শ্যামলী পিসিকে বলল, তোমার সাথে কোনো কথা হয় নি না?
সবিতা বললেন, কি কথা হবে? সে একজন পাকা মাথার সংসারী লোক। ব্যবসা করে খায়। আমিও ডবকা ছুঁড়ি নই। হিন্দু ঘরের বিধবা। সারাদিন দোকান চলছে, খাটছি খুটছি। খদ্দের সামলাতে সামলাতে একটু আধটু কথা। তারপর যে যার মতো থাকো। এই তো ভালো।
শ্যামলী বলল, তোমার কিছু ইচ্ছে করে না?
ইচ্ছে করবে মানে? তোর যখন দু বছর বয়স, তখন দাদা এনেছিল। আমি তখন অল্প কয় বছরের বিধবা। ততদিনে জীবনের কতকিছু নোংরা জিনিস দেখে ফেলেছি। তারপর দাদার বাড়িতে থিতু হলুম। কিন্তু তোর কথা শুনতে শুনতে মনের ভিতর ওলটপালট হয়ে গেল।
দাদার শরীর খারাপ হয়ে পড়তে তুই জানিস্ বাজার করার দায়িত্ব পড়ল আমার ঘাড়ে। শান্তনু অতনু তো কোনোদিনই কোনো কাজের নয়। বাজারে আসতুম, আর লোকটা আমায় নজর করত। আমি তোদের সংসারের জন্য পরিমাণ মতো মাছ কিনতাম। দু তিন রকম কোনো কোনো দিন। অতনুর আবার পাঁঠার মাংস ছাড়া মুখে রোচে না। আড়াইশো হোক, তিনশো হোক, নিতেই হবে তার জন্যে।
ধ্যুৎ, তুমি লোকটার কথা বলো। কি করে পরিচয় হল।
পরিচয় কি সোজা জিনিস রে! কার সাথে কার যে কেমন করে পরিচয় হয়ে যায়! শ্যামলী, তোর সাথে অনসূয়া উকিলের পরিচয় হয়েছিল কি করে?
কি করে আবার? উনি যে আমার মামলায় আমার উকিল ছিলেন।
সবিতা বললেন, একটা পয়সাও তো ফি নেন নি শুনি। তো এমন দয়ার শরীর উকিলকে কে ঠিক করে দিল রে?
শ্যামলী হেসে বললেন অরিন্দমবাবু ঠিক করে দিলেন।
সবিতা বললেন, তা শুনতে পাই তোর অরিন্দমবাবু খুব উঁচু দরের লোক।
সবিতা বললেন, তো এমন বড়সড় একটা লোকের সঙ্গে তোর বন্ধুত্ব কি করে হল রে?
শ্যামলী হাসল। কিছুতেই বলল না। মনে পড়ল প্রেমপত্রগুলো এখনো আলমারির ভিতরে রুমাল মুড়ে রাখা আছে। তাঁর চিঠি লেখার ভাষা ছিল অতি চমৎকার। শ্যামলীর কখনো কখনো ইচ্ছা করেছিল, উত্তর লেখে। কিন্তু, লেখে নি। চিঠি পেতে ইচ্ছে করত। দেবার কথা মনে এলে কোথা থেকে কতগুলো সংকোচ উড়ে এসে জুড়ে বসত।
সে পিসির কাছে জানতে চাইল, বাজার করতে করতে আলাপ হয়ে গেল পিসি?
সবিতা হাসলেন। বললেন, তোর মুখেই শুনেছি শ্রীমতী রাধিকা খুব গৃহকর্মনিপুণা মেয়ে ছিলেন। কোন্ ভোরের বেলা উঠে দুধ দুয়ে মাঠা তুলে ননী নিয়ে পাড়ি দিতেন বাজারে। সে যে ঘরের বৌ। ঘর চালানোর খরচা যোগাড় করতে হত তাকে।
নন্দ গোয়ালার ব্যাটা কাহ্ন তাকে নজর করত। রাধা কাহ্নকে পাত্তা দিতে চাইত না। নন্দলালা তাকে পথে ঘাটে বিরক্ত করত।
জানো পিসি, কাহ্ন রাধিকাকে যা যা করেছে, তা সব সাংঘাতিক ক্রিমিনাল অফেন্স। ভুল বুঝিয়ে নৌকো ডুবে যাবার মিথ্যে ভড়ং করে কাপড়চোপড় পর্যন্ত সর্বস্ব খুলিয়েছে।
সবিতা বললেন, তবু শেষ অবধি তাকেই ভালবেসে ধন্য হয়েছেন রাধিকাসুন্দরী।
শ্যামলী দুষ্টু হাসি হেসে বলল, তোমাকে এই লোকটা কি কি করল? কাহ্নের মতো কোনো কিছু?
সবিতা উদাস হয়ে গেল। বলল, রাধিকার গার্জেনরা ভাল ছিল না রে। বিয়ে দেবার আগে ভাল করে দেখাশুনা করে নি। আয়ান ঘোষ তো পুরুষই ছিল না। যে ঠিকমত পুরুষই নয়, তার সাথে বিয়েটা দেয় কি করে বাড়ির লোকজন?
জানিস্ শ্যামলী, কাহ্ন তো রাধাকে ভালবাসল, কুঞ্জে ডাকল, আদর টাদর সব করল। কিন্তু তাকে বৃন্দাবনে বেশিদিন ধরে রাখা গেল না রে। সে চলে গেল মথুরা।
0 Comments.