Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ৫)

পাহাড়ী গ্রাম সূর্যোন্ডি

মোবাইলে চোখ নেই করোও। গার্গীর কবিতাপাঠ শুনছি আর অনুভবের নানা মাত্রা তৈরী হ'চ্ছে এক একজনের মনে বিভিন্নরকম। গানের সুরের যে আবেশ সারা কামরা জুড়ে একটু আগেই ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই আচ্ছন্নতার অবশ খোপে খোপে গেঁথে নিচ্ছি শব্দ আর কবিতাগহনের নিঃশব্দ উড়ান। ট্রেন ছুটে চলেছে অবধারিত বিলম্বিত সময়ের ভিতর দিয়ে। আকাঙ্খা বলছে... বরাভূম স্টেশনে নেমে পড়ব আমরা। মানে পুরুলিয়ার ঠিক আগের স্টেশনে। ওখান থেকে অযোধ্যা পাহাড় বেশ খানিকটা কম দূরত্বের। কালি বলছে... সে তো ঠিকই আছে। ওখান থেকে গাড়ি পাওয়া যাবে নিশ্চই। যে বিপুল পরিমাণ বস্তা আর ব্যাগ রয়েছে, আগে সেটা ভাবো... আকাঙ্খা তার পরিচিতদের ফোন করছে। এবং গাড়ি পাবার কথাটা ব'লেই দিচ্ছে অনুরোধের সুরে। প্রায় বত্রিশ মিনিট বিলম্বিত চালে বরাভূম নামলাম‌। প্লাটফর্মের অনেকটা জুড়ে ঢাঁই হয়ে আছে সমস্ত সামগ্রী, ব্যাগ, বস্তা... টুটুন একটা বস্তা অবলীলায় কাঁধে তুলে নিল আর বুকের সামনে ঝুলিয়ে নিল নিজের ন্যাপস্যাকটা। তারও পরে আকাঙ্খার ঢাউস সুটকেসটা বাঁ'হাতে গড়িয়ে নিয়ে চলল। কালির হাতে ও কাঁধে ব্যথা থাকা সত্বেও একটা বস্তা তুলে নিল ঘাড়ে। শঙ্কর বিশেষ কথা বলেনা, কাজের কাজটা ক'রে ফেলে সময়মত। একটা বস্তা তুলে নিল কাঁধে, ডান হাতে ঝুলিয়ে নিল গার্গীর গৈটা চারেক পলিথিনের প্যাকেট। আমার বিপদ্জনক ভারী রুকস্যাকটা জোর ক'রে পিঠে তুলে নিচ্ছে আকাঙ্খা। ফলতঃ আমার, গার্গীর আর গার্গীকন্যার ভার বেশ কমে গেল। এখন সিঁড়ি উত্তোরণ... এবং অনেকটা হেঁটে ওভারব্রীজ ধ'রে স্টেশনের অপরপাশে চলেছি। বাইরের চাতালে জিনিসপত্র নামিয়ে টুটুনের প্রথম উচ্চারণ... চা। সামনেই দোকান। সুতরাং সময় এখন চায়ে মনোযোগী। বাইরের ফাঁকা জায়গায় দু'তিনটে ভাড়াগাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেও আমাদের বিশেষ তাড়া নেই। আকাঙ্খা ফোন ক'রে জানাচ্ছে আমাদের পৌঁছে যাবার সংবাদ নির্বাচিত গাড়ির চালককে। কালির ঝাড়গ্রামীয় সুবর্ণরৈখিক ভাষা আর টুটুনের হালকা রসিকতার ভাঁজে চায়ের কাপ খালি হ'য়ে যেতেই নির্ধারিত গাড়ি চালকের এক চরিচিত যুবক আমাদের কাছে এসে গেছে। এবং জানাচ্ছে... স্টেশনের ওপারে গাড়ি এসে গেছে। মানে... এই বিপুল পরিমাণ জিনিস নিয়ে পুনরায় ওপারে যেতে হবে। অসম্ভব... আকাঙ্খা কাঁধের সম্ভাব্য ঝুঁকে পড়া ভারে হাত রেখে বলছে...এখানে গাড়ি নিয়ে আসতে বলো... আর টুটুন নিশ্চিন্ত হ'য়ে দ্বিতীয় চায়ের অর্ডার দিয়ে দিচ্ছে। মিনিট কুড়ির মধ্যে গাড়ি এসে গেল। বস্তাগুলো তুলে ফেলছে কালি আর শঙ্কর। আকাঙ্খা তখনই জানাচ্ছে... আমি আজ তোমাদের সঙ্গে অযোধ্যায় যাচ্ছি না। পুরুলিয়ার বরাবাজারে আমার একটা নিমন্ত্রণ আছে। যেতেই হবে। তবে আগামীকাল সকাল আটটার মধ্যে ঠিক পৌঁছে যাবো ওখানে। চিন্তা কোরো না। অগত্যা। উঠে পড়তেই গাড়ি ছেড়ে দিল। জানলার বাইরে গৃহস্থ নগর দ্রুত স'রে স'রে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ছায়াময় হ'য়ে উঠছে সন্ধ্যার প্রকৃতি... ক্রমশঃ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register