Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্প সিরিজে সুদীপ ঘোষাল - ৩

maro news
অণুগল্প সিরিজে সুদীপ ঘোষাল - ৩

লকডাউন ডায়েরী

পাগলি

- মা খিদে পেয়েছে। খেতে দাও - চুপ করে বসে থাক পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে বিধবা মা ভাঙ্গা ঘরে পেটে গামছা বেঁধে পরে আছে।কারণ লকডাউন চলছে। খেটে খাওয়ার পথ বন্ধ। সামনে গঙ্গা নদী। তবু জলটা আছে। কিন্তু খাবার নেই এই প্রত্যন্ত জঙ্গলের গ্রামে। আবার মেয়েটি বলে, মা খেতে দাও। আজ চারদিন কিছু খাই নি। - শুধু খাই খাই। মরতে পারিস না অভাগির  দল। কোথায় খাবার পাব। আমাকে খা। ছেলেমেয়েরা কাঁদতে শুরু করল। তাদের মা চিৎকার করে উঠে গলা টিপে ধরল দুটো ছেলের। একে একে পাঁচজনকে মেরে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিল। এখন মা কাঁদে আর পাগলির মত বলে, আয় চাঁদ তোকে খাই,আয় তারা তোকে খাই।

সমাজসেবি

-করোনা রোগে মরে গেছে ফুটপাতের লোকটি। - কি করে জানলি করোনা রোগ। তুই ডাক্তার নাকি? - না তবে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল লোকটার। যারা দেখেছে তারা বলেছে। - তারা হাসপাতালে দিতে পারেনি রোগিকে। - কে দেবে। সবাই নিজের জীবন নিয়েই ব্যস্ত। - চল, পুলিশকে খবর  দি - একা পুলিশই সব করবে। আমরা নাগরিক। আমাদের একটা কর্তব্য থাকা উচিত।
নিয়াজুল আর ইজাজুর কথা বলছিল মরে যাওয়া লোকটিকে নিয়ে। তারা পাঁচজন বন্ধু মাস্ক পরে, রেনকোট পরে সর্বাঙ্গ ঢেকে কাছে এসে দেখল লোকটা হিন্দু। গলায় পৈতে আছে। তারা শবদেহ প্লাষ্টিকে ঢেকে একটা বাঁশের খাটিয়ায় তুলে নিয়ে গেল শ্মশানে।নিয়াজুল ততক্ষণে পুলিশ ডেকে এনেছে। পুলিশ আইনের দিকটা দেখল। সেখানে দাহ করে গঙ্গায় স্নান সেরে তারা ফিরে এল বাড়ি। নিয়াজুল বলল, বিপদের কোন জাত হয় না রে কাকা..

অবহেলায়

ছেলেটা মন মরা হয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করে চলেছে। আর ভাল লাগছে না। কবে লকডাউন উঠবে বাবা। কবে নতুন পৃথিবী দেখব। পরের দিন সকালে ছেলটা বলল, - বাবা দেখ তো কপালটা গরম লাগছে আজকে। - ও কিছু না - না বাবা যদি করোনা হয়? -- ওরকম মনে হয় সকলের। তারপর রাতে ছেলেটার ধুমজ্বর এল। বাবা বেগতিক দেখে ফোন করল হাসপাতালে। ছেলেটাকে নিয়ে যাওয়া পর আর দেখতে পায় নি ওরা। কারণ লকডাউনের আইন ভেঙ্গে করোনা রোগীর কাছে যাওয়া যাবে না।
বাবার মনে হলো, ছেলের ছবিটা কথা বলে উঠল, বাবা কবে নতুন পৃথিবী দেখব?

চলবে...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register