Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ২১৭)

maro news
দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ২১৭)

পর্ব - ২১৭

শ‍্যামলীকে মাঝখানে নিয়ে গাড়িতে অনসূয়া আর অরিন্দম। তখন সূর্য উঠছে। শ‍্যামলীর ডান হাতটা নিবিড়ভাবে নিজের করতলে নিয়েছেন অরিন্দম। গুনগুন করে গাইছেন,
 এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়, এ কি বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু।
অনসূয়া বললেন, অরিন্দম, ওটা সন্ধ্যাবেলার গান।
অরিন্দম বললেন, হুঁ। পরমুহূর্তেই গাইতে লাগলেন
কোন রক্তিম পলাশের স্বপ্ন,
মোর অন্তরে ছড়ালে গো বন্ধু,
অনসূয়া আবার বললেন, অরিন্দম, সন্ধ্যাবেলার গান ভোরের বেলা কেন?
অরিন্দম হাসছেন। বলছেন, জানিস্ অনু, শ‍্যামলীর হাতটা ঠিক এমনি করে ধরে একদিন আমরা তিনজন হেঁটেছিলাম।
শ‍্যামলী অবাক হয়ে তাকাল অরিন্দম দাশগুপ্তের দিকে। অনু! এটা আজ নতুন শোনা গেল।
অনসূয়া বললেন, একটা ভোরের গান গাইলে কি হয়,
এদিন আজি কোন্ ঘরে গো খুলে দিল দ্বার?
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল কার?।
কাহার অভিষেকের তরে
সোনার ঘটে আলোক ভরে,
ঊষা কাহার আশিস বহি হল আঁধার পার?।
অরিন্দম বললেন, অনু তুই না বামুনের মেয়ে? ত্রিসন্ধ‍্যা জানিস্ না? গায়ত্রী জপ করিস্ না?
অনসূয়া লজ্জা পেয়ে হাসলেন। সত‍্যিই তো, ভোর‌ও তো ত্রিসন্ধ্যার একটা সন্ধ‍্যা।
শ‍্যামলী অবাক হয়ে অনসূয়া চ‍্যাটার্জি আর অরিন্দম দাশগুপ্তের  মুখের দিকে দেখছে।
অরিন্দম বললেন, খুব মিস করছি প্রবালকে। শ‍্যামলী, প্রবাল তো তোমাকে রেগুলার চিঠি দেয়, তাই না?
শ‍্যামলী বলল, খুব চমৎকার চিঠি লিখতে পারেন উনি। পড়লে মনে হবে ওঁর হাত ধরে নেদারল্যান্ডসের গলিতে গলিতে হেঁটে বেড়াচ্ছি।
 অনসূয়ার বাড়িতে তিনজন এসে পৌঁছলেন। পিছন পিছন এল অরিন্দমের খালি গাড়িটি।
শ‍্যামলী আবদার করে বলল, আমি চা করব। অনসূয়া বললেন, যা করবে চটপট করো। কলেজ যেতে হবে। দামি পেয়ালায় চামচ নাড়ার শব্দ উঠছে। অরিন্দম তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছেন সেই দিকে। শ‍্যামলী বলল, কি দেখছেন বলুন তো?
একটুও অপ্রস্তুত না হয়ে অরিন্দম বললেন, তোমাকে।
অনসূয়া বললেন, জানিস্, কাল বেশি রাতে ও আমাকে ফোন করে বলল, অনু জানিস্, সর্বনাশ হয়ে গেছে। এমন করে বলছিল যেন ওর হৃৎপিণ্ডটা বুক থেকে খুলে মাটিতে পড়ে গেছে।
 অরিন্দম বললেন, তা টেনশন হবে না? আমাকে রমানাথ বলল যে, ওর মা শ‍্যামলীকে গালমন্দ করেছেন বলে কাঁদতে কাঁদতে শ‍্যামলী কোথায় চলে গেছে। তখন অতরাতে ও ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
শ‍্যামলী বলল, মোটেও না, আমি কাঁদতে কাঁদতে মোটেও বেরিয়ে যাই নি।
তাকে ভেঙিয়ে অনসূয়া বললেন, সত‍্যিই তো তুমি কাঁদতে কাঁদতে বেরোতেই পার না। তুমি হো হো হা হা হি হি করতে করতে দৌড়ে যাচ্ছিলে। এবার ওঠো বিদ‍্যেধরী, টয়লেটে যাও, কলেজ যেতে হবে।
শ‍্যামলী টয়লেটে যেতে যেতে শুনতে পেল অরিন্দম বলছেন, অনু, তোকে আজ খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে।
অনসূয়া বললেন, চুপ! শ‍্যামলী শুনতে পাবে!

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register