Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পে জয়শ্রী ঘোষ

maro news
গল্পে জয়শ্রী ঘোষ

কথোপকথন

বেকারত্ব

বেকারত্ব আজকালকার দিনে একটি সবথেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাই তো অনেকে বেকারত্বের জ্বালা ঘোচাতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। আজকে তারই একটা ছোট্ট গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরবো তুলে ধরবো একজন কষ্ট করে খেটে খাওয়া মানুষ ও একজন অহংকারে পরিপূর্ণ দাম্ভিক দুজন মানুষের কথোপকথন তাহলে চলুন শুরু করা যাক। আজ থেকে প্রায় দু বছর আগে *অংকুর* ও *আকাশ* নামে দুই বন্ধু ছিল তারা একসাথে কলেজে পড়াশোনা করতো কিন্তু ওই যে কথায় আছে না কলেজের গণ্ডি শেষ আর সেই ভাবে সবার সাথে দেখা হয় না। ঠিক তাদের সাথে এরকমটাই হয়েছে কলেজ শেষ তাই কারো সাথে আর দেখা করার অবকাশ নেই কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন আকাশ সে কলেজের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ করেই সে অঙ্গুর কে দেখতে পায়। *আকাশ:* আরে ওটা অংকুর না *আকাশ:* কিরে অংকুর *অংকুর:* ঘুরে তাকায় আরে আকাশ যে বল কেমন আছিস কতদিন পর দেখা তোর সাথে *আকাশ:* হ্যাঁ আছি, তুই কেমন আছিস বল আর এদিকে কোথায়? কলেজের কোনো কাজে নাকি ? *অংকুর:* কাজ কেন হবে? জানিসই তো কলেজে পাঠ চুকে গেছে দু বছর কোনো কাজে নয় আসলে *আকাশ:* ও বুঝতে পেরেছি থাক থাক আর বলতে হবে না মানে চায়ের দোকানে চা খেতে এসেছিস তাই তো *অংকুর:* আরে নারে, এটাই আমার চায়ের দোকান *আকাশ:* হঠাৎ করে অঙ্গুরের কথা শুনে হেসে দেয়। কি বলছিস ? *অংকুর:* ঠিকই বলছি। তুই হাসছিস কেন ? আর তুই তো জানিস আজকালকার দিনের চাকরির কি অবস্থা *আকাশ:* হ্যাঁ সেটা জানি বটে কিন্তু তাই বলে তুই শেষ পর্যন্ত একটা চায়ের দোকান দিলি তাও আবার এত ভালো পড়াশুনায় হয়ে এই কথাটা বলে আকাশ হাসতে থাকে। *অংকুর:* কেন তোর কি মনে হয় যে চায়ের দোকান যারা দেয় তারা কি মানুষ নয় *আকাশ:* আরে না না সেটা নয় আসলে এটাকেই হয়তো বলে ভাগ্য *অংকুর:* মানে বুঝলাম না *আকাশ:* না আসলে কলেজের মধ্যে তুই তো খুব ভালো ছিলিস পড়াশোনায় আর কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকারা তোকে নিয়ে বেশ ভালোই গর্ব করত কিন্তু তারা তো জানতো না তাদের এই গর্বের ছাত্র কোন একদিন চায়ের দোকান দেবে *অংকুর:* দেখ তুই অনেকক্ষণ ধরে আমারই চায়ের দোকান নিয়ে আমাকে ছোট বড় কথা শুনেছিস এটা কি ঠিক হ্যাঁ মানছি যে আমি চাকরি করছি না তার মানে তো এই নয় যে তুই আমাকে অপমান করবি *আকাশ:* আরে না না আমি তোকে অপমান কোথায় করলাম যাই হোক আমার আবার অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারলি তো *অংকুর:* বাহ অফিসে চাকরি করছিস বুঝি *আকাশ:* কলেজ শেষ করবার পরই একটা ব্যাংকের অফিসে কর্মরত রয়েছে আর জানিস তো মায়না ও অনেক বেশি আর হ্যাঁ আরেকটা কথা দেখ তুই তো চায়ের দোকান দিয়েছিস তো আমাদের অফিসে অনেক সময় অফিসের প্রত্যেকটি ঘরে জল দেওয়ার লোকও লাগে আমি তাহলে তোকে বলবো হ্যাঁ *অংকুর:* দেখ অনেকক্ষণ ধরে চুপ আছি বলে এটা ভাবিস না যে আমি কিন্তু কিছু বলতে পারি না নেহাত তুই আমার বন্ধু তাই এতক্ষন আমি চুপ করে ছিলাম কিন্তু তুই আমাকে অনবরত অপমান করে যাচ্ছিস কিসের জন্য বলতে পারিস তোর এই চাকরির জন্য তাহলে শোন। আমিও চাইলে না আজকে তোর মত এরকম সুট বুট পড়ে চাকরি করতে যেতে পারতাম কিন্তু ওই যে বলে না যে টাকা দিয়ে কোনদিনই চাকরি করতে চাইনি *আকাশ:* মানে কি বলতে চাইছিস টা কি তুই ভালোভাবে বল। *অংকুর:* কলেজের গণ্ডি পার হওয়ার পর