Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

হৈচৈ গল্পে দেবদাস কুণ্ডু

maro news
হৈচৈ গল্পে দেবদাস কুণ্ডু

ডানাওয়ালা পাখি

আমি উড়তে উড়তে বসলাম একটা শক্ত ডালে। এর আগে একটা ডালে বসে পড়ে গিয়ে আমার পায়ে চোট লেগেছে। এখনও তার ব্যথা যায় নি। এই ডালটা মজবুত।এই গাছটার সব স্বর্ন পাতা। সেই পাতা থেকে বের হয়েছে অদ্ভুত আলো। এখন রাত। কিন্তু কেউ বলবে না তা। চারপাশে এতো আলো, দিনের বেলা মনে হচ্ছে। আমাকে ঘিরে অনেক মানুষের ভিড়। তারা এতো বড় ডানাওয়ালা পাখি দেখেনি এর আগে। একজন আমার নাম জিগ্যেস করলো। আমি বললাম ---অর্ঘ্যদীপ।
--মানে কি?
--অর্ঘ্য মানে পুস্পাঞলি।
--পুস্পাঞলি কি?
---দেতার পায়ে ফুল দেওয়া।
--দেবতা কি?
--গড।তোমাদের নেই বুঝি?
--থাকবে না কেন? আছে তো। আমরা এই গাছ পাহাড় মাটিকে পূজো করি। দীপ মানে?
--প্রদীপ। মানে আলো।
--তোমার দেশের নাম কি?
---ভারত।
--তোমাদের দেশের নাম কি?
----অরন্যপাহাড়।
--বা:দারুন নাম তো। তোমাদের বাড়ি গুলি খুব সুন্দর। কি সুন্দর ঝুলন্ত বারান্দা। সেখানে কত গাছ। কতো বড় বারান্দা। এতো বড় বারান্দা কেন?
---ঘর মানে তো বন্ধ জায়গা। বারান্দা হলো খোলামেলা। আমার দেশটাকে দেখা যায়। ঘুমনো ছাড়া আমরা কখনো ঘরে থাকি না।
--বা:। দারুন তো। আমার বড্ড খিদে পেয়েছে। কতদূর  দেশ থেকে আসছি তো। কিছু খাবার পাওয়া যাবে?
একজন ছুটে গিয়ে খাবার নিয়ে আমার হাতে দিল। - - এটা কি?
--এটা একটা ফল।
--কি নাম এর?
--স্বর্ন আলো
--ভারী সুন্দর নাম তো।
--খেতেও সুন্দর।
আমি খাচ্ছি। বেশ মিষ্টি। আবার টক লাগছে। শেষে ঝাল। আশ্চর্য তো।
--কিছু সময় পড় দেখবে তোমার শরীর থেকে আলো বের হচ্ছে ।
--তাই নাকি? আচ্ছা তোমরা কি কাজ করো?
---আমরা চাষবাস করি।
---বর্ষা কালে?
---না না। যখন যার খাবার দরকার হয় তখন সে চাষ করে নেয়।
--তখন জল পায় কোথায়?
---কেন আমরা আকাশ থেকে মেঘ নামিয়ে নেই।
--সেটা কি করম?
---এটা দেখেছো? কি বলতো এটা?
--আঁকসি।আমাদের দেশে ফল পাড়ে।
---আমরা এটা দিয়ে মেঘ পাড়ি।
----কি করে? মেঘ তো থাকে আকাশে। তা কত উঁচুতে? এই আকসি তো অতো উঁচুতে যাবে না।
-----আমরা যখন এই আকশি উপরে ধরবো
 তখন ও নিজে থেকে লম্বা হয়ে যাবে।
----আশ্চর্য ।তাতেও কি মেঘকে ছোঁয়া যাবে?
----না। তা যাবে না। তখন মেঘ হাত বাড়ায়। মেঘের হাত বড় লম্বা। ও হাত দিয়ে আকশি ধরে নেমে আসে।
----বৃষ্টি কি করে হবে? মেঘ তো নিচে নেমে এলো বুঝলাম।
-----তখন মেঘকে ঘিরে নানা হাসির গল্প হয়। মেঘ হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে  এক সময় ওর পেট ফেটে যায়। আর তখন ওর পেট থেকে জল  বেরিয়ে আসে।
--বা :দারুন তো!
---তোমরা বাচ্চারা স্কুল যাও?
---কেন যাবো না?
---আমরা সবাই ইস্কুলে যাই।
--কি রকম?
