Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

বইমাত্রিক রাহুল গাঙ্গুলী

maro news
বইমাত্রিক রাহুল গাঙ্গুলী

অধুনান্তিক পরবর্তী কবিতা : নয়া অ্যাস্থেটিক্স খোঁজে

পর্ব ২

গতো সপ্তাহে প্রিয় সৌম্যদীপ রায়ের লেখা কবিতার বই "আকাশ দূরত্ব দূরে" (অভিযান পাবলিশার্স, ২০১৬) হঠাৎ করে পুরনো বইয়ের স্তূপ থেকে আরেকবার হাতে এসে গ্যালো।মনে পড়ে গ্যালো, অতীতে বইটি নিয়ে একটি ছোট্ট পাঠ-প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলাম, আর সেটাকেই বলেছিলাম পর্ব ১।কারণ, বইটিতে থাকা আরো কয়েকটি কবিতার কথা বলা উচিৎ ছিলো ~ কিন্তু অতীতের কবিতাবোধ ততোটা আপডেট ছিলো না; ফলে সেগুলো দ্যাখার আড়ালেই থেকে যায়।আজ, পর্ব ২'তে সেসব কথাই।আসলে, কবির অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দ্যাখা/বিশ্লেষণ/ও প্রকাশের অনুশীলন কৃত অংশটির প্রযুক্তি'ই যদি কবিতা থেকে 'কবিতা পরবর্তী' হয়; তার বহিরাংশটি নিয়ে আলোচনা করাটা একপ্রকার একপেশে কাজ, অতএব সেই একপেশে অবস্থানটি কাটানো ~ আলোচনাকারীর অতি প্রয়োজনীয় দায়িত্ব এবং কর্তব্য অবশ্যই।
য্যামোন ~ বইটির ভিতরে থাকা 'ট্রেন' কবিতাটি; যার প্রথম লাইন "আমি ট্রেন থেকে নিজে নিজেই নামি" এবং দ্বিতীয় লাইন "নাকি || ট্রেনটা || আমাকে || নামিয়ে || দিয়ে || চলে || যায়, || বুঝি না" ~ এই লাইনটিকে ভেঙে একে বিন্যাস করা হয়েছে আট'টি লাইনে; চোখে পড়ে কবিতা থেকে 'কবিতা পরবর্তী' যাত্রার নতুন নির্মিতি।কিভাবে? একটি বাক্যের অন্তর্গত শব্দাংশগুলির একের থেকে অপরের বিয়োজন একদিকে য্যামোন 'দূরত্ব' অংশটিকে প্রমাণ করতে চাইছে, আরেকদিকে 'ট্রেন' এবং 'আমি' ~ উভয় চরিত্রটিকে একে অপরের সাপেক্ষে করে তুলছে সচল ও বেগবান।এখানে নির্মানকার্যের অন্তরস্থ যে ইন্টারস্পেস্, নির্মিত হচ্ছে তৃতীয় ইমেজ; ঠিক য্যামোন ~ সচল ট্রেনের জানলা দিয়ে দেখলে, গোটা পৃথিবীটাকেই মনে হয় নিজের সাপেক্ষে সরে যাচ্ছে।আসলে, শব্দাংশগুলিকে একেকটি চিহ্ন ধরলে, ভাবনার কাজটি অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ।আর এখান থেকেই কবিতাটির পরবর্তী অংশটির জন্ম, যা আমার কাছে 'অধুনান্তিকতা পরবর্তী নতুন অ্যাস্থেটিক্স'।
<<< ছবি : ট্রেন কবিতা >>>
ঠিক এরকমই টাইপোগ্রাফিক এফেক্ট নির্ভর, বইটিতে থাকা আরেকটি কবিতা 'কোণঠাসা' বা অ্যামালগামেশন্ (সংঙ্করায়ন) এফেক্ট নির্ভর কবিতা 'আর্তনাদ' ~ যেখানে সৌম্যদীপ লিখছে "আমার // আ (ফা) র্ত (টা) না (নো) দ"।দেখুন দুটো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ব্লেন্ড করার মধ্যে দিয়ে, নতুনতর আরেকটি অংশের জন্ম।'সরু গলি' // 'আকাশ-ফসিল' // ইত্যাদি, কবিতাগুলি সেই নিরীক্ষামূলক নির্মিতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ য্যানো; যার চেহারা গতিপ্রাপ্ত হয়ে চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গ্যাছে, এখোন চোখে দেখতে পাচ্ছি ~ স্রেফ তার রেশটুকু।পরবর্তী যে কবিতাটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ~ 'f(আমি)'।যেখানে 'f' একটি ফাংশন, যা একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জ বা লিমিটের মধ্যে কাজ করে।কিন্তু এই কবিতায় রেঞ্জটি আকাশের মতোই অসীম এবং বিমূর্ত অভিমুখী।শব্দাংশ এবং সংখ্যার এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ~ যা একদিকে একে অপরের পরিপূরক এবং পরিবর্তনশীল।এখানে 'আমি' এমন একটি চরিত্র, যা এই পরিবর্তনশীলতায় কাজ করছে অতীত/বর্তমান/ভবিষ্যৎ'কে রিপ্রেজেন্ট করা চিহ্ন হিসেবে।অর্থাৎ, চারপাশের পরিবর্তনশীলতায় ~ অপরিবর্তনশীলের নতুন এক ডাইমেনশন্ বা মাত্রা।যার ব্যাখ্যা আসে কসমিক্ সায়েন্স বা অ্যাটমিক রেডিয়েশন থেকে; যার চর্চা ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম থেকে অধুনালোকিত অংশটির প্রতি।হয়তো আরো আরো অনেককিছুই বলা যায় // বলা যেতো; কিন্তু আপাতত পাঠকের ভাবনার স্তরটিকে মাথায় রেখে ~ আজ এ পর্যন্তই।অতএব, প্রিয় পাঠক ~ অভিযান পাবলিশার্স (কলকাতা) থেকে আরেকবার খোঁজ করতে পারেন বইটি; আর যাদের সংগ্রহে বইটি আছে ~ আরেক রাউন্ড ভাবনার স্তরে ভাসতেই পারেন।
<<< ছবি : f(আমি) কবিতা >>>
পরিশেষে এটুকু বলেই শেষ করতে চাই ~ বর্তমানে সৌম্যদীপ কোনো অজ্ঞাত / অজানা কারণে, আমাদের তথাকথিত কবিতা-জগৎ থেকে আকাশ দূরত্ব দূরে'ই অবস্থান করছে।হয়তো সে অনুসন্ধান করছে 'কবিতা পরবর্তী' কোনো কিছুরই।চাইবো, সে ফিরে আসুক দ্রুত; বাংলাকবিতার জগতে আরো কিছু কন্ট্রিবিউশন করুক, ভালোবাসা সাথে করে।তার এই একমাত্র কবিতার বইটিতে, সে যে পরিমাণ কবিতাবোধের দায়িত্ববান নিদর্শন রেখেছে, তার থাকাটা জরুরী।
     
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register