি পথে ধর্ষিতা হয়েছিল। আর এক দুর্গা মাধবী,প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অ্যাসিডদগ্ধা।আর এক দুর্গা লতা,স্বামী পরিত্যক্তা লোকের বাড়ি কাজ করে তিন সন্তানের জননী,আর এক দুর্গা শেফালী, পেটের দায়ে ছোটোবেলায় বিক্রি হয়ে যাওয়া মেয়েটি রাতের শহরের নীল আলোয় শরীরের পসরা সাজায়। আর এক দুর্গা পাড়ার পাগলীটা, কোন এক বিকৃতকামের যৌন লালসার শিকারে সে আজ পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
পাঁচদিন ধরে চলছে জীবন্ত মানবী দুর্গাদের আরাধনা।এ পূজা মানবিকতার। এ পূজা বঞ্চিত -শোষিত - নির্যাতিত নারী থেকে দেবীত্বে উওরণের দুর্গোৎসব। স্বাভাবিকভাবেই " জীবন্ত পঞ্চ দুর্গা " সরকারী- বেসরকারী নানা পুরস্কার ও সম্মান অর্জন করে। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওইসব মেয়েদের জীবন ও জীবিকার সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেয়। আজ আরো একবার ষাটোর্ধ্ব রামলালবাবুরা প্রমাণ করে দেয়, অন্তরের ভক্তি,সদিচ্ছা,আন্তরিকতাই সবকিছু। তারা দুর্গাপূজাকে বর্তমান সমাজ, পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক করে তোলেন।
এই বিজয়ায় পাড়ার তথাকথিত নবীন প্রজন্মের অহমিকাবোধ,ইগো,আধুনিক আতিশয্যময় আচরণ, তাচ্ছিল্য, বিদ্রুপ,উপহাসের পতন ঘটে। নবরূপে নারী শক্তির বোধন ঘটে। ধর্ষিতা,অ্যাসিডদগ্ধা,পতিতা,নির্যাতিতা,নিপীড়িতা এহেন অভিশপ্ত জীবনের নিরঞ্জনের মধ্যে দিয়ে দুর্গা শক্তি রূপে ওরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়।সমস্ত অশুভ শক্তি বিসর্জিত হয়ে শুভ শক্তি বিজয়ী হয়।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register