আমিও কিছু কিছু ইন্টারভিউ দিয়েছি সব ইন্টারভিউতে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করেছে যে তুমি চাকরি টার জন্য এত টাকা দিতে পারবে কিনা বিশ্বাস কর হয়তো আমার মা বাবা কষ্ট করে আমার জন্য টাকাটা দিতেই পারতো। কিন্তু আমি ওইভাবে চাকরিটা করতে চাইনি কারণ আমি একজন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। তাই কখনোই চাইনি, বাবা-মার কষ্ট করা টাকা অন্য কাউকে দিয়ে চাকরিটা পাব কারণ ওই টাকার মধ্যে আছে আমার বাবার পরিশ্রম । তাই আমি আর ডিগ্রিতে বিশ্বাস করি না সেদিন থেকে আমার মনে হয়েছিল যে টাকাটাই আজকালকার দিনে বা আজকালকার দিনে চলার জন্য একমাত্র টাকাই দরকার তাই আমি টাকা রোজগার করবার জন্য এই পথটা বেছে নিয়েছি। আর তুই তোর কথা বলছিস তুই তো বড়লোক বাপের বড়লোক ছেলে তুই যে চাকরির বড়াই করছিস না সেটা কিন্তু তুই টাকা দিয়ে পেয়েছিস *আকাশ:* দেখ এটা ভালো হচ্ছে না কিন্তু। *অংকুর:* হ্যাঁ এতক্ষণ ধরে তুই আমায় বলে গেলি তাই আমি তোকে দুটো কথা বললাম আর কি যে তুই টাকা দিয়ে চাকরিটা কিনেছিস তাই আজকে তুই চাকরি করতে যাচ্ছিস। কিন্তু তুই একবার নিজের মনকে প্রশ্ন করত যে তুই তোর যোগ্যতায় চাকরিটা পেয়েছিস কিনা আজকে তোর বাবার টাকা আছে বলে তুই চাকরিটা পেয়ে গেলি। আর আমাদের মত মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষের চাকরি পায় না কেন বলতো কারন আমাদের মত ঘরে লক্ষ লক্ষ টাকা থাকে না আর লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে আমরা তাই আমি এই দোকানটা খুলেছি। হতে পারে এটা হয়তো খুবই ছোট একটা দোকান। কিন্তু এটা আমি নিজের যোগ্যতায় খুলেছি। আজকে আমি চা বানানোর পর দুটো মানুষ যখন খেয়ে বলে খুব সুন্দর হয়েছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি টাকাটা উপার্জন করি সৎ পথে করি। বুঝতে পেরেছিস তো? এটাই আমি বোঝাতে চেয়েছি তোকে। *আকাশ:* থাক থাক আমি তোর কোন জ্ঞান শুনতে চাই না ঠিক আছে *অংকুর:* আমি তোকে কোন আমি তোকে কোন জ্ঞান দিচ্ছি না আমি তোকে শুধুমাত্র বাস্তবটা বোঝালাম আর তোকে এটা বোঝাতে চাইলাম যে কাউকে ছোট করার অধিকার তোর নেই সম্মান করতে পারিস না সেটা আলাদা ব্যাপার কিন্তু কাউকে ছোট করিস না কারণ প্রত্যেকটা মানুষ নিজের পেশার সাথে যুক্ত। সে সৎ পথে করে সেটাই আসল কথা। আর কাজের কথা বলছিস কাজে কোন ছোট বড় হয় না। হ্যাঁ, তুই অফিসে চাকরি করে সেটা আলাদা আর আমার যে চায়ের দোকান সেটাও কখনো ছোট হতে পারে না প্রত্যেকটা মানুষ কষ্ট করে সারাদিন ঘাম ঝরিয়ে রোজগার করে । যাইহোক এসছিস যখন এক কাপ চা খেয়েই যা না হয় *আকাশ:* নারে আমার তোর দোকানে চা খাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই চলি এই বলে আকাশ ওখান থেকে চলে যায় এই ছোট্ট কথোপকথন এর মাধ্যমে আমি এটাই বোঝাতে চাইছি যে আজকালকার দিনে সত্যি বেকারত্ব বেড়ে গেছে। তাই বেকারত্বের জ্বালা ঘোচাতে যেসব সাধারন মানুষ যেসব পন্থা অবলম্বন করছেন কেউ চায়ের দোকান কেউ আবার কারো দোকানে কাজ করছে অনেকে এটাকে ছোট বলে মনে করে কিন্তু বলবো ভাবনাটা বদলান কারণ এই মানুষ সৎ পথে খেতে রোজগার করে আর কোন কাজ ছোট বড় নয় কারণ যারা কারণ বেকারত্ব যে কি একমাত্র বেকার ছেলে মেয়েরাই বোঝে, তাই তাদেরকে সম্মান করতে পারেন না করবেন না কিন্তু অসম্মানও করবেন না। বরং তাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে জোগাতে পারেন তবেই তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান কিন্তু তাদেরকে নিয়ে কোন চর্চা করবেন না।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register