Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় আকিব শিকদার

maro news
কবিতায় আকিব শিকদার

১। রঞ্জু, একটা হাতিয়ার...

মিছিলটা হয়েছিলো প্রায় তিনশো গজ লম্বা। টানা পাঁচ দিন খেটেখোটে লোক জড় করেছিলে। বিপক্ষ দলের সামনে ইজ্জত রাখা চাই। গলিটা দখলে নিয়ে সাজালে প্যান্ডেল। ঝাঝালো ভাষণে জনপদ কাঁপিয়ে সার্থক জনসভা। নেতা তোমাকে কাছে ডেকে পরিপাটি চুলগুলো আঙুলে উলোঝুলো করে দিয়ে বললো- “বেটা বাঘের বাচ্চা, তোর মতো কেজো ছেলে আগে দেখিনি, একেবারে বিপ্লবী চে গুয়েভারা”। তুমি বাহবা পেয়ে গলে গেলে রঞ্জু। বুঝলে না, ছোটদের বগলবন্দি রাখতে বড়রা এমন প্রশংসার ফাঁদ প্রায়ই পাতেন।
পার্টি অফিসে প্রতিদিন কতো কাজ, কতো পরিকল্পনা। নেতারা তোমায় পিতার মতোই স্নেহ করে। গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালাময়ী আলোচনায় রক্ত গরম। বাঁধা এলে অস্ত্র নেবে, প্রয়োজনে প্রাণ দেবে। অফিসের গোপন ঘরে নেতারা গলা ভেজাতে ভেজাতে তোমাদের হাতে বুতল দিয়ে বলে- “নে বাবারা, খা... শুধু খেয়াল রাখবি যেন হুঁশ ঠিক থাকে”। ভেবে দেখেছোকি রঞ্জু, তাদের ছেলেরা এসব নোংরা জল ছোবার কথা কল্পনাও করতে পাড়ে না। মায়েরা পড়ার টেবিলে গরম দুধে গ্লাস ভরে রাখে।
কালো কাঁচ আটা পাজারু গাড়ি থামলো রাস্তাতে। জানালার কাঁচ খুলে নেতা হাত বাড়িয়ে দিলেন হাজার টাকার দুটো নোট। বললেন- “রঞ্জু... ঝাপিয়ে পর বাবা, মান সম্মানের ব্যাপার”। তুমি ঝাপিয়ে পরলে পেট্রোল-বোমা আর ককটেল হাতে। দুদিন পর তোমার ঠিকানা হলো সরকারি হাসপাতালের নোংরা বিছানা। হাত দুটো উড়ে গেছে, দু’পায়ের হাটুঅব্দি ব্যান্ডেজ।
একবারও ভাবলে না, তিনি তোমার কেমন বাবা! তার সম্পত্তির ভাগ পাবে? তার কালো কাঁচের পাজারুটা তোমাকে দেবে? দেবে মখমল বিছানো বেডরুমে ঘুমানোর অনুমতি? তার সম্মান রাখবে তুমি! তার ছেলে বিদেশে পড়ে, নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে; সে তো ঝাঁপিয়ে পড়ে না!
তোমার হোশ কবে হবে রঞ্জু! তুমি ছিলে তাদের স্বার্থের হাতিয়ার, কাটা তোলার কাটা। তোমার মা হাসপাতালে গরাগরি দিয়ে কাদে, বাপ কাদে বাড়ান্দায়। সেই নেতারা, তোমার পাতানো বাবারা, একবারও তো দেখতে এলো না! বলি রঞ্জু, তোমাদের হুঁশ কবে হবে!

২। অনন্য উপহার

মেয়েটা হাতের একটা চুড়ি খুলে বললো- "এই নাও, রাখো। যেদিন তোমার ঘরে বউ হয়ে যাবো, বাসর রাতে পরিয়ে দিও"। ছেলেটা একটা চাবির রিং মেয়েটাকে দিয়ে বললো- "যত্নে রেখো। আমাদের সংসারের সব চাবি এটাতে গেঁথে আঁচলে ঝুলাবে"।
একদিন ছেলেটার আবদার- "তোমার একটা ওড়না আমাকে দেবে? মধ্যরাতে বালিশে জড়াবো, আর তোমার বুকে নাক গুঁজে রেখেছি ভেবে চুমো খাবো"। আরেকদিন মেয়েটা নাছড়বান্দা- "হলুদ পাঞ্জাবিটা তো আর পরো না। আমাকে না হয় দিয়ে দাও, বুকের উপর রেখে ঘুমাবো"।
তাদের পাশাপাশি দাড়িয়ে তোলা অন্তরঙ্গ ছবির একটি ছেলেটা তার মানিব্যাগে রেখে দিলো। ভাবটা এমন, যেন উপার্জিত সকল টাকা বউয়ের কাছেই জমা রাখছে। এদিকে মেয়েটা এমনই অসংখ্য ছবি মোঠোফোনে গোপন ফোল্ডারে সেভ করে নাম রাখলো "সুখি সংসার"।
কালের আবর্তে কি হলো কে জানে (হয়তো পরিজনেরা মানবে না, নয় তো অন্য কিছু) মেয়েটা একটা আংটি রেপিং পেপারে মুড়িয়ে ছেলেটার হাতে দিয়ে বললো- "যে তোমার বউ হবে, তাকে দিও। বলো আমি দিয়েছি। আর আমাকে কোনদিন ভুলে যেও না"। ছেলেটা সে আংটির বক্স হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মারলো নর্দমায়। তারপর দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরে বসে রইলো কতক্ষণ। দুজনেরই চোখ বেয়ে নামলো নীরব কান্না।
তারপর? তারপর যা হবার তাই হলো। প্রকৃত ভালোবাসা কোনদিন মরে যায় না। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলো অচেনা জনের সাথে। প্রেমিকের দেওয়া চাবির রিংটাতেই সব চাবি আঁচলে বেধে শুরু করলো সংসার। আর ছেলেটা অন্য মেয়েকে বিয়ে করে হাতে পরিয়ে দিলো প্রেমিকার চুড়িটা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register