Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটগল্পে মঞ্জিলা চক্রবর্ত্তী

maro news
ছোটগল্পে মঞ্জিলা চক্রবর্ত্তী

হলদে রঙা স্বপ্ন

শিমূল-পলাশের বেলা বয়ে গেছে! বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের তপ্ত দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আকাশে বাতাসে রঙ ছড়াচ্ছে অমলতাস, রাধাচূড়া, কনকচূড়ারা! আর তাদেরকে সমানতালে সঙ্গ দিচ্ছে কৃষ্ণচূড়া আর জারুলেরা।
আমারও ওদের সঙ্গ পেতে মন্দ লাগেনা। গ্রীষ্মদিনে বেলাশেষে ক্লান্তদেহে বাড়ি ফিরে যখন আমার দু'কামরার ফ্ল্যাটের পুবদিকের ঝুলবারান্দায় বসি তখন আমায় একান্তে সঙ্গ দেয় দূরের ওই কনকচূড়ারা। দুপাশে সবুজ ঘেসো জমির মাঝে মোরামের রাস্তার ধারে ওদের বাস। দীর্ঘ বিষন্ন বিকালটা যখন যায় যায় করে...আমি তখন উদাসীন চোখে ওদের দিকে চেয়ে থাকি! দমকা বাতাসে সোনালী পাপড়িগুলো ঘুরপাক খেতে খেতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ মন কেমন করা দৃশ্য কখন যেন আনমনে ছুঁয়ে যায়...!
তারপর সারাসন্ধে... সারারাত্রি...ধরে ওদের যৌবেনের স্বপ্ন গাঁথা চলতে থাকে। কোন এক রূপকথার রাজকন্যের জন্য যেন ওরা সারারাত স্বপ্ন বুনে চলে...! মোরামের পথ কখন যেন ঢেকে যায় ওদের সেই সোনালি স্বপ্নে। সকালের প্রথম আলোয় দৃশ্যমান হয়ে উঠে ওদের স্বপ্নে মোড়া, স্বর্ণ সজ্জিত সোনালী রাজপথ... !
এমনি করেই ওদের সুখ সান্নিধ্যে বেশ কাটছিল!
তারপর এল এক ভয়ংকর ঝড়ের রাত্রি। কী বিভৎস, কী ভয়াবহ তার রূপ! অতিকায় দৈত্যের মতো তার হুংকার।আঘাতের পর আঘাত হানল ওদের উপর। হলদে ফুলগুলো প্রাণপণ আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইল সবুজ বৃন্ত-শাখাকে। কাতর যন্ত্রণায় শাখা-প্রশাখাগুলো ছিন্ন ভিন্ন হল! ওদের যৌবনের স্বপ্নগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে তচনচ করে দিল! ওরা চিৎকার করে কাঁদল, কেউ শুনল না সে কান্না, কেউ বাড়িয়ে দিল না ভরসার হাত। একখানা স্বমূলে উৎপাটিত হল আঘাত সইতে না পেরে।
তারপর সে ভীষণ রাত্রি শেষে এল এক নতুন সকাল,মোরামের রাস্তার ধারে মৃত গাছটির পাশে ক্ষতবিক্ষত দেহে বন্ধু গাছটি টিকে রয়েছে তখনও। ও যে শেষবেলায় কথা দিয়েছিল শ্বাস থাকতে ঠিক স্বপ্ন বুনে যাবে...!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register