Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে সুদীপ ঘোষাল

maro news
অণুগল্পে সুদীপ ঘোষাল

চন্দনের গন্ধ

মাষ্টারমশাই দীনেশবাবু সাদাসিধা মনের মানুষ। একটা সাধারণ প্যান্ট জামা পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ট্রেনে তার নিত্য যাওয়া আসা। ট্রেনে যাওয়ার সময় অনেক বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ হয়। তারা হাসি মস্করায় ব্যস্ত থাকে। দীনেশবাবু নিজে জানালার এক কোণে বই নিয়ে বসে পড়েন। তিনি নিজেও অনেক বই লিখেছেন। কলকাতার নামীদামী প্রকাশনা থেকে তাঁর লেখা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাতে তাঁর কোনো অহংকার নেই। ছাত্র ছাত্রীদের কি করে ভালভাবে প্রকৃত মানুষের মত মানুষ করা যায়, এই নিয়ে তাঁর চিন্তা। শিক্ষকতা শুধু পেশা নয় তার সঙ্গে মিশে থাকে বাড়তি দায়িত্ববোধ। তিনি এইকথা ভাবেন মনে মনে। কি করে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করা যায়, এই নিয়েই দিনরাত চিন্তাভাবনা করেন। স্কুলে পৌঁছান। ঘন্টা পড়ে প্রার্থনা সভার। জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার পরে শুরু হয় ক্লাস। ক্লাসে গিয়ে তিনি কোনোদিন চেয়ারে বসেন না। ছাত্রদের কাছে গিয়ে সমস্যার সমাধান করেন। পড়াশোনার কাজে সাহায্য করেন। স্টাফরুমে বসেন। তারপর কুশল বিনিময়ের পরে তিনি চলে যান ক্লাসে। কোন ক্লাস ফাঁকা আছে রুটিন দেখলেই জানতে পারেন। কোনো শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলেই তাঁর ক্লাসে চলে যান নিয়মিত। টিফিনে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সময় কাটান। সদাহাস্যময় দীনেশবাবু নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন সারাদিন। স্কুল থেকে ফেরার পরে নিজের লেখা নিয়ে বসেন। কোনোদিন ভাষাসদনে যান। সেখানে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটান। তারপর বাজার সেরে বাড়িতে ঢোকেন।
আমার মা বলেন, ভাল লোকের কোন পারফিউম লাগে না। তাদের গা থেকে আপনা আপনি চন্দনের সুগন্ধ পাওয়া যায়।
মা আরও বলেন, ভরা কলসি টগবগ করে না। জ্ঞানী লোক কথা কম বলেন। তাঁরা প্রচারবিমুখ হন। দীনেশবাবু এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কথা কম বলেন কিন্তু কর্মী লোক। লোকের ভাল ছাড়া মন্দ ভাবেন না কোনোদিন। তাঁর স্বভাব দেখলেই সকলের ভাল লেগে যায়। দীনুবাবুও এই ধরণের লোক। দীনেশবাবুকে মা আদর করে দীনুবাবু বলেন।
তিনি সকালে নিমকাঠির দাঁতন ব্যবহার করেন। জনশ্রুতি আছে, বারোবছর নিমকাঠির ব্যবহারে মুখে চন্দনকাঠের সুবাস হয়। কথা বললেই নাকি চন্দনের সুবাস বেরোয়। শুনে অনেকে নিমকাঠির ব্যবহার করেন। কিন্তু মা বলতেন, শুধু নিমকাঠির ব্যবহার নয়, তার সঙ্গে মানুষকে ভালবাসতে হয়। কারও অমঙ্গল কামনা করতে নেই। মিথ্যা কথা বলতে নেই। তাহলেই মানুষের মুখে সুগন্ধ হয়। এমনকি দেহের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। মানুষ তো দেবতার আর এক রূপ।
দীনেশবাবু ছুটির দিনগুলোতে ফুটপাতের অসহায় লোকগুলোর জন্য হোটেল থেক ভাত তরকারি কিনে, প্যাকেটে ভরে তাদের হাতে দেন। তাঁর ইচ্ছে আছে গরীব লোকগুলোকে প্রত্যেকদিন একমুঠো করে মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার। তিনি সংসারী লোক। তাই এগোতে হবে ধীরে ধীরে।তিনি জানেন, এসব কাজে সবদিক চিন্তাভাবনা করে এগোতে হয়। তিনি ভাবেন, সামাজিক, আর্থিক, আইনগত সমস্ত দিক দেখে তবেই কাজে নামা প্রয়োজন।
আজ সকাল সকাল দীনেশবাবু ছেলেকে ডেকে তুললেন ঘুম থেকে। ছেলেকে বললেন, পড়তে বোসো বাবু। সকালে পড়া মুখস্থ হয় ভাল। ছেলে বলে, বাবা তোমার মুখ থেকে চন্দনের সুন্দর গন্ধ পাচ্ছি ।
দীনেশবাবু বলেন, ও তাই নাকি? তোমার মুখেও তে সুন্দর গন্ধ।
রাস্তায়, স্কুলে যেখানেই দীনেশবাবু যাচ্ছেন সকলের মুখেই এক কথা,দীনুবাবু আর একটু কথা বলুন। আপনার মুখে চন্দনের সুবাস। বসুন বসুন। সকলের আদরে তিনি নিজেও যেন চন্দনের সুবাস অনুভব করছেন। আদরের আতিশয্যে তিনি খুশি।
একটি শিশু দৌড়ে তাঁর কাছে এল চন্দনের সুবাস নিয়ে। দীনুবাবু শিশুটির কপালে একটা চন্দন সুবাসের চুমু এঁকে দিলেন সস্নেহে....
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register