Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় আকিব শিকদার

maro news
কবিতায় আকিব শিকদার

১। ভিনদেশে বিপর্যস্ত

মা আমাকে তার মাতৃসুলভ আচরণে স্নেহের হাতে তুলে খাইয়ে দিতে চাইতো, আমি দেইনি সম্মতি কখনো তার বুড়ো আঙুলের নখটা কেমন মড়া ঝিনুকের ফ্যাকাসে খোলসের মতো ছিল বলে। শৈশবে স্কুলে পৌঁছবার রাজপথে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম শিয়ালের থেতলানো দেহ টানা তিনরাত ঘুমোতে পারিনি দুঃস্বপ্ন দেখার ভয়ে, পারিনি করতে আহার স্বাভাবিক। চোখের সামনে শুধু উঠতো ভেসে বিচ্ছিন্ন মস্তক একটা মরা শিয়াল যার উসকোখুসকো চামড়ায় জমে আছে রক্তের স্তূপ আর তকতকে নীল মাছি।
খুব বেশি খুতখুতে স্বভাব ছিল আমার। বাবা একবার আমার গামছা দিয়ে মুছে ছিলেন তার শস্যক্ষেত থেকে ফিরে আসা ঘর্মাক্ত পিঠ, সেই অপরাধে তার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে দিয়েছিলাম মূর্খের অপবাদ দিয়ে। এক বিছানায় ঘুমোতে গিয়ে আমার যে ছোটভাইটা গায়ের উপর তুলে দিতো পা আমি এক চড়ে তার কান থেকে রক্ত ঝরিয়ে বুঝিয়েছিলাম ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে যাওয়ার খেসারত।
এখন আমার ঘুম আসে না, ঘুম আসে না রাতে ছাড়পোকা আর মশাদের উৎপাতে। উৎকট গন্ধে বন্ধ দম, শৌচাগারের পাশে বিছানায় নেই গা ঢাকা দেবার মতো টুকরো কাপড়। শীতে জুবুথুবু হয়ে যখন কুকড়ে যাই তোকে বড়ো মনে পড়ে, তোকে বড়ো মনে পড়ে ভাইরে। ঘুমঘোরে একটি পা গায়ের উপরে তুলে দিবি না আমায় একটু আরাম উত্তাপ? বল, তুই করবি না ক্ষমা আমায়...?
ওরা যখন আমাকে নিয়ে এসেছিল ভিনদেশে বলেছিল কাজ দেবে পাঁচতারা হোটেলে, নিদেনপক্ষে মুদির দোকান তো জুটবেই কপালে। সূর্য ওঠার আগে শাবল ক্ষন্তা আঁকশি হাতে লেগে যাই কাজে, নগরের নর্দমা শোধন এখন আমার কাজ। যে হাতে ধরিনি গরুর দড়ি গোবর চনার গন্ধ লাগবে বলে সে হাত ধরে পঁচা ইদুরের লেজ, পলিথিনে মোড়া মাছি ভনভন করা মাছের পুরনো আঁশ। পরিত্যক্ত আবর্জনা তুলে নিই পিঠের ঝুলিতে। বড়ো অসহায়, বড়ো অসহায় লাগে মা, মনে হয় মরে যাই; না গেলে কাজে নিতান্ত বুভূক্ষু কাটে দিন, পানিটাও এইদেশে কিনে খেতে হয়, টাকা ছাড়া জোটে না কান চুলকানোর কাঠিটি পর্যন্ত
একবার, শুধু একবার, মা তোমার গোবর গুলে গৈঠা বানানো হাতে একমুঠো ভাত খাইয়ে দিয়ে যাও। বাবা, ও বাবা, আমার গায়ের সবচেয়ে সুন্দর যে জামাটি তাতে মোছো তোমার ভাত খেয়ে না ধোয়া হাত। তোমার সফেদ দাড়ির ভাজে তরকারির যে ঝোল লেগে থাকে সেই ময়লাটি জিহ্বায় চেটে তুলে নিতে বড়ো ইচ্ছা জাগে আমার।

২। নিনিতা এবং ফেব্রুয়ারির একুশ

আমার মেয়ে নিনিতা, কতোই বা তার বয়স হবে কান্ড দেখে তাক লেগে যাই যে কেউ অবাক চেয়ে রবে।
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ- সেই যে সকাল বেলাতে প্রভাতফেরীর গানের সুরে চায় গলাটা মেলাতে।
ড্রেসিংটেবিল সামনে রেখে- শহিদমিনার মনে করে নতমস্তক দাঁড়িয়ে থাকে ফুল ছুঁড়ে দেয় শ্রদ্ধাভরে।
বুকভরা তার ভাষাপ্রীতি, সেই কথাটাই জানাতে বর্ণমালার আদল একে চায় দেয়ালে টানাতে।
তিনটে বছর হয়নি বয়স, কতোই বা সে বোদ্ধা ভাষাশহিদের স্মৃতির প্রতি এতো যে তার শ্রদ্ধা...!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register