Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - ষোলো 

maro news
সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় - ষোলো 

টুকরো হাসি - ষোলো

ওরা রাজি হলে

গুঞ্জা  ঠিকই করেছে এবছর  বিশেষ দিনটিতে সে সুকান্তর সঙ্গে একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়বে। বাড়ির লোকের গঞ্জনা,বান্ধবীদের তাগাদা আর পাড়ার লোকের ট্যারা চোখে তাকান আর সহ্য হচ্ছে না।

মা সেদিনও বলল, এবার আর ধিঙ্গিপনা না করে বাড়িতে থেকে একটু ভদ্র হওয়ার চেষ্টা কর। পাড়ায় তো গুজগুজ ফুসফুস হয়েই চলেছে। তোর বাবার কানে গেলে আর রক্ষা থাকবে না।

মায়ের আর দোষ কী। সারাক্ষণ আত্মীয়রা কানে মন্তর দিচ্ছে। যার যার দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের বিয়ের যোগ্য ছেলে আছে সবার খবর এনে মাকে বলছে। মা শুনে ছটফট করছে। এইসব সুপাত্রদের কারও গলায় গুঞ্জাকে ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য। 

বান্ধবীরা বলে, আর কবে কি করবি। ঘুরে ঘুরে তো দুপায়ের গোড়ালি ছোটো হয়ে গেল। এবার বিয়েটা কর। আমরা কবে তোর বিয়েতে আনন্দ করব?

ওরা বলতেই পারে। সেই তিন বছর আগে যখন ভ্যালেন্টাইনডে তে ঘুরতে বেড়িয়ে ছিল তখন সবার সঙ্গেই একজন করে ভ্যালেন্টাইন গায়ে সাপটে ছিল। ওদের সঙ্গে একা থেকে গুঞ্জার নিজেকে খুব বোকা বোকা মনে হচ্ছিল। মনে হয়েছিল বান্ধবীরা ওকে অপমান করবার জন্যই এইদিনে ডেকেছে। নিজেরা যে ভ্যালেন্টাইনডে তে সার্থক তাই দেখাতে চেয়েছে।

সেদিন রাগে দুঃখে মনের ভিতর যখন মেঘ জমছে তখনই ওর সুকান্তকে নজরে পড়েছিল পড়েছিল।একা বাস স্টপেজে দাঁড়িয়েছিল।

সুকান্তকে দেখে গুঞ্জার মনে হয়েছিল,তুমিও একা আমিও তাই। মনে হতেই বান্ধবীদের একজনের হাত থেকে গোলাপ ছিনিয়ে নিয়ে সুকান্তর হাতে দিয়েছিল।

বান্ধবীরা ছুটে এসেছিল। বৃন্দা বলেছিল,  এটা কেমন হল? গোলাপ তো ওনারই তোকে দেওয়ার কথা।

সুকান্ত বলেছিল, মেয়েদের অধিকারকে ছোটো করে দেখলে হবে? এখন ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে কোনো ভেদ নেই। সবাই সমান।

সুকান্তর কথায় সবাই হাততালি দিয়েছিল। গুঞ্জার খুব গর্ব হচ্ছিল নিজের জন্য।

সেই বান্ধবীদের সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুজন তো ডিভোর্স হয়ে যাবার পর  আবার বিয়ে করেছে।

আর গুঞ্জা! ডিভোর্স তো অনেক দূরের কথা, তিন বছরে বিয়েটাই করতে পারল না। সুকান্তকে বিয়ের কথা বললেই বলে,  আমার বাড়ির লোকেরা রাজি হলেই আমাদের বিয়েতে আর সমস্যা হবে না। 

এই তিন বছরে সুকান্তর সঙ্গে কোথায় না ঘুরেছে সে। ঘোরার সময় পাড়ার অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। একদিন নৌকায় উঠতে গিয়ে পাড়ার দুলাল কাকুর সঙ্গে দেখা। নৌকার ভিতরে এক মহিলাকে কাকু প্রায় কোলে নিয়ে বসে আছে। গুঞ্জাকে দেখে চমকে গিয়ে বলল, এস তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। মহিলাকে দেখিয়ে বলল, উনি আমার মাসিমা। 

কথাটা শুনেই মহিলা রেগে ছিটকে উঠে পড়ল। যাবার আগে মুখে আগুন ছুটিয়ে বলল, মুখপোড়া কচি মেয়ে পেয়েই আমাকে মাসিমা বলা হচ্ছে? এর পরে দাঁত বের করে এলে মুখে নুড়ো জ্বেলে দেব।

