Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৪১)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৪১)

সুমনা ও জাদু পালক

মহা কচ্ছপ বলল, না না, এতে ধন্যবাদের কিছু নেই। দুষ্টু জাদুকর হূডুর অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যে অভিযানে আপনারা চলেছেন, তা সফল করার জন্য, শুভশক্তির সমর্থক যারা, তাদের প্রত্যেকের সাহায্য করা উচিত। আমি বয়সে প্রবীণ না হলে আপনাদের এই অভিযানে সামিল হতাম। অদৃশ্য কন্ঠ বলল, আমাদের সঙ্গে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এই অভিযান অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রাজকুমারী রত্নমালার একার অভিযান।আপনি লাল মুক্তা দিয়ে এবং পরবর্তী পথের নির্দেশ দিয়ে আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন । আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। সুমনা বলল, কাছিম দাদু, অনেক দিন আগে আমার বাবা হারিয়ে গেছে। এই লাল মুক্তা কি আমার বাবাকে খুঁজে দিতে পারবে? ----- অবশ্যই পারবে। ------- তবে এই মুক্তার কিছু নিয়ম আছে। ------ নিয়ম? ---- হ্যাঁ ,এই মুক্তা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কার্যকরী থাকে। সূর্যাস্ত হলেই এই মুক্তা ঘুমিয়ে পড়ে। আর ঘুমানোর সঙ্গে সঙ্গেই এর শরীর থেকে অদ্ভুত উজ্জ্বল লাল আলো বেরোতে থাকে। ওই সময় এর প্রকৃত অধিকারী ছাড়া কেউ এতে হাত দিতে পারে না। ----- প্রকৃত অধিকারী বলতে? ------ অনেক অনেক বছর আগে আমাদের কূর্ম বংশের এক আদি জননীর সঙ্গে শুক্তি বংশের এক আদি জননীর প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়েছিল। সেই বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ শুক্তি বংশের ওই আদি জননী তার বান্ধবীকে,মানে, আমাদের বংশের আদি জননী কে ওই মুক্তা পাহাড়ে যাওয়ার এবং প্রয়োজনে মুক্তা সংগ্রহের অধিকার দিয়েছিলেন। শুক্তি বংশের ওই আদি জননী জলদেবীর আশীর্বাদে নিজের শরীরে এক বৃহদাকৃতির লাল মুক্তা উৎপাদনে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি সেটা জানতেন। আর তাই তিনি মারা যাওয়ার আগে ওই লাল মুক্তার অধিকার আমাদের বংশের আদি জননীকে দিয়ে যান। জলদেবীর আশীর্বাদেই ওই লাল মুক্তা অদ্ভুত গুণসম্পন্ন হয়। সুতরাং বংশপরম্পরায় ওই লাল মুক্তার অধিকারী আমার ঠাকুর্দা। তিনি সেটির অধিকার আমাকে দেন আর তার নির্দেশ অনুসারে আমি ওটা তোমাকে দিয়েছি। সুতরাং ওটার প্রকৃত অধিকারী এখন তুমি। কাজেই সূর্যাস্তের পরে ওই মুক্তা তুমি ছাড়া অন্য কেউ ছুঁতে পারবে না। সুতরাং সূর্যাস্তের পরে ওই মুক্তা নিরাপদ। শুধু দিবাভাগে তোমাকে ওই মুক্তা সতর্কতার সঙ্গে রাখতে হবে। অদৃশ্য কন্ঠ বলল,হে মহাকাছিম,দিবাভাগে এই মহামূল্যবান মুক্তা রাজকুমারী রত্নমালা কিভাবে সুরক্ষিত রাখবে। মহাকচ্ছপ বলল, অত ভয়ের কারণ নেই। ----মানে? ------ ওই মুক্তাটিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমি দুটি ছোট্ট ঝিনুকের খোল এনেছি। এরমধ্যে যেকোনো একটি খোলে মুক্তাটাকে রেখে অপর খোলটি দিয়ে ঢেকে একটা মন্ত্র বলবে। ওই মন্ত্র বললেই খোল দুটির মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর কেউ ওই মুক্তা নিতে পারবে না। খোল‌সহ মুক্তাটিকে তখন রাজকুমারী রত্নমালা তার পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে পারবে। ------ তাহলে তো মুশকিল হবে। ঝিনুকের খোলের ভেতর থেকে প্রয়োজনে মুক্তা বের করব কি করে কাছিম দাদু?‌ সুমনা জানতে চাইল। মহা কচ্ছপ হাসতে হাসতে বলল, তারও একটি মন্ত্র আছে। সেটা বললেই ঝিনুক খোলের মুখ খুলে যাবে। আর তখনই পাওয়া যাবে মুক্তা। সুমনা বলল, মন্ত্র দুটো শিখিয়ে দাও আমাকে। মহা কচ্ছপ বলল, অবশ্যই শিখিয়ে দেবো ।রাজকুমারী রত্নমালা, আমার কাছে এসো। সুমনা তার কাছিম দাদুর কাছে গেল। মহা কচ্ছপ তার শরীরের ভেতর থেকে দুটি ঝিনুকের খোল বের করে বলল, রাজকুমারী রত্নমালা, এবারে যেকোনো একটি খোলের মধ্যে মুক্তা টা রেখে আরেকটা খোল দিয়ে ঢেকে দাও। সুমনা তাই করল। মহা কচ্ছপ বলল, এবারে আমি যে মন্ত্রটি বলছি, আমার সঙ্গে বল। ----- ঠিক আছে কাছিম দাদু, মন্ত্র বল। মহা কচ্ছপ সুর করে বলল , "জন্ম ঘরে আছি আমি ,বন্ধু স্মৃতি নিয়ে,/ সুরক্ষিত থাকবো হেথায় শত্রুকে ছাই দিয়ে।" সুমনা তার কাছিম দাদুর সাথে মন্ত্র আউড়ে গেল। মন্ত্র শেষ হতেই একটা অদ্ভুত আওয়াজ করে খোলের মুখ জুড়ে গেল। সুমনা অনেক চেষ্টা করেও ঝিনুকের খোল দুটোকে আলাদা করতে পারল না। মহাকচ্ছপ হা হা করে উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠলো। আর তার হাসির সঙ্গে সুর মিলিয়ে হেসে উঠল দুধরাজ। অদৃশ্য কন্ঠ বললো, "বাহ! ভারি মজা তো।" সুমনা বলল, কাছিম দাদু, এবারে খোলের ভিতর থেকে মুক্তা বের করার মন্ত্র শিখিয়ে দাও। ----- দিচ্ছি রাজকুমারী। বলো, " নাই শত্তুর,যা শত্তুর , যা,যা চলে যা দূরে, লাল মুক্তা হাসবে এবার সোনালী রোদ্দুরে।" সুমনার মন্ত্র বলা শেষ হতেই ঝিনুকের খোলের মুখ খুলে লাল মুক্তা বেরিয়ে এল বাইরে। অদৃশ্য কন্ঠ আবার বলে উঠলো, বাহ! ভারী মজা তো! সুমনার মুখ হাসিতে ভরে উঠেছিল। এভাবে নানা রকম কথা বলতে বলতে একসময় পুবের আকাশ লাল হয়ে উঠলো। ভোরের অর্ক লাল আভা ছড়িয়ে দিল অঞ্জনা নদীর জলে। সুমনা তার কাছিম দাদুর কাছে বিদায় নিল। নতুন দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো দুধরাজ। চলবে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register