Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৪৭)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৪৭)

সুমনা ও জাদু পালক

ব্যাঙের কথা শুনে বানর রাজ মহাগ্রীব ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে গর্জন করে উঠলেন, "স্তব্ধ হও দুষ্টু মণ্ডুকী! আমার পুত্রের জীবন নষ্ট করেছো তুমি। এখন আবার কৌশল করে মুক্ত হয়ে পালিয়ে যেতে চাও? আমি তোমাকে ছাড়বো না। আজীবন ওই খাঁচায় বন্দি থাকবে তুমি।" ---- আমাকে সারাজীবন বন্দী করে রাখলে যদি আপনার ছেলের চোখ ভালো হয়ে যায়, তাহলে আমার বন্দী হয়ে থাকতে আপত্তি নেই বানর রাজ মহাগ্রীব। ------ তোমার স্তোকবাক্যে আমি ভুলতে রাজি নই দুষ্টু মণ্ডুকী! আমার পুত্রের আরোগ্য লাভের জন্য রাজপুরোহিত অহর্নিশি প্রার্থনা করে চলেছেন দেবী মায়ের কাছে। প্রার্থনা করা হচ্ছে আমাদের বংশের আদি পুরুষ চন্দ্রবদন এর কাছে। আমার স্থির বিশ্বাস এই যে, দেবী মা এবং মহাত্মা চন্দ্রবদনের আশীর্বাদে আমার পুত্র সুস্থ হয়ে উঠবে। ------- আমি জানিনা, প্রার্থনায় আপনার ছেলে আরোগ্য লাভ করবে কিনা।হে বানররাজ, আমার অপরাধ নেবেন না ,বিগত তিন মাস ধরে তো প্রার্থনা করেও আপনার পুত্র সুস্থ হয়নি। আমাকেও অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য বন্দী করে রাখা হয়েছে। অথচ আমাকে সামান্য সময়ের জন্য মুক্ত করে দিলে আমি এমন একটা জংলি লতা চিহ্নিত করতে পারি, যেটার শিকড়ের রস মাত্র তিন দিন চোখে লাগালে আপনার পুত্র সুস্থ হয়ে যাবে। ---- অসম্ভব!আমি তোমাকে কোন কারণেই মুক্ত করে দিতে পারি না। আমি মানছি,হয়তো তুমি ইচ্ছা করে আমার পুত্রের চোখে পা দিয়ে আঘাত করনি, কিন্তু ওই আঘাতেই আমার পুত্র দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।তাছাড়া তুমি বন্দী থাকলেও তোমার প্রয়োজনীয় পানীয় এবং আহার্যের কোন অভাব রাখিনি আমি। ------ হ্যাঁ, বানররাজ , আপনি মহানুভব, তাই আমাকে বন্দী করে রেখেও আমার পানীয় এবং আহার্যের কোন অভাব রাখেননি।কিন্তু...... ব্যাঙটিকে কথা শেষ না করতে দিয়ে সুমনা ব্যাঙটির উদ্দেশ্যে বলল,একটা বিষয় আমি বুঝতে পারছি না, তুমি ব্যাঙ হয়েও মানুষের মত কথা বলছ কি করে? অদৃশ্য কণ্ঠ বলে উঠলো, "রাজকুমারী রত্নমালা, আমার মনে হয়,ও আদৌ কোন মণ্ডুকী নয়,ও অভিশপ্ত কেউ।" অদৃশ্য কণ্ঠের কথা শেষ হতে না হতেই হাউ হাউ করে মানুষের মতো কেঁদে উঠলো ব্যাঙটা। বিস্মিত সুমনা বলল,একি! তুমি কাঁদছো কেন? ব্যাঙটা কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল, "আড়াল থেকে কে কথা বলছেন আমি জানিনা,তবে সঠিক কথা বলেছেন উনি।" ------এর অর্থ কী? ------ আমি সত্যি সত্যি ব্যাঙ নই, মানুষ।আমার নাম চন্দ্রকান্তা‌। দুষ্টু জাদুগর হূডু জাদুবলে আমায় ব্যাঙ বানিয়ে দিয়েছে। ------ এখানেও হূডু? কিন্তু কিভাবে,কেন তোমায় ব্যাঙ বানিয়েছে ,হূডু? -------- এই বৃহল্লাঙ্গুল আসমানী বানরদের রাজ্যের উত্তর আছে এক বিশাল নদী,তটিনী। ওই নদী পেরিয়ে ছিল শস্য শ্যামলা এক রাজ্য,'সবুজের দেশ'। ওই রাজ্যে কোন অভাব ছিল না, হিংসা- দ্বেষ-মারামারি ছিল না। প্রজারা খুব সুখে শান্তিতে বাস করত। ওই দেশের রাজা ছিলেন মহারাজ শান্তিব্রত,আমার বাবা। আমি ছিলাম তার নয়নের মণি। খুব আনন্দে দিন কাটতো আমাদের। হঠাৎ একদিন আকাশ পথে উট পাখির পিঠে চেপে যেতে যেতে জাদুগর হূডু দেখতে পায় আমাদের রাজ্য।নীচে নেমে আসে সে। আমার বাবা জাদুগর হূডু কে চিনতেন,হূডুর মায়াবিদ্যা বিষয়ে অবগত ছিলেন তিনি। কাজেই জাদুগর হূডুকে খুব খাতির যত্ন করলেন তিনি। হূডু আমাদের রাজ্যে কিছুদিন থেকে দেশটাকে ঘুরে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করল। আমার বাবা সম্মতি দিলেন। একদিন আমি যখন রাজ উদ্যানে আমার সখীদের সঙ্গে ভ্রমণ করছি,হূডু দেখতে পেল আমাকে। আমাকে দেখে খুব পছন্দ হল তার। সে আমার বাবার কাছে প্রস্তাব দিল যে ,সে বিয়ে করতে চায় আমাকে। হূডু দেখতে খুব কুৎসিত।তাছাড়া বয়সে আমার প্রায় দ্বিগুণ। কাজেই বাবা রাজি হলেন না ।কিন্তু সরাসরি সেটা মুখের উপরে বলতেও পারলেন না। সুযোগ বুঝে জাদুগর হূডু নানারকম ভাবে ভয় দেখাতে শুরু করল আমার বাবাকে।এবার আসরে নামলাম আমি। স্পষ্ট ভাষায় আমি হূডুকে জানিয়ে দিলাম যে, আমি কোন কারণেই হূডুকে বিয়ে করতে রাজি নই। ভয়ংকর রেগে গেল হূডু। আমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনারও কি ওই মত মহারাজ শান্তিব্রত? ‌‌ বাবা উপায় নাই দেখে উত্তর দিল, আপনি শান্ত হোন।আমি আমার মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমি বললাম, তোমার সব আদেশ আমার শিরোধার্য বাবা। কিন্তু দয়া করে ওই কুৎসিত জাদুগর কে বিয়ে করতে বলোনা আমায়। হূডু ভয়ংকর রেগে গিয়ে বলল, এত রূপের অহংকার তোর রাজকুমারী?আমি এক্ষুণি জাদুবলে তোকে কুৎসিত ব্যাঙ বানিয়ে দেবো। বাবা হাতজোড় করে বলল,দোহাই তোমার জাদুগর, বিনা দোষে আমার মেয়েকে এমন শাস্তি দিও না। হূডু বলল, শুধু তোমার মেয়েকে নয়। তোমাকেও শাস্তি পেতে হবে। এরপর এক ভয়ঙ্কর কান্ড করলো সেই দুষ্টু জাদুগর! চলবে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register