Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্প সিরিজে সুদীপ ঘোষাল - ৫

maro news
অণুগল্প সিরিজে সুদীপ ঘোষাল - ৫

লকডাউন ডায়েরী

১১. একটা চড় খেয়েই অমৃতা যে সত্যটা সবার সামনে  প্রকাশ করে দেবে, অভিজিৎ সেটা বুঝতে পারে নি।কয়েকদিন ধরে চর পাতাইহাটে নদীর কিনারায় তারা লুকিয়ে দেখা করত। করোনার ভয়ে এখন বাড়িতে বেরোতে দিচ্ছে না অমৃতাকে বাড়ির লোক। অমৃতার স্কুলও ছুটি। তবু সে লুকিয়ে দেখা করে অভিজিৎ এর সঙ্গে। অমৃতার বাবা বললেন একদিন, কোথায় গিয়েছিলে  তুমি। অমৃতা বলল, এক বান্ধবীর বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলাম।তার বাবা বললেন, আর যাওয়ার দরকার নেই। অমৃতা বলল, বেশ। অমৃতার বাবা খুব রাশভারি মানুষ। বারবার এককথা বলতে ভালবাসেন না।

কিন্তু অমৃতা এক সপ্তাহ পরে ধরা পড়ে গেল তার বাবার চর পাতাইহাটের বন্ধুর হাতে। তার বাবার বন্ধু মোবাইলে ফোন করে জানালেন, চর পাতাইহাটে নদীর ধারে তোর মেয়ে একটা ছেলের সাথে গল্প করছে। তাড়াতাড়ি আয়। অমৃতার বাবা মটোর সাইকেল নিয়ে এলেন। খুব রেগে গিয়ে মেয়ের কাছে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ না দিয়েই এক চড় মারলেন মেয়ের গালে। তিনি বললেন, লুকিয়ে প্রেম করা। এতবড় সাহস তোর। তারপর অভিজিতের দিকে তেড়ে যেতেই অমৃতা তার বাবাকে ধরে ফেলল।সে বলল,আমি সব সত্যিকথা তোমাকে বলছি। আশেপাশে লোকজন জমে গেছে অনেক। অমৃতা বাবার দিকে দুইহাতের তালুতে ধরা মাস্কগুলো দেখিয়ে বলল, এখানে গরীব লোকগুলো মাস্ক কিনতে পারছে না। আমি আর অভিজিৎদা একত্র হয়ে চাঁদা তুলে এই মাস্কগুলো কিনেছি, এদের বিতরণ করব বলে। তারপর অমৃতা অভিজিতের দিকে তাকিয়ে থাকল। অভিজিৎ তখন মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকার ইশারা করছে।অমৃতা চড় খেয়ে সবকথা ভয়ে বলে ফেলেছে। অমৃতার বাবা ও তার বন্ধু খুব লজ্জা পেলেন। মুখ নিচু করে বললেন অমৃতা ও অভিজিতকে,পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা...

১২. এক বৃদ্ধা তার স্বামীকে নিয়ে টোটো খুঁজছেন হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। তারপর তারা মাস্ক পরে রাস্তা পেরোলেন। একজন পুলিশের আই সি বললেন, আপনারা বাইরে কেন? বৃদ্ধা উত্তর দিলেন, আমরা দুদিন না খেয়ে আছি। আমি না খেয়ে থাকতে পারি কিন্তু আমার স্বামী পারে না। বৃদ্ধ বলেন, হাসপাতালে ভরতি হলে খাবারটা তো পাব। অফিসার বললেন, বাড়ি চলুন। আমি আপনাদের ছেলের মত। আমি দেব আপনাদের খাবার। বাড়িতে এসে তিনি দিয়ে গেলেন চাল, ডাল আর আলু। এক প্যাকেট সন্দেশও দিলেন তাদের। বৃদ্ধ বললেন, তোমার কল্যাণ হোক। বৃদ্ধা কোন কথা বলতে পারলেন না। তার চোখে তখন জল...

১৩.  আলো দেখলো পাশের বাড়িতে জমি জায়গা নিয়ে ঝগড়া চলছে দুই চাষীর। সে বলছে, তুই আমার আলে পা দিবি না। আর অন্য একজন, চাষী তার গরু উঠিয়ে আল ভেঙ্গে দেয়
আলো জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে বললো, বেঁচে থাকলে অনেক জমি হতে পারে। এখন ঝগড়া করার সময় নয়। তারা আলোর কথা শুনে ঝগড়া থামালো। জমি পরে থাকে।মানুষ চলে যায়।
একজন আলোকে মেসেঞ্জার বক্সে একটা ভিডিও পাঠিয়েছিল। আলোর কথা বলা হয়নি তার সঙ্গে। তাই সে রেগে তাকে ব্লক করে দিল।
 সব ঝগড়ার সূত্র সেই ভুল বোঝাবুঝি। সময়ের ঈশারা বোঝেন কজন?
যাইহোক মেসেঞ্জার, কয়েকদিনের জন্য আনইন্সটল করে দিলো আলো। এখন একটাই চিন্তা পৃথিবীর এই কঠিন রোগ। কোভিড নাইনটিন, ভাইরাস আ্যাটাকে সারা বিশ্ব রোগগ্রস্ত। এখন দূরে দূরে থাকার সময়। দূরে থাকলে বাঁচবে জীবন, একত্রে সমাবেশ করলে মরবে। ভাইরাস মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে যাচ্ছে শিকলের মত। এই শিকল ভাঙ্গার জন্য লকডাউন

চলবে...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register