Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে গোবিন্দ ব্যানার্জী (পর্ব - ১)

পাহাড়ী গ্রাম সূর্যোন্ডি

নরম একটা সকালের ভিতর দিয়ে ছুটে চলেছে ট্রেন। সূর্যের তাচ্ছিল্য ঝ'রে পড়ছে দু'পাশে ঘন হ'য়ে থাকা বাড়ির ছাদে। গাছেদের দুরন্ত গতিকে সামলে রাখতে পারছি না ব'লে একটা গুমরানো অস্থিরতা বুকের ভিতর, চোখের ভিতর জমছে। ঢাউস ব্যাগটা বাঙ্কের উপর তুলতে পারিনি। পায়ের কাছে বসে আছে স্থবির শরীর নিয়ে। ঝামেলা তো ওটাকে নিয়েই। বাড়ির গেটে তালা দেয়ার সময়ও ভেবেছি... ওটার ওজন বেশী না আমার তাকৎ। পিঠে তুলতেই টের পেয়েছি বয়স হয়েছে হে ... পাহাড়ে হাঁটা পা'জোড়া থপথপিয়ে চলছে বটে, কাঁধের দু'পাশ ঝুঁকে পড়ছে ব্যথা আর আড়ষ্টতায়। চলতি অটোর কল্যানে ভারমুক্ত কাঁধে আড়ামোড়া ভাঙছি আর হিসেব করছি কতটা পথ ওটাকে বইতে হবে। যদিও মুখের চামড়ায় বা শরীরের কাঠামোয় তা প্রকাশ করছি না। মণিরামপুর স্টপ থেকে লঞ্চের দূরত্ব কতটুকু... হেঁটে যেতে চারবার বিশ্রাম নিতে হ'ল। ভাবছি... ওপারে পৌঁছে অতটা পথ যেতে হবে। এই সময়গুলোতে বড্ড অসহায় লাগে। সাথে কেউ থাকলে বেশ একটা বাহাদুরী মেজাজে হাঁটা যেত দাঁত চেপে। অন্ততঃ কথাও বলা যেত। মনে একটা জোর পেতাম। এতো নিজেই নিজেকে বলছি... পারবি না, ধুর্ পেরে যাবি। ঠিক আছে। যেতেও হবে। মনে মনে কাঁদছি কি? হতে পারে। শ্যাওড়াফুলি স্টেশনের টিকিট কাউন্টার হয়ে পাঁচ নম্বর প্লাটফর্মে পৌঁছে মনে হ'ল বহোত চাঙ্গা আছি এখনও। প্রায় হাফ কিলোমিটার কিন্তু টেনে দিলাম তিরিশ কিলোর পেল্লাই ব্যাগ পিঠে নিয়ে। অবশ্য পা টলেছে। মাথা ঘুরেছে বার দু'য়েক। আর পঁয়ত্রিশবার দাঁড়িয়েছি এবং মুঠো মুঠো অক্সিজেন ভ'রে নিয়েছি ফুসফুসে। বড় ঘড়ির নীচে। হাওড়া স্টেশন। চারণিক টুটুন দত্ত, লোকসঙ্গীত শিল্পী আকাঙ্খা ব্যানার্জী, হৃদমাঝারের গার্গী লাহিড়ী ও তার মেয়ে... সবারই মিলিত হবার জায়গা। ফোনেফোনে কথা হয়ে আছে সবার সাথে। বড় ঘড়ির দিকে তাকালাম। দশটাও বাজে নি। বেশ অনেকটা আগে চ'লে এসেছি। বেশ করেছি। ব্যাগটা অবশ্যই দায়ী। মাথার উপরে বিরাট দীর্ঘ ব্লেডওয়ালা ফ্যান ঘুরছে ঢিকির ঢিকির ক'রে। কিন্তু হাওয়াটা ভালোই লাগছে। এর রহস্যটুকু জেনে নিতে হবে টুটুনের কাছে। আহা, টুটুন দত্ত। পাহাড়িয়া টুটুন। ওর সাথে এটা দ্বিতীয় সঙ্গ। ফেলে আসা কোলকাতা বইমেলায় প্রথম সাক্ষাৎ। অবশ্য ফেসবুক আর ফোনাফুনিতে সম্পর্কের একটা মোরব্বা তৈরী হ'য়ে গিয়েছিল বছর দুই ধ'রে। না, টুটুন এসে পৌঁছায় নি। আকাঙ্খার সাথেও দ্বিতীয় বার দেখা হবে একটু পরে। সেই পুরুলিয়ায়... বড়াবাজার বইমেলায় ওর সাথে পরিচয় হয়েছিল, বছর ঘুরে গেছে তাও... ঐ গানে গানে সম্পর্ক। মনে পড়ছে... বইমেলা মঞ্চে ও গান গাইছে - ঢিপিং ঢিপিং বাজনা কোথাও বাজাচ্ছে সান্তালে... আর খোলা মাঠে সারা শরীর জুড়ে উল্লাসে নাচছে কবি হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি তাপস গুপ্ত, কবি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য... আরো কারা কারা ছিল। তাপসদা বলছে... ভিডিও ক'রে রাখুন দাদা, ও হোঃ হরিৎদা নাচছে... এ তো অমূল্য সম্পদ। মনে আছে গানের শেষে আকাঙ্খা আমাদের কাছে এসে আলাপ ও আড্ডা দিয়েছিল কিছুক্ষণ। সেই সব যাপনদিন... আহা আহা। গার্গীর সাথে পরিচয় অনেক বছরের। কতবার কত জায়গায়... কবিতার আসরে, গানের ভিতরে, পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে... সে বহুবার... এই তো গেল বইমেলায় এসে ব'লে গেল... আমিও যাবো দাদা তোমাদের সঙ্গে। বহুদিন কোথাও তো বেরোতে পারিনি। মনের ভিতরটা ছটফট করছে। এবার পাখিটার পায়ের শিকল খুলে দিতে হবে।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register