Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৩৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৩৮)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৭০
আমার জন্ম ধনিয়াখালি (বহুল প্রচলিত নাম ধনেখালি। তাঁতের শাড়ির কথা উঠলেই যাকে এক ডাকে সারা পৃথিবী চেনে ) গ্রামে। বেড়ে ওঠাও ওই গ্রামেই। পুরোপুরি গাঁইয়া বলতে যা বোঝায় আমি ঠিক তাই। শুধু তাই নয় এই পরিচয় আমার কাছে খুবই গর্বের। অনেক পরে আমার বিচরণের রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে মফস্বল। যদিও আমার রক্ত দিয়ে বয়ে চলেছে গ্রামের জল হাওয়া মাটি গাছপালা নদী। এরাই আমার ধারক বাহক। তাই গ্রাম দেখার লোভ আমার এ জীবনে আর যাবে না। ছবিতেই হোক আর গল্পেই হোক ----- গ্রাম শুনলেই আমি সব কাজ ফেলে ডুবে যাই।
আমার অনেক বন্ধুই গ্রামে থাকে। কেউ কেউ আবার শহর কি মফস্বলে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই রেখে দিয়েছে। জীবিকার জন্যে হয়ত এটা করতে তারা বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সুযোগ পেলেই (একসঙ্গে দু' তিনদিনের ছুটি ) তারা তাদের মূল আস্তানায় ফিরে আসে। যেমন এই লকডাউনের সময়ে অনেকেই নিজের নিজের গ্রামে ফিরে গেছে।
সুজিত ঘোষ আমার খুব ভালো বন্ধু। পেশায় শিক্ষক। "তারুণ্য" নামে একটি অসাধারণ পত্রিকা করে। আদি বাড়ি পুইনান। আমার গ্রামের বাড়ির পথ দিয়েই যেতে হয়। চন্দননগরে তার একটি ফ্ল্যাট আছে। যদিও এখন সে পুইনানের বাড়িতেই আছে। দিন চারেক আগে একদিন রাতে ফোন করে বুঝতে পারলাম সুজিতদা মনে হয় গ্রামের বাড়িতেই আছে। আসলে ফোনের মধ্যে দিয়ে তার কন্ঠস্বর ছাড়া আর কোনো শব্দ পাচ্ছি না। যখন তার কথা থামছে এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য যেন আমাকে ঘিরে ধরছে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম আমার অনুমান সঠিক। ব্যাস আর যায় কোথায়। শুরু হলো আমার প্রশ্নের পর প্রশ্ন। সে এখন কি করছে। রাতে কখন ঘুমাতে যায়। খুব ভোর ভোর কি সে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। ভোরবেলা কি সে গ্রাম পরিক্রমায় বের হয়। তাছাড়া সারাদিন তার কিভাবে কাটে। সুজিতদা নিজের মতো করে উত্তর দেয়। আসলে সুজিতদা এই "আমি"-র কখনও মুখোমুখি হয় নি। মানুষ হিসেবে সত্যিই তার কোনো তুলনা হয় না। আমি জানি সে ভাবে নি কিন্তু তবুও আমার মনে হয় সুজিতদা হয়ত ভাবছে এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এসব জিজ্ঞাসারই বা কি মানে। তাছাড়া এসব জেনে আমার কীই বা হবে।
আমার দেশের বাড়ির বন্ধু সওকতকেও আমি মাঝে মাঝে এমন প্রশ্ন করি। এই কবিবন্ধুটি আগে হয়ত অনেক কিছু ভাবত কিন্তু এখন সে আমার এই স্বভাবের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছে। আসলে এখন আমি যেখানে থাকি সেখানে ভোর থেকেই কোলাহল। গভীর রাত ছাড়া চারপাশ চুপচাপ হয় না। অথচ কোলাহল আমার কোনোকালেই পছন্দ নয়। জীবিকার জন্যে সবকিছু মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু মনের ইচ্ছাটা যাবে কোথায় ? তাই আমার জিজ্ঞাসায় ওরা যখন উত্তর দেয় তখন ওদের সঙ্গে সঙ্গে আমিও আমার মনের রঙ তুলিতে একটা কল্পনার গ্রাম আঁকি। কাউকে কাউকে বলি, আমাকে একটু ঝিঁঝিঁর ডাক শোনাবি। ওরা আমাকে তাও শোনায়।
অনেকেই আমাকে পাগল ভাবে। তবে আমি যে মোটেও সুস্থ নই তা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না। আসলে গ্রামের কথা মনে পড়লে আমি মুহূর্তে অনেক কিছু ফিরে পাই। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার বাবা মা। চোখের সামনে দেখতে পাই তারা হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। খুব ইচ্ছা করে আবার গ্রামে ফিরে যাই। কিন্তু তাহলে যে ডানহাত বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ আমার যা জীবন জীবিকা গ্রামে তার কোনো সুযোগ নেই। তাই আমৃত্যু এইভাবেই বন্ধুদের জ্বালাতন করে যেতে হবে। এছাড়া আমার বাঁচার আর অন্য কোনো পথ নেই।
ক্রমশ...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register