Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

|| মানচিত্র আর কাঁটাতার, হৃদয় মাঝে একাকার || 26য় অনিন্দিতা ভট্টাচার্য

maro news
|| মানচিত্র আর কাঁটাতার, হৃদয় মাঝে একাকার || 26য় অনিন্দিতা ভট্টাচার্য
(১) সুপ্রিয় বাবু আজ তার বাড়িতে কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে এক পার্টি থ্রো করেছেন।  তিনি শহরের প্রথম শ্রেণীর নামকরা একজন ডাক্তার। ফলতো আয়োজন বেশ সুসজ্জিত ও আরাম্ভর সমৃদ্ধ। নানারকম পদ থেকে শুরু করে শ্যাম্পেন, বিয়ার ও আরও কিছু দামি পানিও তে ভোরে উঠেছে খাবার টেবিল। নিমন্ত্রিতের তালিকায় বেশ নামকরা ব্যক্তি থেকে শুরু করে কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীও আছেন। সকলে আসার পর সুপ্রিয় বাবু বলা শুরু করেন, "আজকের এই পার্টি থ্রো করার কারণ আমাদের কারুর ই অজানা নয়। বছরের এই একটা দিন বলা ভালো দেশের এই স্বাধীনতার দিনে এই টুকু সেলিব্রেশন তো হতেই পারে। কি বলেন সবাই?" সুপ্রিয় বাবুর কথায় সকলে সম্মতি দিয়ে বলে উঠলো একদম, একদম। তিনি এবার টেবিল থেকে একটা মদের গ্লাস তুলে নিয়ে বললেন, "থ্রী চিয়ার্স ফর স্বাধীনতা। চিয়ার্স অল অফ ইউ।"
(২) মনীষ এবং তার দু-একজন বন্ধু ও ফ্ল্যাটের দাদা-দিদিরা সবাই আজ সকাল থেকে খুব ব্যস্ত আয়োজনে। ছোট ছোট কাগজের তেরঙা পতাকায় সেজে উঠেছে ছাদ। মাঝখানে একটা লম্বা বাঁশ। সেটিকেও তেরঙা কাগজে মোড়া হয়েছে। আর সেই বাঁশের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে একটা কাপড়ের তেরঙা পতাকা। যা এখনো আকাশের মাঝে উজ্জ্বল হওয়ার অপেক্ষায়। এই সকল আয়োজনেই ব্যস্ত সকলে। একটা ৪তোলার ফ্ল্যাট এর ৮টি পরিবার সকলে মিলে এবারের স্বাধীনতা উদযাপন করায় ব্যস্ত। লকডাউন এ লোক সমাগম যে বারণ। তাই এবারের স্বাধীনতা শুধুমাত্রই ৮টি পরিবারের সীমাবদ্ধ।
(৩) রুবিনার সারাদিনের ঘরের সব কাজ শেষ করে এই দুপুরবেলা তার একটু জিরানোর সময় হয়। তাই সান্যাল বাড়ির শেষ বাসন টুকু তাড়াতাড়ি মেজে এসে বারান্দায় খোলা হাওয়ায় একটু বসলো। সে এসে বসার সঙ্গে সঙ্গে পাশে থাকা খাঁচার টিয়া টা বলে উঠলো "টিইই, খাওয়া হলো?" তার কথার উত্তরে রুবিনা বললো "হ্যাঁ হলো। তুই খেয়েছিস?" এই বাড়িতে তার একমাত্র সঙ্গী হলো এই টিয়া। সেই কোন ছোট বেলায় বাবা মাকে হারিয়েছিল। তারপর থেকে খিদের টানে এই বাড়িতে ভৃত্যের কাজ করে। কাজের বিনিময়ে সান্যাল পরিবার তাকে থাকতে, খেতে ও যে কোনো অনুষ্ঠান এ যৎসামান্য কিছু টাকা হাতে দেয়। রুবিনার ছোট থেকেই পড়াশুনা করে অনেক বড়ো চাকরি করার স্বপ্ন ছিল। সান্যাল বাড়ির ছোট ছেলে চাকরি সূত্রে বিদেশে থাকে। আজ এসেছে। বলা বাহুল্য প্রত্যেকবার ই আসে এই দিনে। স্বাধীনতা দিবস বলে কথা। তবে সান্যাল বাড়ির ছোট ছেলে রুবিনা কে বেশ স্নেহ করে। কিছু কিছু বই ও কিনে দিয়েছে। যখনই আসে তার জন্য ইংরাজি বই নিয়ে আসে। তাকে কিছু কিছু ইংরাজি ও শেখায়।কিন্তু তাতে কি আর বড়ো চাকরি করার স্বপ্ন পূরণ হয়। হয়তো বা হবেও না কোনো দিন। "টিইই, কি এতো ভাবিস?" টিয়ার স্বরে সম্বিৎ ফেরে রুবিনার। "কিছু না রে।" উত্তর দেয় রুবিনা। তখনই আকাশ দিয়ে উড়ে যায় কিছু পায়রার ঝাঁক। রুবিনা ও টিয়ার দু-জোড়া চোখ এক স্বাধীনতার খোঁজে চেয়ে থাকে আকাশের দিকে। সত্যি এই স্বাধীন ভারতে তাদেরও কোনো দিন মিলবে স্বাধীনতা?
১৯৪৭ সালের সেই স্বাধীনতা আজ শুধুই চার দেওয়ালে সীমাবদ্ধ। কোথাও জৌলুশ-আনন্দ তো কোথাও বিমূঢ়তা। সেদিন এর দেশ স্বাধীন হওয়ার তাগিদে হিন্দু-মুসলিম একত্রে নেমেছিল যুদ্ধে। আজ সবাই বড়ো স্বার্থপর। সবাই খুব ব্যস্ত। মুক্ত ভারত তৈরিতে যেসব শহীদ দের প্রাণ কেড়েছিল, তা আজ নিছকই এক ছুটির দিন। জোর বেশি হলে পাড়ার মোড়ে জনা কয়েকমিলে পতাকা উত্তোলন আর সারাদিন মাইকে "কদম কদম বাড়ায়ে যা" বা "বন্দে মাতরম", আর রাতে তো আছেই গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন ও মাছ মংস সহযোগে মদের ফোয়ারা। সত্যি কি এই স্বাধীনতাই আমরা চেয়েছিলাম!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register