সেই দুলালকাকু পাড়ায় যা ইচ্ছে তাই বলেছে গুঞ্জার নামে। সে কিছু বলতে যায়নি,বললেই তো ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে লাফাবে।

গুঞ্জা ভেবেছে একদিন বাবা যখন বাড়িতে থাকবে না তখন বাড়ির দুয়ারে সুকান্তকে এনে মার সঙ্গে আলাপ করাবে। মা তো ওকে দেখে, সব শুনে বম্‌কে যাবে।

মার কাছে সুকান্ত কোথায় কাজ করে,কত মাইনে পায় সব বলতে বাধ্য হবে। যা অনেক চেষ্টা করেও গুঞ্জা জানতে পারেনি।

তখন গুঞ্জা মাকে কথা শোনাতে ছাড়বে না।

বলবে, ছোটো থেকে তো সব জায়গায় সঙ্গে নিয়ে যেতে। রাস্তায় কত অল্টু পল্টু ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। কোনোদিন মুখ ঘুরিয়ে কাউকে দেখতে দাওনি। নজর একটু এদিক ওদিক হলেই অমনি, এই চল বলে পাচারের গরু তাড়াবার মতো তাড়িয়েছ। আর আমি দেখ, ভ্যালেন্টাইনডের আসল মানে ভালো করে না জেনেও কেমন তোমার জন্য খাসা জামাই জুটিয়ে এনেছি।

গুঞ্জা সুকান্তকে কোনোদিনই বাড়িতে আনতে পারেনি। বললেই ও এড়িয়ে গেছে।

এই ভ্যালেন্টাইন ডে তে সুকান্তকে কিছুতেই ছাড়বে না। আগে কথা বলে তারপর দরকার হলে কোমরে দড়ি দিয়ে নিয়ে আসবে। তখনও বিয়ে করতে না চাইলে রসগোল্লার ভিতরে পাথর কুচি দিয়ে খাইয়ে দেবে। ওর বুকের ছাতি ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো বের করে দেবে।

চারিদিকে আলোয় আলো। প্রেম দিবসে সবারই হৃদয়ে যেন লাড্ডু ফুটছে। গুঞ্জার হৃদয় চাঙ্গা হচ্ছে না। ভেজা নিমকির মতো নেতিয়ে আছে।

সুকান্ত বলল, কোথায় যাবে? কি খাবে বল?

গুঞ্জার যেন জিভে স্বাদ নেই। বলল, খেতে ভালো লাগছে না। চল ওই আড়ালে গিয়ে বসি। আগে তোমার সঙ্গে কথা আছে।

সুকান্ত বলল, আজ নিশ্চয়ই তোমার সব কথা শুনব। ভ্যালেন্টাইনডে তে শুনব না? তোমার মনে আছে এই দিনেই তো তুমি আমাকে গোলাপ দিয়েছিলে। বল কি বলবে?

গুঞ্জা বলল, তুমি কবে আমাকে বিয়ে করবে?

আমি তো বলেছি আমার বাড়ির লোক রাজি হলেই।

ওই একটা ঘরের নামতাই তো এই তিন বছর ধরে পড়ছ। আর এগোচ্ছ না। নতুন কিছু বল।

নতুন আর কী বলব?

তোমার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছ?

মাকে কোথায় পাব? মা তো কবেই মারা গেছে।

গুঞ্জা হতাশ হয়ে বলল, তবে বাবার সঙ্গে কথা বলবে?

বাবা তো মায়ের পাঁচ বছর আগেই মারা গেছে।

চাপ বেড়ে যাচ্ছে গুঞ্জার।বলল, তবে? ভাই, বোনেদের সঙ্গে কথা বলবে?

সুকান্ত বলল, ভাই নেই। বোনেদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। ওদের সঙ্গে তো মুখোমুখিস কথা বলার উপায় নেই। দুবোনই বিদেশে থাকে।

 তাহলে কার সঙ্গে কথা বলবে?বাড়িতে কে আছে? গুঞ্জা উত্তেজিত হয়ে বলল।

আমার বউ আর ছেলে। ওদের সঙ্গে কথা বলেই তোমাকে বিয়ে করতে হবে। ওরা রাজি হলে।       

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register