Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্যানুশীলনে জয়িতা ভট্টাচার্য

maro news
গদ্যানুশীলনে জয়িতা ভট্টাচার্য

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঈদ

"এসো এই ঝরনার সামনে__ নতজানু হয়ে আমাদের দু হাত এক করা অঞ্জলিতে তোমার পানি আমার জল জীবনের জন্য"...(সুভাষ মুখোপাধ্যায়) পবিত্র রমজান মাস,বাসন্তী পুজো আর "গুড ফ্রাইডে" র তিথি পালনের এই ঐক্যের মাস সারা বছরে শুভেচ্ছা কামনা করে সকলের জন্য।১২০৪ খৃষ্টাব্দে এই বাংলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পদার্পণ ঘটলেও রোজা,নমাজ পড়া এসব কিন্তু অনেক আগে থেকেই ছিলো। ঈদ অর্থে উৎসব।রমজানের উপবাসের পর ফিরে আসার উৎসব হয়ত অনেকটাই বিজ্ঞান সম্মত।পৃথিবীর খাদ্য সামগ্রী সংরক্ষণ তথা প্রকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখে। মানব হিতায় চ...জাহের যুগে মিনিবাসে এই দুটি দিন কেবল খেলাধুলো ও প্রোমোদে কাটাতো বলে প্রচলিত। আল্লাহ্ রাববুল আলামিন এই দিনে তাঁর ভক্তদের প্রতি নিয়ামত ও আহসান তথা কৃপা দৃষ্টি দান করেন। খাদ্য পানীয়ের ওপর সংযম বা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে মুক্ত জীবন শুকরিয়া করেন।এই জাকির ও কৃপা হিন্দু ও খৃষ্টান এবং জৈন ধর্মে বর্তমান নিজস্ব রূপে। আসলে এই পৃথিবীতে সম্পৃতি শব্দ টার চেয়ে পুরোনো আমাদের এই একসঙ্গে থাকা। রাষ্ট্র যতই ভেদবুদ্ধি সৃষ্টি করুক সফল তা হয় না কখনও কারন জলের নাম পানি। আমাদের ধমনীতে লোহিত রক্ত আমাদের পেটে ভাত চাই। এর চেয়ে সত্য আর নেই।পৃথিবীর সব ধর্মই তাই মানবতার কথা বলে,ভালোবাসার কথা বলে।আনাস রাদী আল্লাহ্ আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাহ দুইটি দিনের নিদান দিলেন ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর (সূনান আবু দউদ ১১৩৪) এই দুই দিনে রমজানের কৃচ্ছসাধন শেষে আল্লাহ্ র শুকরিয়া, জিকির ও ক্ষমা প্রার্থনা শেষে শালীন আমোদ আহ্লাদের প্রচলন। "বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ "নামের বইতে ইবনে জারীর রাদি দ্বিতীয় হিজরিতে আল্লাহু আনহু র মতে, রাসূলুল্ল্হ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম ঈদ পালন করেন বলে জানা যায়। এই একসঙ্গে খাওয়া একে অপরকে আলিঙ্গন থেকে সেই "বেঁধে বেঁধে" থাকার মন্ত্র নিহিত মনে হয়। আমার গ্রামে এখনও পীরবাবার মেলা হয় যে কোনো ধর্মের নারী গাজীবাবার কাছে তাবিজ আনতে যায় তাগা বাঁধতে যায়। চম্পাহাটির দিকে থাকেন এক ধার্মিক মুসলমান যিনি স্বপ্ন দেখেন হিন্দু দেবী মনসার।পড়ে তাঁর ঘরের মাটি খুঁড়ে একটি মূর্তি পাওয়া যায়। সেই মনসা মন্দির এই মুসলিম পরিবারের তাঁরাই দেখাশোনা করেন। ঘুটিয়ারি সরিফ বা আজমির সরিফে অপামর মানুষ চলেছেন তাঁরা মানব ধর্মে দিক্ষীত। আমাদের বাজারে পাশাপাশি বাস করেন হাতে হাতে একে অপরের সুখ দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন,একসঙ্গে দুর্গাপুজো,ঈদ বা রক্তদান শিবির। ভারতের ইতিহাস সম্প্রতির চেতনার জয়গান গায়। আমরা দেখেছি আর্যদের অনুপ্রবেশ ,আকেজাণ্ডার,মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস তাঁরা এদের জয় করতে এসে থেকে গেছেন এই সুজলা সুফলা দেশে।স্বভাবতই এঁরা সপরিবার আসেননি।শুধু পুরুষরাই এসেছিলেন আজ ভারতের জনসংখ্যায় ছড়িয়ে আছে তারা বংশ পরম্পরায়।একথা তো বলাই যায় আমাদের কারো রক্তেই নেই তাই কোনো বিশেষ ধর্মের রক্ত। আমারা সকলেই কখনো হিন্দু জাত বা মুসলিম বা খৃষ্টান জাত সন্তান। তাই ভেদ সৃষ্টি র মূলেই রয়েছে গলদ। লক্ষ কোটি মানুষের এই দেশে কবির,লালন সাঁই, চৈতন্য দেব আমাদের অন্তর্গত চেতনার মধ্যে খেলা করে।তাঁদের জীবন বৃথা যায়নি। সাময়িক কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাইয়ের থেকে ভাইকে দূরে রাখতে পারে না। "শোনো কোরানের সুরাহ্ র সঙ্গে উপনিষদের মন্ত্র, সকালে প্রভাতফেরির সঙ্গে ভোরের আজান একাকার মিলিয়ে যাচ্ছে। "(সুভাষ মুখোপাধ্যায়) মাঝি-মাল্লা,ক্ষেত মজুর,শ্রমিক আর চাকুরিজীবী মানুষের জীবন যাপনের যে ঘাম রক্ত মিশে আছে তার আলাদা কোনো রং নেই।যে চাঁদ কোজাগরী পূর্ণিমার সেই চাঁদ রমজান মাসে সেই চাঁদ শুকনো পোড়া রুটি।মানুষের জীবনে খাদ্য বস্ত্র আর আশ্রয় এর চেয়ে বড় সত্য নেই। তাই আমি লিখি... মন্দির মসজিদ নয় নয় জাতপাত।পৃথিবীতে সত্য শুধু একমুঠো ভাত।(কবিতার বই সন্ত্রাস কে ভালোবেসে)। আমাদের এই ঐক্যের দেশে ধর্মীয় সম্পৃতির ওপর কুঠারাঘাত করতে আগ্রহী কিছু মুষ্টিমেয় ভেকধারী মানুষ যাদের পরাজয় নিশ্চিত। ধর্ম তাই পরিত্যাজ্য নয়।আজ নিজ নিজ ধর্ম কে চেনার দিন কারন প্রতিটি ধর্ম ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলে সাম্যের কথা বলে মানবাধিকারের কথা বলে। "আমাদের শিশুদের শব ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে! আমরাও তবে এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি? আমাদের পথ নেই আর আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।"(শঙ্খ ঘোষ)
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register