Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ২)

পাহাড়ী গ্রাম সূর্যোন্ডি

এত এত ভীড়ের মধ্যে তবুও একা হ'য়ে যাই এই সময়গুলোতে। পুরোনো দৃশ্যেরা সমবেত হ'তে থাকে চেয়ারের হাতলে, ব'সে থাকা ভঙ্গীতে। আর গলা  শুকিয়ে আসে। জল খাই। গলা ভিজে উঠলেও ঐ চোখের গভীর পিছনে ছায়া মানুষেরা আসে, চেনা হাসি মাখিয়ে ঘিরে থাকে আমার মগজ। মনে হয় গল্পগুলো আমিই লিখেছিলাম ভিজে গামছায় জল ঝ'রে পড়ার মত। কত স্পর্শ লেগে আছে। কত কত গন্ধ জড়িয়ে আছে ধোঁতলা পদচিহ্নের আড়ালে। সোমনাথ, কিরণদা, হিরণদা, রঘুদা, শম্ভুদা, অসিত, পাপিয়া, রেখা... এত চরিত্র গুনগুন করে যে... তাদের কেউ কেউ হারিয়েই গেল। নিশ্চিহ্ন হ'য়ে গেল সময়ের ভিতর থেকে। পঁচানব্বুই, সাতানব্বুই... দু'হাজার উনিশ পর্যন্ত... সমবেত বছরগুলো মাথা নীচু ক'রে দাঁড়িয়েই থাকে। পারিপার্শ্বিক এ্যালবামের পাতা উল্টে যেতে থাকে। আর একা হ'তে থাকি। এনকোয়ারি ঘর থেকে মাথা নীচু ক'রে বেরিয়ে আসছে সোমনাথ। কাছে এসে বলছে... মাশাই, সিডিউল টাইমে ট্রেন নেই... ঘন্টা তিনেক লেট হ'তে পারে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের শীত। রেখা ব্যাগ থেকে চাদর বের করছে। সেই হলুদ চাদর। নৈনীতাল থেকে একবার কিনে দিয়েছিলাম। কিরণদা ভিজে কন্ঠস্বরে বলছে... এই চাদরটায় আপনাকে খুব ভালো লাগছে বৌদি। রেখার মুখমন্ডল জুড়ে ভেসে উঠছে আনন্দিত খুশী বড় ঘড়িতে এগারোটা বেজে গেল। লাল টুপি মাথায় টুটুন এসে যাচ্ছে এই সময়। দু'জনে হাত তুললাম একসাথে। টুটুন বলছে... নতুন বিল্ডিং এ গাড়ি দেবে, চলুন, মালগুলো ক্যারি ক'রে ওখানেই চ'লে যাই। মোবাইলের নামে আঙুল ছোঁয়াতেই "তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না..." গার্গী। বলছে... দাদা গাড়িতে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি। ব'লে দিলাম... নতুন বিল্ডিং এ চ'লে এসো। গেটের মুখেই থাকছি। টুটুন কথা না শুনে আমার ঢাউস ব্যাগটা  পিঠে তুলে নিচ্ছে। মোবাইলে আকাঙ্খা বলছে...  ট্রেন ঢুকছে, হাওড়া স্টেশনের একটু পিছনে। হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে আসছি গ্রীষ্মের প্রাক  দুপুরে... টুটুন ব্যাগের ভারে শ্লথ পায়ে সামনে। ওর ডান পায়ের হাঁটুতে চোট আছে। যদিও বেশ বাহাদুরের মত ভারী ব্যাগ যেন অবলীলায় নিয়ে চলেছে। পিছনে হাঁটছি আর আকাঙ্খাকে বলছি... সতেরো নম্বর প্লাটফর্ম।

সতেরো নম্বর প্লাটফর্ম ধ'রে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নির্ধারিত কম্পার্টমেন্ট। টুটুন উঠে এগোচ্ছে টিকিটের সিট নম্বর খুঁজে। হাতে মোবাইল বাজছে। গার্গী বলছে... এসে গেছি দাদা। আমার কাছে অনেক লাগেজ আছে, একটু আসুন না দাদা। দু'হাতে ঝোলানো টইটম্বুর ব্যাগ সিটে রেখেই ছুট দিলাম গেটের দিকে। বাইরের দিক থেকে গার্গী আর ওর মেয়ে পিঠে হাতে রাশিরাশি ব্যাগ ঝুলিয়ে ঐ আসছে। আবার সেই ট্রেন কম্পার্টমেন্টের দিকে পদক্ষেপ। ও হোঃ। আকাঙ্খা এসে গেছে। টুটুনের সাথে কথা বলছে।

তবু এই সময়টা পরিচয় ক'রে নেবার একটা মুখ্য আয়োজন থাকেই। যেহেতু আমি সবার পরিচিত, তাই দায়িত্বতা সামলে নিলাম আন-কাট। আর ঠিক এই সময়েই দুলে উঠলো ট্রেন। টুটুন বলছে... পাক্কা টাইম। বারোটা দশ। গার্গী হাততালি দিচ্ছে...

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register