Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

হিরোশিমা দিবসের রবীন্দ্রনাথ - লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

maro news
হিরোশিমা দিবসের রবীন্দ্রনাথ - লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী
ভগবান যে অত‍্যাচারের কারবারীদের ভালবাসেন না, এ নিয়ে একটা প্রশ্ন তোলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাঁর পরিশেষ কাব‍্যগ্রন্থের প্রশ্ন কবিতায়। এরোপ্লেনে করে যে ভয়ঙ্কর বোমা নিরীহ নির্লিপ্ত সাধারণ মানুষের উপর ফেলা হতে পারে, এই ধারণা তাঁর ছিল। সেঁজুতি কাব‍্যগ্রন্থের পক্ষীমানব কবিতায় এই উদ্বেগে প্রবীণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভুগেছেন।  প্রান্তিক লিখেছেন সহসা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অসুস্থতা থেকে সেরে উঠে। ওখানে দানব পক্ষী নামে কথাটা থেকে বোমাবাহী বি ৫২ বিমান আর লিটলবয় বোমা আর হিরোশিমার ধ্বংস আমার মনে উঁকি দেয়। জালিয়ান‌ওয়ালাবাগের ব্রিটিশ নির্মমতা যিনি চুপ করে মেনে নেন নি, তিনি কাকে ভয় পাবেন, আর কেন‌ই বা ভয় পাবেন। তিনি তো বেশ ভালরকম ভাবে বুঝে গিয়েছেন মন্দিরের মূর্তি কিছু করে না, করতে পারে না। ভজন পূজন সাধন আরাধনার অসারতা তাঁর কাছে অনাবৃত হয়ে গেছে। পূজার ঘরে ফুলের অর্ঘ্য নিয়ে গিয়ে শান্তি স্বর্গ খোঁজার আত্মপ্রতারণাকে চিনে নিয়েছেন তিনি। সংগ্রামের মহাশঙ্খ ধূলায় পড়ে আছে, আর সেই পাঞ্চজন‍্য কোনো সর্বশক্তিমান তুলে নেবেন না। তা উচ্চে তুলে ধরে লড়াইয়ের আহ্বান রাখতে হবে মর্ত‍্য মানুষকেই।
তথাকথিত ধর্মের চেহারাটা পুরোপুরি অনাবৃত হয়ে গিয়েছে যক্ষপুরীতে। সেখানে অস্ত্রশালা, মন্দির আর মদিরাগৃহের সহাবস্থান। এই সহাবস্থানটি লক্ষ‍্য করে এর ভিতরকথাকে অনুবাদ করতে পারা বড় সহজ নয়। অত‍্যাচারের চাবুকের বুনোট আর ধর্মধ্বজীদের জপমালা যে এক অভিন্ন উপাদান সুতোয় তৈরি, সে কথাটা খেয়াল করিয়ে দেন তিনি। যে মানুষ বলেছেন, ভগবানের উপর বরাত দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না, মহাকালের রথের রশি টানবে অতি সাধারণ মানুষ, তাঁকে তো আজ ব‍্যর্থ নমস্কার ছুঁড়ে দিয়ে ফিরিয়ে দিতে পারব না। যুদ্ধ হতে গেলে কি কি হয় তিনি তো স্মরণ করান, আর মেয়েদের উপর জঘন্যতম অত‍্যাচার নামিয়ে আনা, তার সম্ভ্রম লুণ্ঠিত করা যুদ্ধবাজ শক্তির বৈশিষ্ট্য। যারা তা করেছে, করছে, তাদেরকে কবি বলবেন দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে। বলবেন ক্ষমা চাও।   যুদ্ধবাজ শক্তির আস্ফালনকে নাগিনীর বিষাক্ত নিঃশ্বাসের মতো করে ভেবেছেন। ঘরে ঘরে দানবের সঙ্গে সংগ্রামের প্রস্তুতি চলুক, চাইছেন তিনি। যুদ্ধবাজ শক্তি নিরীহ মানুষের ধ্বংস কামনায় মন্দিরে পূজা চড়ায়। তাদের ওই হিংস্র চেহারাখানা চিনে নিতে আর চেনাতে তাঁর ক্লান্তি নেই। তিনি রবীন্দ্রনাথ। হিরোশিমা দিবসে তিনি আমাকে সমস্ত অসাড়তা নিবীর্যতা দোদুল্যমান অবস্থা থেকে ঠেলে তোলেন। আলো ধরে, দিশা দেখিয়ে আমার সাথে সাথেই পথ চলেন তিনি।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register