Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ৪)

পাহাড়ী গ্রাম সূর্যোন্ডি

ট্রেনের গতি শ্লথ হ'য়ে উঠতেই প্লাটফর্মের চলাচল বহু মানুষের সংলাপ আর ওঠা নামার চঞ্চলতায় মুখর এখন। টুটুন হাত উঁচু ক'রে এবং "কালি..." চীৎকারে নিজের অবস্থান জানিয়ে চলেছে। দূর থেকে দেখছি কালি হাত নাড়ছে। টুটুনকে ইঙ্গিত করতেই দ্রুত নেমে পড়লাম প্লাটফর্মে। একটা বড় বস্তা জাপটে ধ'রে টুটুন তুলে নিচ্ছে কামরায়। কালি আরেকটি মানুষের সাহায্যে আরো ভারী একটা বস্তা টেনে তুলছে দরোজার মুখে। আরেকটি বস্তা, সেটি  আমার সমান উচ্চতার... কোনরকমে টেনে দরোজার মুখে আনতেই টুটুন তুলে নিল কামরায়। এখন বস্তাগুলো উপরের বাঙ্কে তুলতে হবে। তার মধ্যেই টুটুন পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে কালি ও শঙ্করকে। আকাঙ্খা, গার্গী মাথা উঁচু ক'রে শুনছে। টুটুন বলছে... এই হ'ল কালি, কালিপদ সাউ...প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আর এই হ'ল শঙ্কর, মানে মণিশঙ্কর দন্ডপাট... আদ্যপ্রান্ত কৃষক। শঙ্কর উঠে যাচ্ছে বাঙ্কের উপর, বস্তাগুলো তুলে ধরছে টুটুন।

এখন কামরায় ভরা জোয়ার। কথোপকথনে বেশ গমগম করছে। আকাঙ্খা গুনগুন করছে...ও কানালি...কালি বলছে... জোরে হোক দিদি। সারা কামরা জুড়ে লোকসুর ছড়িয়ে পড়ছে। গানের ছন্দে দুলে উঠছে শরীরের নিতল উল্লাস। টুটুন আমি হাতে তালি দিচ্ছি আর কালি মোবাইল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গানের সুর, আকাঙ্খার আবেগী মগ্নতা আর এই কামরার অন্য মানুষগুলোর অপার কৌতূহলকে ভিডিও মোডে তুলে নিচ্ছে। কালি আনন্দে মগ্ন। ওর চুলগুলো উজ্বল কপালে ছড়িয়ে পড়েছে। আকাঙ্খা গান শেষ করছে ধীরে ধীরে। উপরের বাঙ্কে বসা শঙ্কর আর মুখোমুখি বসা গার্গী উন্মুক্ত আনন্দে হাততালি দিচ্ছে।

লোকসুরের ভিতর এমন একটা গহন উন্মাদনা আছে, যার শিকড় নিশ্চয়ই আমাদের রক্তের উজানী স্রোতে আদি জীবনের রহস্যময় অজানার ভিতর ফিরে যেতে চায়। আর আমি মনে মনে খুঁজে বেড়াই উচ্চাঙ্গ সংগীতের সাথে তার প্রগাঢ় সখ্যতা। গুনগুন ক'রি আকাঙ্খার গানের অন্তিম রেশটুকু নিয়ে। টুটুন অপেক্ষা করছে উন্মুখ হ'য়ে। খাম্বাজের উত্তরাঙ্গ আলাপের কাছে পৌঁছতেই আকাঙ্খা বলছে... ওঃ দাদা, অসাধারণ। কালি যথারীতি মোবাইলে ধ'রে রাখতে চাইছে সবটাই। কামরাটা ভ'রে উঠছে সুরের বিচিত্র অবগাহনে। এই তো প্রাণের উল্লাস, এইই মুক্তির হীরক দ্যূতি।

চলমান ট্রেনের কামরায় সময়েরা থমকে থাকতে চায় এই প্রণোচ্ছল মুহূর্তগুলোর কাছে। তারই ফাঁকে হেঁকে যায় কামরা থেকে কামরায় হকারের হরেকরকম ধ্বনি। ঝকঝক ক'রে বেজে চলে টানা একটা ঝিম ধরা শব্দ। চাকার সাথে বাতাসের, গতির সাথে দীর্ঘ লম্বা শরীরের ঘর্ষণ আর কামরায় কামরায় অজস্র বাক্যবিনিময়ের যে সংঘাত এবং সংমিশ্রণ... সবটা জুড়ে দুরন্ত কিছু সুরের মূর্ছনা মাথার ভিতর গমগম ক'রে চলেছে। টুটুন বাড়িয়ে দিচ্ছে ঝালমুড়ির ঠোঁঙা। ঠিক তখনই গার্গী তার কবিতার ভিতর থেকে তুলে আনছে শব্দের মন কেমন করা আবহ। ওর ছোট্ট মেয়েটা অবাক হ'য়ে চেয়ে আছে মা'র মুখের দিকে। পবিত্র শৈশব ওর চোখের তারায়। মুখের আভায়। ক্রমশ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register