Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পে অভিজিৎ চৌধুরী

maro news
গল্পে অভিজিৎ চৌধুরী

প্রেম

বিদিশা তার শুভ্র ত্বকে আলগা হয়ে থাকা কালো ব্রা-র হুক লাগাতে লাগাতে বলল – তুমি ওকে মারলে কেন ! নীলাদ্রি বলল – দরদ উথলে উঠল যে ! দরদ নয় , আমাদের তো সব একই । স্তন , জঙ্ঘা, সব সব এক । দীর্ঘশ্বাস চাপল নীলাদ্রি । ফাঁসলে কিন্তু দুজনেই ! সে-কথা বলছি না , কিন্তু আমার প্রতি অনুরাগ ওর প্রতি বীতরাগ কেন ! রমণ-পর্ব মিটে গেলে আনন্দের বদলে এক বিতৃষ্ণার জন্ম হয় । তখন নীলাদ্রিরও বিবেক জাগ্রত হয় । বলল – তোমার প্রভেকশনও ছিল । বিদিশা বলল – একজন নারীর তার মতোনই দেখতে আরেকজন নারীকে পৃথিবীতে সহ্য করতে পারবে না , এটাই তো স্বাভাবিক । নীলাদ্রি বলল – আমি মরলে তোমাকেও মরতে হবে । বিদিশা হেসে বলল – মন্দ কি ! একটা খুনের পর যৌথ আত্মহত্যা । চমকে উঠল নীলাদ্রি ।

