Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটগল্পে ইন্দ্রাণী সমাদ্দার

maro news
ছোটগল্পে ইন্দ্রাণী সমাদ্দার

ভয় নয় জয় করতে হবে

‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে ’- বনে বনে কিনা জানিনা! তবে মনের ভিতর মেঘের ঘনঘটা। অনেক দিন পর আজ বাড়ির বাইরে পা ফেলেছি। আগেই আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর ছিল - প্রবল ব্জ্রপাত সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা। সেই মত আকাশের মুখভার। আকাশ মুখ ভার না করলেও আজকাল মনের কোনে যখন তখন বজ্রপাত হয়। কখনো টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে আবার কখনো চলমান দূরভাষে অপর প্রান্তের কথা শুনে ভয়ে শিউরে ওঠে মন। তবে জানি করোনাকে ভয় নয় জয় করতে হবে।
সেইমত বেশ কয়েকদিন হয়েছে টিভি দেখা ছেড়ে দিয়েছি। ভয়ের চেয়ে স্বস্তি ভালো। লকডাউনে কোনো কিছুতেই ভালো না লাগার সঙ্গে নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলেছি। গড়িয়ায় অটো থেকে নেমে অটো ভাড়া দিয়ে হ্যান্ডসেনিটাইজারে হাত ভেজাই। ফোন বেজে ওঠে - ‘আমার দুঃখগুলো কাছিমের মত।’ ফোন রিসিভ করার পর অপরপান্তে দীর্ঘদিনের বন্ধুর গলা, ‘তোদের আবসনে দুজন করোনা পজিটিভ । তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আয়।’ তাড়াতাড়ি ব্যাঙ্কের কাজ শেষ করে বাড়ির পথে পা বাড়াই।
মাথায় চিন্তারা ভীড় করে। বাড়িতে ফোন করি। কানে আসে ‘ নমস্কার কোভিড ১৯ আনলক প্রক্রিয়া সারা দেশে শুরু হয়ে গেছে। এখন বাড়ির বাইরে তখনি বেরোবেন যখন খুব প্রয়োজন হবে। ফেসকভার আর মাস্ক পরার সময় লক্ষ্য রাখবেন নাক এবং মুখ যেন ঢাকা থাকে। সার্বজনিন জায়গায় কমপক্ষে দু গজের দূরত্ব রাখবেন .................... আমরা রোগের সঙ্গে লড়াই করবো রোগীর সঙ্গে নয়’। অপরপ্রান্তে মায়ের গলা পাই। মা জানান- ‘ আবাসনে দুজন কোভিড পজিটিভ।’ মাকে বাড়ি ফিরছি জানিয়ে ফোন রাখি।
'দিদি ফ্লাইওভারের তলায় নামবেন না?’ পরিচিত অটো চালকের কথায় খেয়াল হয় সত্যি, বাড়ি এসে গেছে। টাকা মিটিয়ে নেমে পড়ি। বাড়ি ফিরে শুনি আমদের আবসনের অন্য ব্লকের এক দম্পতি করোনা পজিটিভ ধরা পরেছে। সেই ব্লকটি সিল করা হয়েছে।
এই কয়েক মাসে ফিনাইল দিয়ে ঘর মুছতে মুছতে এমন অবস্থা হয়েছে যে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে চোখ মেলার আগে মনে হয় যেন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি। চোখ মেলে নিজেকে নিজের বাড়িও চেনা বিছানায় পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। এই সেদিন কিছুতেই ঘুম না আসায় জানলার পর্দা সরিয়ে জানলার ডানদিকে তাকাতে দেখি চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ভিজে বিডি স্কুলের পাঁচিলের উপর বসে আছে পেঁচা দম্পতি। না আছে মুখে মাস্ক না আছে ফেস গার্ড। বাঁদিকে তাকাতেই আমার হাত -পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। চাঁদের আলোয় দাঁত বার করে আমার দিকে এক গাল হাসি মুখে তাকিয়ে আছে পাঁচিলে আঁকা বাঘ। স্পষ্ট শুনলাম - ‘তালা বন্ধ করে রাখলে দেখ কেমন লাগে?।' আমাদের আবাসনে বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য দেওয়াল চিত্র আঁকা শুরু হয়েছিল। শুধু বাঘ আঁকা শেষ হয়েছিল। অতিমারি এসে পড়ায় কাজ শেষ হয়নি। আমার কেন জানি মনে হয়, বাঘটা যেন আমাকে মানে আমাদের দেখে হাসছে আর বলছে ' সর্ব শক্তিমান মানুষ একটা ভাইরাসের ভয়ে গৃহবন্দী। ’
দুপুর তিনটে নাগাদ ব্যালকনি থেকে দেখি আমাদের আবাসনের ‘মধুপতি’ ব্লগের খুব কাছ থেকে একটা চিল উড়ে যাচ্ছে। উড়তে উড়তে আমাকে অবাক করে সেই চিল 'মধুপতি' চারতলার রান্নাঘরের কার্নিশের দিকে মুখ করে এসে ডানা মেলে বসে। কাছেই চিন্তামণি পাখিরালয় বলে বহু পাখির এখানে আনাগোনা তবে চিলকে এতো কাছে এসে বসতে আগে দেখিনি। তবে আগে কত কিছুই দেখেনি বা হয়নি। কখনো যা হয়নি এই কয়েক মাসে হল। মানুষ তার দম্ভের মুখোশ খুলে বেরিয়ে না পরলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেবে।মৃত্যু মিছিল বাড়বে।
সংক্ষিপ্ত পরিচয় - আমি ইন্দ্রাণী সমাদ্দার । লিখতে ভালোবাসি। বই পড়তে ভালোবাসি। একমাত্র নেশা ভ্রমণ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register