Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পে অঞ্জলি দে নন্দী

maro news
গল্পে অঞ্জলি দে নন্দী

রামায়ণ কান্ড শেষে

নন্দী বুড়ী। বয়স চার কুড়ি। চির আইবুড়ী। শ্বেতী, সারা অঙ্গ ভরা, তাই আর বিয়ে হয় নি। মা বাবার একই সন্তান ছিল। যখন পাঁচ বছরের তখন বাবা আবার বিয়ে করে এদের ছেড়ে চলে যায় সুদূর আফ্রিকায়। যে অফিসে কাজ করত সেখানেই এই মেয়েটিও কাজ করত। করতে করতে প্রেম। তারপর ওকে নিয়ে এই চাকরী ছেড়ে বিদেশে অন্য চাকরী নিয়ে পালানো। প্রেম শুরু হয় যখন ওর বউ অন্তঃস্বত্ত্বা তখন থেকে। ডাক্তার বেড রেষ্ট বলেছিলেন। তাই ও বাবার বাড়ী থাকতো। আর মেয়ে ওখানেই জন্ম নেয়। এরপর তাকে আট মাসের বড় করে তারপর স্বামীর কাছে আবার ও শিশু কন্যাকে নিয়ে চলে আসে। ও যখন বাবার বাড়ীতে তখন প্রায়ই অফিস থেকে প্রেমিকাকে এনে ওর স্বামী নিজের শোবার ঘরে এনে রাখতো। এর আবার বাবা ও মা এখানে থাকে না। একটি ঘর ভাড়া করে একাই থাকে এই শহরে। গ্রামে মা, বাবা, ভাই ও বোন থাকে। মাঝে মধ্যে ও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কয়েক দিন গ্রামের বাড়ীতে কাটিয়ে আসে। তাই শহরে একা থাকায় এর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে নিজে বাসায় না গিয়ে প্রায়ই এর বাড়িতেই রাত কাটায়। এবার যখন মেয়ে, বউ এলো তখন ও প্রায়ই অফিসের কাজের জন্য বাইরে যাওয়ার বাহানায় প্রেমিকার ঘরে রাত কাটাতো। এভাবে চলতে থাকলো। এবার ও আফ্রিকাতে চাকরি নিলো। আর সেখানে প্রেমিকাকে সঙ্গে করে নিয়ে চলে গেলো। এরা পড়ে রইল এখানে। মা বেশ শিক্ষিতা। তাই চাকরি পেয়ে গেল। মেয়েকে খুব উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতা করলো। এরপর ও জব পেলো। মা ও মেয়ে দুজনেই চাকরি করে ও বেশ সুখেই থাকে। ত্বকে শ্বেতী বলে অনেকেই বিয়ে করতে রাজি হয় নি। তাই ওর মা চেষ্টা করতে চাইলেও ও ওর মাকে বারণ করে দেয়। ও সারা জীবন বিয়ে করবে না। এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। মা মারা গেছে। ও একাই থেকেছে। তারপর চাকরী থেকে রিটায়ার্ড করেছে। যা টাকা পেয়েছিল তাতে করে বেশ চলে। ও রোজ রামায়ণ পাঠ করে আর পাড়ার অনেকেই তা শোনে। রোজ সন্ধ্যায় এই পাঠ চলে। এবার ওর টাকা শেষের দিকে এসে গেল। অবশেষে ওর খাওয়ার অভাব হল। বাড়িটা বিক্রী করে দিল। পাশেই একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকলো। ওই টাকায় চলল। সে টাকাও ফুরোলো। পাঠ কিন্তু চলতেই থাকলো। আবার উপোস। না খেয়ে চলল বৃদ্ধা জীবন তার। এবার যারা পাঠ শুনতে আসে তারা কেউ কেউ মাঝে মধ্যে খেতে দিল। এভাবেই চলছে। ভাড়ার টাকা দিতে পারে না। তাই যারা পাঠ শুনতে আসে তারাই ওই টাকাটা প্রতি মাসে সবাই মিলে দিয়ে দেয়। সবার দেওয়া পুরোনো পোশাক পড়ে। একদিন ও মাথা ঘুরে পড়ে গেল। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ও উঠতে পারলো না। পাঠ শুনতে এসে সবাই দেখলো। ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালো। স্কিন ক্যানসার। মাসখানেক ভর্তি থাকার পর মারা গেল। রামায়ণটি ওর মাথার কাছেই রাখা ছিল। পাড়ার শ্রোতারা ওই মোটা রামায়ণ সমেত ওর মৃতা দেহটি ওর ওই পাঠ ঘরে আনলো। একজন ওটি পড়ে ওর মৃতা দেহকে শোনাতে গিয়ে দেখলো যে প্রতি কাণ্ডের শেষে শেষে শেষে একটি করে কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি রাখা আছে। এগুলি ওরা খুব যত্ন করে রাখলো। ওর দাহ হল। এবার কয়েকদিন পর শ্রাদ্ধও হল। পাড়ার সবাই মিলেই করলো। এবার ওরা ওই সকল পাণ্ডুলিপি এক প্রকাশকের কাছে দেখালো। বই হল অনেকগুলো। রয়ালটিও পেলো। খুব বিক্রী হল। মৃত্যুর পরে ও বিখ্যাত হল। ওর বইয়ের টাকায় ওর শ্বেত পাথরের মূর্তি স্থাপন করলো পাড়ার সকলে। নীচে খোদাই করা হল - " কবি আইবুড়ী নন্দীবুড়ীর কান্ড শেষে............... "
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register