ডি. এস. পি সাহেব একদিন নিয়ে এলেন । বললেন – আপনার বিট হাউসের বড় বাবু । থানার ও. সি সাহেব বললেন – স্যার ভালো ছেলে , একটু দেখে রাখবেন । সেদিনের পর থেকেই আমার অস্থায়ী থানার বড়বাবুর পাত্তা পেলাম না । ফোনেও পাচ্ছি না । তারপর এক রাতে হঠাৎ এসে হাজির । নিজেই নিয়ে এসেছে দেশি মুর্গির মাংস । তখন খেতে বসবো বসবো করছি । ভালোই হল । বললাম । ‘তুমি’ বলেই ডাকি ! বয়স তো অনেক কম তোমার ! বলল , কোন অসুবিধে নেই স্যার । কি নাম তোমার ! সুমন্ত ব্রহ্মচারী । বাড়ি ! পুরুলিয়া । অনেকটা ভিতরের দিকে এক গ্রামে । এরপর ‘ও’ যখনই আসত রাত ৯ টার পর । ‘চা’ খেতে বললে , বলত – না । পড়ার টেবিল থেকে যে বই পেতো , নিয়ে নিতো । দারুণ পাঠক ছিল । আমার লেখা বইও নিতো আর ভুলও ধরতো । আমার কিন্তু বেশ ভাল লাগত । সত্যিকারের পাঠকই মনে হতো । কিন্তু মুশকিল হচ্ছে কখনও কখনও একেবারে বেপাত্তা । আবার ফিরে এলে ইতিহাস , ভূগোল নিয়ে গল্প করত । একদিন বলল , আপনাকে নিয়ে রাত ৯ টার পর গনগনি যাব । আমি বললাম – গনগনি গেছি তো ! সুমন্ত বললো – চাঁদনি রাতে গেছেন ! বললাম – হ্যাঁ । কিন্তু গনগনির যেখানে নিয়ে যাব চাঁদনি রাতে সেখানে যাননি । অগত্যা বললাম – যাব । ভেবেছিলাম খেয়ালি মানুষ ভুলে যাবে । আর থানার কাজের চাপ তো আছেই । ভোলেনি সে । এলো হুটখোলা জিপ নিয়ে । গাড়িটা ঠিক হুটখোলা জিপও নয় । খুব মোটা চাকা । আমাকে ড্রাইভারের পাশে বসালো । নিজে মইয়ের মতোন কিছুতে উঠে বসল । পথঘাট । তুলসীচটি , আরাবাড়ি – একের পর এক অরণ্য পার হচ্ছি । চাঁদ লুকোচুরি খেলছে কখনও মেঘের ফাঁকে , কখনও বা উঁচু শাল গাছের ডালে যেন ঝুঁকে রয়েছে । গড়বেতার কাছে এসে দেখলাম হাতীর পাল বেরিয়ে পড়েছে । সুমন্ত বলল – ওরা বিশুদ্ধ বায়ুসেবনে বের হয়েছে । একটু এগিয়ে যেতেই দেখলাম হরিণের ঝাঁক শিলাবতীর পাড় ঘেঁষে চকিত গতিতে মিলিয়ে গেল । এবার বলল – ওরা সব আলুর গো-ডাউনে আটকে ছিল । রাতে ছেড়ে দিতে বলেছিলাম । যে ক’জন ফিরলে ফিরবে – না হলে আরো জঙ্গলের গভীরে হারিয়ে যাবে । বেশ লাগছে কিন্তু তখনও বুঝতে পারছি না গনগনিতে এমন কি আর আছে এতো রাতে ! এই পথটা দিয়ে সত্যি আসিনি কোনদিন । বনানীর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে করতে মনে হচ্ছে যেন কোন শেষ নেই এই পথের । ভয় হচ্ছে , কেন যে এলাম ! কোথায় বা চলেছি । গাড়ি এসে একটা জায়গায় থামল । চমকে গেলাম । আরেকটু গেলেই অতলান্ত খাদ । অচেনা শিলাবতী বয়ে চলেছে বেঙ্গল গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে বুকে জড়িয়ে । চাঁদের আলোয় রূপোর মতোন চকচক করছে নদীর জল । একটা ট্রেন গেল এই সময় । থরথর করে কেঁপে উঠল গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন । আমায় হেসে জিজ্ঞেস করল – কেমন লাগছে ! আমি উত্তর দেওয়ার আগেই ডেকে উঠল দোয়েল তারপর বউ কথা কও , একদম শেষে কোকিল । আমি বললাম , অপূর্ব । বলল – আমি এখানে প্রায়ই আসি । তারপর নদীর জলের দিকে তাকিয়ে বলল – দুটো লাশকে ছইয়ে চাপিয়ে বয়ে নিয়ে এসেছিলাম । কেন ? আত্মহত্যা করার পর লাশ পাওয়া যাচ্ছিল না । অবৈধ প্রেমিক-প্রেমিকা ছিল মনে হয় । অনেকক্ষণ রূপমুগ্ধতায় কাটানোর পর বললাম চলো , ফিরে যাই । সুমন্ত বলল – না । আমি এখানে সারারাত কাটাবো । আপনি যান । কি করবে ! এখানেই শুয়ে থাকব । ভোর হলে যাব । আপনাকে গাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে । বললাম – খেয়েছো ! বলল – হ্যাঁ । হঠাৎ কি মনে করে বললাম – ওরা তোমার কাছে আসবে ! হেসে বলল – কারা ! যে দুজনের লাশ উদ্ধার করেছিল ! সুমন্ত বলল – ৩ জন আসবে । চুপ করে রইলাম । খাদের কিনারায় এগিয়ে গিয়ে বলল – ভয়ংকরকে পার করলে ওপারে পৃথিবী খুব সুন্দর । বললাম – ওরা যাকে খুন করেছিল , সেও আসবে । হ্যাঁ । তিনজনই আসবে । খুব অবিশ্বাস্য লাগল সবটাই । তবে এই রাত , শিলাবতী নদী , অরণ্য আর গনগনি যেন বলে উঠল – চুপ , কোন কথা নয় । গাড়িতে উঠে একবার ফিরে তাকালাম । দেখলাম সুমন্ত দিব্যি আকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে রয়েছে এক অপার্থিব প্রেমের টানে ।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register