---তবে সবাই এক সংগে যাই না। যার যখন পড়তে ইচ্ছে করে সে তখন যায়।
---যা:। সে আবার হয় নাকি?
মাস্টার মশাই সারা দিন স্কুলে থাকে নাকি?
----একজন একবেলা থাকলো, অন্যজন মাস্টার অন্য বেলা থাকলো।
---এমন কেন? আমাদের স্কুল এগারোটায় বসে চারটেতে শেষ হয়।
---এ তো কারখানার শ্রমিকদের মতো। বাচ্চারা কি শ্রমিক নাকি? তাদের যখন ইচ্ছে হবে তখন পড়বে।
---আর ছুটি?
---পড়তে পড়তে যখন আর পড়া ভালো লাগবে না তখন মাস্টারকে বলে চলে আসবে। এসে খেলবে। আমাদের দেশে বাচ্চারা পড়ে কম খেলে বেশি। বড় হলে অবশ্য এটা থাকে না।
----আমাদের দেশ তো উল্টো। পড় বেশি। খেলা নেই বললেই চলে।
--কেমন দেশ রে বাবা। বাচ্চারা তো খেলতে ভালোবাসে। তার ভিতর যতটা পারে পড়লো।
---আমাদের দেশে তা হবে না।
--একটা কথা বলি কিছু মনে করবে না তো?
---না না। বলো না তুমি।
---তোমার দেশের লোকগুলি পাগল। সুস্থ নয়।
----ঠিকই বলেছো তুমি। আমরাও বড় হয়ে ও রকম পাগল হবো। আমাদের ছেলেমেয়েরাও পাগল হবে। পাগলে দেশটা ভরে যাবে।
---তা তো যাবে।
--আমি যদি তোমাদের দেশে থেকে যাই?
---থাকতেই পারো। কেউ বাধা দেবে না। অনেক দেশের বাচ্চারা এখানে আছে তো?
--তাই বুঝি?
---আমাদের এখানে সব সময় স্কুল বাড়িতে পড়া হয় না। জংগলে নিয়ে গিয়ে পড়নো হয়।
--সেটা কি রকম?
---গাছ গুনে এক দুই শেখে। গাছ চেনে, ফল চেনে। মাটি চেনে।
---দারুন তো! একি এতো আলো
 আমার শরীরে এলো কোথা থেকে!
---সেই যে স্বর্ন আলো ফলটা খেলে, ভুলে গেলে?
---এই অর্ঘ্য ওঠ। এতো বেলা ঘুমাবে আর স্কুল যাবার তাড়া পড়বে। সকালে উঠে পড়বে, তা না। যেদিন আমি তুললাম, সেদিন পড়লো আর আমি যদি কাজে ব্যাস্ত থাকি, তাহলে বাবু ঘুমোতে থাকবে। বাপও হয়েছে তেমন। ছেলেকে যে ডেকে তুলবে, তা না। উনি কাগজ নিয়ে পড়া মূখস্ত করবে। যেদিক না দেখবো সেদিক অন্ধকার। একা হাতে কদিক সামলোবো? কিরে উঠবি তো।
অর্ঘ্যর ঘুম ভেঙে গেল। এবার সে বুঝতে পারলো স্বপ্ন দেখছিল এতোখন।
----স্কুল কখন যাবে? কটা বাজে খেয়াল আছে?
--আমি এই স্কুলে যাবো না।
---মানে?বছরের মাঝে আবার স্কুল চেঞ করা যায় নাকি?
----আমি পড়বো না এখানের কোন স্কুলে?
---তবে কি বিলেতে স্কুলে পড়বে তুমি?
----না। আমি পাহাড় অরন্য দেশের স্কুলে পড়বো। এইবার সুজাতা বুঝতে পারলো ছেলে এখনও স্বপ্ন দেখছে। বড় করে ঝাকুনি দিয়ে টেনে বেসিনের কাছে নিয়ে গিয়ে চোখে জলের ঝাঁপটা দিতে থাকলো। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিল। হরলিকস্ খেয়ে হালকা ফ্রি হ্যান্ড করে চানে যাও।
সারাদিন পুরনো একঘেয়ে রুটিনে কাটিয়ে রাতে জানলার কাছে দাঁড়িয়েঅর্ঘ্য বলল--হে রাত, তুমি আজও আমায় পাহাড় অরন্য দেশে নিয়ে যেও কেমন।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register