Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 ক্যাফে হোলি স্পেশাল এ শর্মিষ্ঠা সেন

maro news
T3 ক্যাফে হোলি স্পেশাল এ শর্মিষ্ঠা সেন

গিরগিটি

নেহাতই ছাপোষা গৃহস্থ মশাই, ছারপোকাও বলতে পারেন, যে রেটে জনসংখ্যা বাড়ছে, মানুষে আর ছারপোকায় তফাৎ করতে পারবেন না এরপর। তা, যে কথা হচ্ছিল, ছাপোষা মানুষ আমি, দেশোয়ালী ভাই-বহিনদের মতো ফাগুনের জোয়ারে ডুবে রয়েছি আপাদমস্তক।

এখন আর 'বসন্ত এসে গেছে' বলতে মোট্টে ভালো লাগেনা। সেই যে তিনি (নাম নেবো না বাপু! মামলা-মোকদ্দমাকে এ বাঙাল বড্ড ভয় পায়) কিসে একটা ফেঁসেছিলেন, তার পর যেন গানটার পঞ্চত্ব প্রাপ্তি এবং শ্রাদ্ধ‌ হয়ে গেছে! এ সময়টায় আবার ফিরে যাই 'ফাগুনেরও মোহনায়', 'চমকিবে ফাগুনেরও পবনে, পশিবে আকাশবাণী…' এবং 'কাঁচা বাদাম…'। বাঙালী সব শোনে, সব হজম করতে পারে, মায় কাঁচা বাদামও!

ক্যালেন্ডার ঝোলাই না দেওয়ালে। ফুটো করতে হাজার হ্যাপা, লোক খোঁজো রে, ফোন করো রে, বাবা বাছা বলে বলে আনিয়ে দেওয়ালে ড্রিল করে পড়শির ঘুম ভাঙাওরে….এত সবের নীট রেজাল্ট, গোটা গরমকাল ক্যালেন্ডারের পাতার ফরফর আওয়াজ আর দেওয়ালে ঘষটানোর দাগ! তার চেয়ে রোজ একটু চোখ কান খুলে হাঁটা চলা করলেই আপনি বুঝে যাবেন আজ ন্যাড়া পোড়া, কাল দোল। রঙে রঙে ছয়লাপ ফুটপাথে সদ্য পাতা দোকান। আমি দেখি লাল আর গেরুয়া কেমন শোভা পাচ্ছে গামলায়, চূড়ো করে রাখেন যত্নবান দোকানী। ঠিক পাশেই আবার সবুজ। আপনি রাজনীতি দেখছেন? চোখ গঙ্গা জলে ধুয়ে আসুন! ওপাশের গোলাপী, হলুদ, বেগুনী না দেখলে আমি কি করবো? আমি সব রং সমান চোখে দেখি। খোঁজ করলে খুনি রং পাবেন। আবিরে মিশিয়ে দেবেন চুপিসারে। পড়শিকে তেল দিতে তো আর যাচ্ছেন না, ওই খুনি রং মেশানো আবির মুক্ত হস্তে দেবেন। পড়শি একহপ্তা মনে রেখে দেবে। কম প্রাপ্তি? আমার নজর এড়িয়ে যান এক বয়স্কা দোকানী যিনি নির্বিকার হয়ে রং বিক্রি করেন, নিজে একফোঁটাও মেখে উল্লাসে মেতে উঠবেন না জেনে। তাঁর ফাঁকা চওড়া সিঁথি আমি দেখিনা। আমায় যে দোল খেলতে হবে!

বাজারে ঘুরতে ঘুরতে আমি অগ্রাহ্য করি বিকলাঙ্গ মানুষটির মা মা ডাক। পায়ে পায়ে পেরিয়ে যাই মন্দিরের গেট, যেখানে সার বেঁধে বোঁচকা বুঁচকি নিয়ে বসে থাকে ছেলে খ্যাদানো, মেয়ে খ্যাদানো মায়েরা, যাদের মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র একভাবে কেটে যায় ভিগ মেগে! আমি ঠিক তার পাশ থেকেই ফুলওয়ালী দিদির থেকে দরাদরি করে একগোছা লাল গোলাপ কিনি। বসন্তে একটু ঘরটাও সেজে উঠুক‌। আপনি দয়ালু মানুষ। একছড়া কলা আর চাট্টি গুজিয়া ভাগ করে উবু হয়ে বসে থাকা মায়েদের দ্যান। আমি দেখতে যাইনা সেসব। আমার ওনার ঠিক সাড়ে পাঁচটায় মকাইবাড়ি লাগে। র, চিনি দুধ ছাড়া। আর একটু স্ন্যাক্স। পা চালিয়ে বাড়ি ফিরি রং নিয়ে‌। হলুদ, সবুজ আর গোলাপী রং একসাথে বেঁধে দেয় দোকানী।

যারা গতবার খুব খেলেছিল, ছবি দিয়েছিল দেওয়ালে তাদের অনেকেই এবছর নেই। করোনা কেড়ে নিয়েছে অমূল্য প্রাণ। তাদের ছবি প্রাণপণে স্মৃতির গোপন কুঠুরিতে রেখে দি। আমি একবারও ভাবিনা আমার বোনের, দিদির, বন্ধুর, পরিচিতের রংহীন দীর্ঘ ফাগুন মাস‌! আমি স্বার্থপরের মতো চুটিয়ে দোল উৎসব পালন করি। বলি, আসছে বছর আবার হবে!

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register