Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে মিঠুন মুখার্জী

maro news
অণুগল্পে মিঠুন মুখার্জী

নিয়তির খেলা

অরুণ অরুণ- এর ন্যায় উজ্জ্বল হতে চেয়েছিলেন। সে তার জীবনে সূর্যের তেজের মত সব প্রতিকূলতাকে দূর করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। অরুণ কখনো রৌদ্র হতে চেয়েছিলেন। তার আলোয় জীবনের সমস্ত অন্ধকারকে দূর করে দেবে ভেবেছিলেন। কিন্তু অরুণের স্বপ্ন বাস্তব হয় নি।অরুণদের মত মানুষের কত স্বপ্ন থাকে, সব পূরণ হয় না। অরুণ ডাক্তার হতে পারেন নি, হয়েছিলেন কবি। কবিতার রোমান্টিকতা ওর ভালো লাগেনা। তাই বাস্তব সমস্যাকেই ও বেশি পছন্দ করতেন। মানুষ যা চায় তা পায় না, যা পায় তা মুখ বুঝে গ্রহণ করে। অরুণেরও তাই হয়েছিল। সুলেখা নামে একটি গানের শিক্ষিকার অপরূপ সৌন্দর্যে মজেছিলেন সে। কিন্তু কোনদিন তাকে কিছু বলতে পারেন নি। মনে সংশয় ছিল, যদি না বলে। শিক্ষিকার বাড়ি অরুণের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। একদিন বিয়ে হয়ে তার চোখের সামনে দিয়ে সুলেখা শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। হাউ হাউ করে কান্না করেছিলেন অরুণ। একতরফা ভালোবাসায় এরকমই হয়। অরুণ স্বপ্ন দেখতেন নাম-যশ ও অর্থের। সেও আর দশটা মানুষের মত ধনী হবার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু অভাব তার নিত্যসঙ্গী ছিল। কবিতা লিখে সেভাবে আয় হতো না, তাই পেটের জ্বালায় বইয়ের দোকানে হিসাবরক্ষকের কাজ নিয়েছিলেন। ভাগ্য কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় কেউ বলতে পারেনা। সেই দোকানটা ছিল সুলেখার স্বামীর। প্রথমে অরুন জানতেন না, ছয় মাস পরে একদিন দোকানে সুলেখাকে দেখে বুঝতে পারেন। মনের কষ্টে সে কাজটিও ছেড়ে দিয়েছিলেন অরুণ। অরুণ ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে দিদি ও দাদাবাবুর কাছে মানুষ হয়েছিলেন। তাই তাদের প্রতি তার শ্রদ্ধার শেষ ছিলনা। অরুণ একটা ছোট্ট ভুলের জন্য লজ্জায় দিদির বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মাত্র 100 টাকার বিনিময়ে বন্ধু সুভাষের সঙ্গে একযোগে একটা ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন।সুভাষ তাকে বলেছিল--"তোর যা অবস্থা তাতে ভাড়া দিবি কোথা থেকে;তোর টাকা আমি দিয়ে দেব।"অরুণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর চাকরিসূত্রে সুভাষ অন্যত্র চলে গেলে সেই ভাড়া বাড়ি অরুণকে ছেড়ে দিতে হয়। অরুণ এর বর্তমান অবস্থান শিয়ালদা স্টেশনে। নিজের লেখা কবিতার বই বিক্রি করেন ও কবিতা শুনিয়ে পয়সা উপার্জন করেন। হঠাৎ একদিন আনন্দবাজার পত্রিকাতে অরুণ সম্পর্কে লেখা বের হয়। দেজ প্রকাশনীর এডিটরের চোখে পড়ে যায় সে। দেজ থেকে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় অরুণের---''অধরা জীবন"। বইটি এত জনপ্রিয় হয় যে,এরপর অরুণকে আর বই বিক্রি করতে হয়নি, তার বই বিক্রি করেছে অন্যে। এরপর 'জীবন চাকার মতো ঘোরে',' অভিশপ্ত দিন','রাত মানে শুধু অন্ধকার নয়','অসমাপ্ত জীবন','কালের করালগ্রাস',' তুমি কত সুন্দর', 'তোমায় শুধু আমি চেয়েছি' কাব্যগ্রন্থগুলি বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে একটার পর একটা বেরিয়ে ছিল। 'অসমাপ্ত জীবন' কাব্যগ্রন্থটির জন্য অরুণ সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার পান। অরুণ সেই সময়ে প্রচুর অর্থ যশ অর্জন করেছিলেন। খুব তাড়াতাড়ি কলেজ স্ট্রিটের কাছে একটি বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন। চারিদিকে সাহিত্যপ্রেমী মানুষের কাছে অরুণ অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় নামে পরিচিতি পেলেন। অনেক খোঁজখবর করে তার দাদাবাবু ও দিদি একদিন তার বাড়িতে এসে উঠলেন।তাদের তত্ত্বাবধানে কলকাতার একটি ভদ্র- শিক্ষিতা- সুন্দরী মেয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক হল। মেয়ের পরিবার খুব প্রতাপশালী ছিল। বিয়ের দিন সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু বিবাহ বাসরে অরুণ উপস্থিত হতে পারলেন না।সেই দিন দুপুরে বিবাহের মালা কিনতে গিয়ে অরুণ আর বাড়ি ফেরেননি। নিয়তির কাছে হয়তো অরুণকে পরাস্ত হতে হয়েছিল।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register