Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটগল্পে সুশোভন কাঞ্জিলাল

maro news
ছোটগল্পে সুশোভন কাঞ্জিলাল

ফ্রেন্ডশিপ ডে

আলমারিটা বিয়েতেই পাওয়া। বিয়ে তো না আত্মাহুতি। বাড়ির চাপে করতেই হল। আলমারিটা মঞ্জুই ব্যবহার করে। কিন্তু বৌভাতের পরের দিন যখন আমার মা মঞ্জুকে বলল যে গয়নাগুলো মায়ের কাছে সাবধানে রেখে দিতে ও খুব অমায়িক ভাবেই বুঝিয়ে দিয়ে ছিল যে ওগুলো ও সাবধানে নিজের আলমারির লকারে রেখে দেবে। এক তো অনিচ্ছাকৃত ঘাড়ের বোঝা তার ওপর আবার এমন আস্পর্ধা। তাই আমিও আমার অধিকার ফলাতে আলমারির লকারের চাবি নিজের কাছে রাখি পরের দিন থেকে। মঞ্জু যদিও আপত্তি করে না। পৃথিবীর আর কিছুর না হলেও লকারটার একচ্ছত্র অধিপতি আমি। তাই আমার একান্ত গোপনীয় জিনিষ গুলোও ওর মধ্যেই রাখি। যেমন কিছু ওফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। দামি মদ আর ঘুষের কিছু টাকা। না শুধু বর্তমান না অতিতের বেশ কিছু গুপ্ত সরঞ্জামও আছে ওই লকারে। শরীর ভোগ করলেই যে মনের নাগাল পাওয়া যায় না তা এই এক বছরে ভালোই বুঝেছি। মঞ্জু আমায় ভালবাসে না অভিনয় করে তা বোঝার চেস্টাও করিনি। মেয়েদের প্রতি সব ভাললাগা জয়িতা তো নিজের হাতে আমায় ওর বিয়ের কার্ড দিয়ে শেষ করে দিয়ে ছিল। বিয়ের পর এই এক বছর চুরান্ত নেশা করা অবস্থায় মঞ্জু যখন যখন সবার আড়ালে আমার সেবা করেছে আর আমার মাতলামি বাড়ির অন্য কাউকে বুঝতে দেয়নি, তখন তখনি হয়ত ওকে জয়িতা ভেবে আপন করে নিয়েছি। পরের দিন সকালে যদিও নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হত। অনুতাপ বা অনুশোচনা না বরঞ্চ ঘেন্নাই হত। আমি আজ সকালে এক সপ্তাহ পর ওফিসের ট্যুর সেরে বাড়ি ফিরে শুনি বাবা হসপিটালে ভর্তি। যে জায়গায় গেছিলাম সেখানে আমার মোবইল নেটওয়ার্ক খুব ক্ষীণ ছিল আর নিজেও ইচ্ছে করেই চাইনি এই কদিন যোগাযোগ রাখতে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে। মায়ের মুখে শুনলাম বাবা মাথা ঘুরে তিন তলা ছাঁত থেকে নিচে পরে গেছিল। আমার দৃঢ়বিশ্বাস হয়ত বাবা আমার ক্রমশ অধঃপতন দেখে অভিমান করে আত্মহত্যা করতে গেছিল। কিন্ত বাবার মরা হল না. মঞ্জু নাকি একা সব সামলেছে। সেই রাতে অ্যাম্বুলেন্স করে বাবাকে হসপিটাল নিয়ে গেছে. মাকে সামলেছে। এমনকি পুলিশ থানায় গিয়ে কেসও রফা করেছে। সবচেয়ে বড় কথা নিজের হাতের আর গলার গয়না বেঁচে হসপিটালের বেশিরভাগ বিলও শোধ করে দিয়েছে। আজ সাতই আগস্ট। বাবাকে কাল ছেড়ে দেবে। বাড়ি ফিরেই সব শুনে হসপিটালে ছুটে ছিলাম। মনটা খুব ভারি লাগছে। বাড়ি এসে সোজা নিজের ঘরে ঢুকে গেলাম। একটু কাঁদতে পারলে ভালো লাগত। কয়েক ফোঁটা বেরোল হয়ত। মঞ্জু গরম চা নিয়ে এসেছে। মাথা নত সবসময়ের মতন। চোখ ভরে মেয়েটাকে দেখালাম। হ্যা, এই প্রথমবার। পা জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদব? না ওর অপমান হবে! চলে যাচ্ছিল আমি ডাকলাম। ও এলো। আমি আমার পার্স বের করলাম। ভেতর থেকে একটা ছোট্ট চাবি বের করে ওর হাতে দিলাম। ওর জিজ্ঞাসা ভরা চাহনিটা দেখে বল্লাম লকারটা খোল। ও খুলল। আমি পেছন পেছন উঠে গিয়ে লকারটা হাতড়ে একটা ছয় ইঞ্চির দড়ি বের করলাম। বললাম চাবিটা তোমার কাছেই রাখো। মঞ্জু আলমারি বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াতে আমি ওর হাতটা টেনে ধরে বল্লাম "মঞ্জু তুমি আমার বন্ধু হবে? ভালবাসি বলব না কিন্তু যদি প্রথম থেকে সব শুরু করতে চাই ?" হালকা ঘাড় নাড়ল, মঞ্জুর দুই চোখ বেয়ে বাঁধ ভাঙা জল পড়ছে নিঃশব্দে। আমারও পরত যদি না মিথ্যা পুরুষ ঈগোর গরমে বাস্প হয়ে না যেত। মঞ্জুর হাতে জয়িতার দাওয়া সেই প্রথম ফ্রেন্ডশীপ ব্যান্ডটা পরিয়ে দিলাম। আজ ফ্রেন্ডশীপ ডে তে নতুন আশার আলো দেখলাম মঞ্জুর চোখে আর আমার বুকে। ওর হাতটা ধরে বললাম হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে!!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register