Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ৭)

পাহাড়ী গ্রাম সূর্যোন্ডি

মুখটাকে জানলার বাইরে নিয়ে দেখতে চেষ্টা করছি ময়ূর পাহাড়ের আবছা স্কেচ। ঘনিয়ে উঠেছে আঁধার। ঘন গাছের স্তুপীকৃত কালো পেরিয়ে সেখানে পৌঁছতে পারছে না চোখের অন্বেষণ। তবু তাকিয়েই আছি... আবছা হ'য়ে আসা মনে পড়াদের ভীড় টপকে উঠে আসছে দু'টো ছায়ামূর্ত্তি। ছোট্ট টিলার চূড়ায় তখন ঢ'লে পড়ছে অগ্নিসম্রাট। সেই আসণ্ন বিকেলে নিজেদের মেলে ধরছে ছায়া ছায়া ভালোবাসার দুই মানব- মানবী। আবেগী আলোর ভিতর উথলে উঠছে জীবনের উল্লাস। তারপর আরো ঘন গাঢ় একটা মেঘের আড়ালে ঢেকে যাচ্ছে সমস্ত দৃশ্যপট। গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ের চূড়ায়। সরকারী আবাসন "নীহারিকা"র গেট খুলে দিচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী। গাড়ি থেকে এখন নামতেই হবে। সামনে বিস্তর কাজ সারিবন্দী হ'য়ে আছে। সবার দু'হাতে নানা সামগ্রীতে ঠাসা ভারী ব্যাগ। দু'পাশে সৌন্দর্যে মাখামাখি পোষিত বৃক্ষ কাঁচি ছাঁটা সমান্তরাল মাথায় দাঁড়িয়ে... তারই ফাঁকে ফাঁকে পথ। পথের শেষ মাথায় রিসেপসন অফিস। আর একটা শাখা পথ ডান দিকে ঘুরে চ'লে গেছে অফিসের পিছন দিকে। আপাততঃ রিসেপসনের কাউন্টারে ব'সে থাকা ছেলেটিকে পরিচয় দিতেই সে আমাদের জন্যে নির্ধারিত ডর্মেটরি ঘরের চাবি তুলে দিচ্ছে কম বয়েসী একটি ছেলের হাতে। কালি আর শঙ্কর কাঁধে পোশাকঠাসা ভারী বস্তা নিয়ে হাজির সেখানে। পিছনে টুটুনের দৃপ্ত পিঠে আমার সেই তিরিশ কেজির অসহ্য ব্যাগ। এখন বস্তা ও ভারী ব্যাগগুলো অফিসের ঠিক পিছনেই লাগোয়া ফাঁকা বারান্দায় রাখার ব্যবস্থা করতে হ'চ্ছে রিপেসনিস্টের সাথে কথা ব'লে। আমাদের ডর্মেটরি সেই পিছনে... অনেকটা দূরে। ইতিমধ্যে এখানেরই একটি দরিদ্র স্কুলের মাস্টারমশাই সেই গুরুপদ সোরেন উপস্থিত। তার হাতে ঝুলছে ব্যাগ, সম্ভবতঃ আমাদের পূর্বকথনের চাহিদা... মহুল। একগাল হেসে ব্যাগটা আমার হাতে তুলে দিচ্ছে গুরুপদ। কালি উঁকি দিয়ে দেখতে চাইছে ব্যাগের ভিতরটা। টুটুনের ঠোঁটের পাশে প্রাক-পরিতৃপ্তির আবছা হাসি ভাসছে। শঙ্করের হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে এখন শাখাপথ ধ'রে চলেছি...সামনেই বিশাল সমবেত আহারের সুদৃশ্য ব্যবস্থা। পেরিয়ে যাচ্ছি আমাদের ছ'জোড়া পায়ের নৈঃশব্দ শুনতে শুনতে। বেশ খানিকটা মনভরানো চোখজুড়ানো পথ পার হ'য়ে নির্ধারিত ঘরের সামনে। সিঁড়িতে ওঠার মুখে বাঁ দিকে। কর্মচারী ছেলেটি তালা খুলে আলোগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে চ'লে যাচ্ছে। আলো বিচ্ছুরিত হ'চ্ছে সাতটা ধবধবে সাদা বিছানার চাদরে। এখন যে যার মত বিছানা বাছাই পর্ব। ঘরের ভিতরটা একটু যেন গুমোট হ'য়ে আছে। টুটুন ফ্যানের সুইচগুলো অন করতেই মিষ্টি হাওয়ায় আরামসূচক সমবেত ও হোঃ ধ্বনিতে ঘরটা গমগম ক'রে উঠল। কালি দু'একটা জানালা খুলে দিচ্ছে। আর ব্যাগ থেকে ইউস এ্যান্ড থ্রো গ্লাস বের ক'রে শঙ্কর মহুল ঢালতে শুরু করেছে। নিশ্চিত সেটা ইশারায় টুটুনের নির্দেশে। কেননা, টুটুন এখন বিছানায় ব'সে চোখ বুজে ধ্যানমগ্ন... ...... ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register