Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে ব্রততী দত্ত

maro news
অণুগল্পে ব্রততী দত্ত

ঘুড়ি জীবনের একাল সেকাল

ভাদর মাসের আদুরে দুপুরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে অলসহীন চিন্তায় বুঁদ হয়ে ছিলাম। ভাবনার গতিকে রূদ্ধ করে দিল বাড়ির উঠোনে আসা কচিকাঁচাদের কলতানে। বারান্দা দিয়ে মুখ বাড়াতেই একজন বলে উঠল - ও কাকিমা ঘুড়িটা এনে দাও না। আমি ছাদের দরজা খুলে দিতেই সরল মুখগুলোয় যেন রামধনু দেখতে পেলাম। তিনতলার ছাদ থেকে নেমে আসার পর সবুজের দলকে বললাম - তোদের ঘুড়ি তো নিতে দিলাম, তার বদলে আমায় কিছু তোরা দিবি না? আমার এরকম অযাচিত আবদার শুনে ওরা তো কিংকর্তব্যবিমুঢ়। আমি হেসে ওদের বললাম - আমায় তোদের একটা ঘুড়ি ওড়াতে দিবি? আমার একথা শুনে যেন ওরা অবাক জলপান করল। আমিও বাড়ির বৌমার পদ থেকে ক্ষনকালের ইস্তফা দিয়ে মাঠে ইচ্ছেঘুড়ির সুতোয় টান মারলাম। ঘুড়িও আকাশে ডানা মেলে নিজের সাথে আটকে থাকা সম্পর্কের সুতোর বাঁধন একটু একটু আলগা করে দেয়। পাশেই উড়তে থাকা নীল-সাদা ঘুড়িটার সাথে ভাব জমিয়ে নেয় আমার পেস্তা রঙের ধার করা ঘুড়িটা।
লাটাইয়ের সুতো ছাড়তে ছাড়তে ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে যাই। দেখতে পাই সেই ছোটবেলার খেলার সাথি টুকুন, ছোটকা, গগন, টনি, পার্থ, বাবাই, বিশু সবাই একসাথে ঘুড়ি ওড়াচ্ছি আর কারোর ঘুড়ি ভোকাট্টা হলে সেটা ধরার আশায় এ পাড়া থেকে ও পাড়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছি।
আর এসব ভাবতে গিয়েই আমার ঘুড়িও "কাই পো ছে"। আবার মাঠের এই বালখিল্যর দল দে ছুট।
সেইসঙ্গে ভেঙে যায় আমার ভাতঘুমের দিবাস্বপ্ন।
আস্ত ছেলেবেলার এই পেটকাটি চাঁদিয়াল যে সুখানুভূতি দিত আজ এই কেঠো জীবনের সাথে জুড়ে থাকা মুঠোফোন সেই অনাবিল আনন্দ দিতে অক্ষম।
এখনকার পাবজি ফ্রিফায়ারে মত্ত শৈশব কৈশোরকাল আর আকাশে ওড়ে না, ওড়ে না ওদের সারল্য। বুঁদ হয়ে থাকে মিথ্যে জেতার লক্ষ্যে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register