- 68
- 0
অঙ্কের পরীক্ষার খাতায় কবিতা লিখে নম্বর আদায়কারী কবি। সাধক রামপ্রসাদ হিসাবের খাতায় গান লিখেছেন। এক ছাত্র অঙ্কের পরীক্ষার খাতায় অঙ্কতো কষেনি, উপরন্তু কবিতা লিখেছে। কঠিন কঠিন কবিতা কত সহজেই লিখতে পারে, কিন্তু সহজ অঙ্ক করতে কালঘাম ছুটে যায়। অঙ্কের ভীতির জন্য অনেক মেধাবী ছাত্ররাও লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। চলতি ধারণা আছে, অঙ্কে যারা পারদর্শী নয় তারা মেধাবী নয়। রবীন্দ্রনাথ এই ধরনের ধারণা কে মান্যতা দেননি। শান্তনিকেতনে অঙ্কের পরীক্ষক নগেন্দ্রনাথ রায় পড়েছেন মুশকিলে। এক ছাত্র অঙ্কের পরীক্ষার খাতায় অঙ্ক না কষে কবিতা লিখে দিয়েছে। শিক্ষক সুধাকান্ত রায় চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে সেই ছাত্র এবং আরও কয়েকজনে বেশকিছু কর্মযজ্ঞে ছাত্রদের সংগঠিত করে অধ্যক্ষ দিকশূন্য ভট্টাচার্য”র থেকে প্রিয় ছাত্রর মান্যতা পেয়েছে। অঙ্কের শিক্ষক নগেন্দ্রনাথের ধারণা ছাত্রটি এই দুঃসাহসিক কাজ করেছে সুধাকান্র’র প্রশ্রয়ে। সবকিছুই অধ্যক্ষর কানে যাবে। সাতপাঁচ ভেবে নগেন্দ্রনাথ নিজেই অধ্যক্ষকে বললেন, আমাদের ছাত্র প্রমথ, প্রথম পরীক্ষার দিনে অঙ্কের পরীক্ষার উত্তর পত্রে অঙ্ক কষেনি। অঙ্ক পারেনি, করেনি, ঠিক আছে। কিন্তু অঙ্কের বদলে একটা পদ্য লিখে দিয়েছে। সুধাকান্তর প্রশ্রয়েই এই কাজ করেছে। অধ্যক্ষ দিকশূন্য ভট্টাচার্য্য ঠাণ্ডা মাথায় বললেন, -কি লিখেছে বলতো। নগেন্দ্রনাথ সুর করে পড়লেন, “তোমার শরণাগত নহি সতত / শুধু পরীক্ষার সময়- / দয়া করে কিছু মার্ক দিও গো আমায়। / ওগো মাস্টার মশায়, / পরীক্ষার সময় পড়ি তোমার পায়।“ অধ্যক্ষর মুখে তৃপ্তির হাসি, কবিতাটা উপভোগ করলেন। অধ্যক্ষ দিকশূন্য ভট্টাচার্য বললেন, কবিতাটা কিন্তু খুব প্রাণবন্ত লিখেছে। ভেবে দেখ অঙ্ক কষে দিলে তো পা ধরা ধরি করে নম্বর চাইত না। যেভাবে কবিতার শব্দ চয়ন, ছন্দের মিল, মনের আকুতি, ওর সত্যনিষ্ঠা, নম্রতা, অকপট স্বীকারোক্তি, সবই সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। অঙ্কের স্যার নগেন্দ্রনাথ নাছোড়বান্দা, বললেন কিন্তু অঙ্কের পরীক্ষার খাতায় কবিতা। কবিতায় নম্বর আমি কিভাবে দেব। দিকশূন্য ভট্টাচার্য, হাত নেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন সেই জন্যই তো তোমার দয়া ভিক্ষা করে কিছু মার্ক চেয়েছে। নগেন্দ্রনাথ অধ্যক্ষর মন বুঝতে পেরে পাশ করিয়ে দেন। ওই ছাত্র প্রমথনাথ বিশী, প্রথম বার পরীক্ষায় বসে প্রথম শ্রেনীতে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। (কবিগুরুর রবীন্দ্রনাথ এর অন্যতম ছদ্মনাম, দিকশূন্য ভট্টাচার্য)
0 Comments.