Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ক্যাফে গদ্যে পূর্বা দাস

maro news
ক্যাফে গদ্যে পূর্বা দাস

তেজাজী কিন্তু অন্ত্যজ ছিলেন

অনিতাদিদির ছোটদাদা বিজন কে কুপিয়ে খুন করেছিল ভাড়াটে খুনীরা। ওহো, খুন না, খুন না, সন্মান হত্যা। পাঙ্খুড়ি আর ওর বাবা, মা কে একসাথে বিষ খাইয়েছিল। পাঙ্খুড়ির বাবা, মার মেয়ের চোখের জল সহ্য হয়নি। অনিতা তখন চোদ্দ বছরের। এ গল্প আমায় বলেছে সান্তারা আন্টি, অনিতাদিদির মকান মালকিন। এককামরার ঘরে থাকে অনিতাদিদি, রোহিত কে নিয়ে। ঘরেই রান্না। কমন টয়লেট। বিজনদাদার ছিল কাপড়ের ব্যাবসা। জওহান নগরে দোমহলা বাড়ি, নীচে শোরুম। তা সেসব বহুদিনের কথা। মা তো ছিল না, ছোটদাদাই ওর বাবা, মা একসাথে। বড় রাজন তো চিররুগ্ন। কোনমতে একটা বিয়ে হয়েছিল বটে কিন্তু মেয়ে রাখির জন্মের পরেই তাকে ধরল নেশায়। রোহিত তো বাবা কে মনেই করতে পারেনা।
ওদের বাড়ির একদম সামনেই গুরুবাবাজীর ছত্রী। থামে দড়ি টানিয়ে কাপড় শুকোয় মহল্লার পাঁচ ঘর। ছবি নেব বলতে ওরা উঠিয়ে নিল কাপড়গুলো। সান্তারা আন্টি ইশারায় ডাকল আমায় ভিতরে। সদ্য সদ্য ছানি কাটিয়েছে, তাই চোখে কালো চশমা। একটা চৌকিতে বসে তিল কী চিট্টি বানাচ্ছে। একদম আমাদের তিলের নাড়ুর মত। বলল, " ও বুঢঢার কথায় কান দিবি না। এ জায়গা তো একদম জঙ্গল ছিল। পঁচাশ সাল আগেও শের এসে যেত সাঁঝবেলাতে। ঐ যে দূরে বড় পাথড়টা দেখছিস, ঐখানে আমার দুই পিসিকে বেঁধে জ্বালিয়েছিল। পালিয়ে গিয়েছিল ওরা দুই সিন্ধী লেড়কার সাথে দুজনে। যাবে কোথায়! শকুনের চোখ তো ওদের। ঠিক ভুলিয়ে টেনে এনেছিল এখানে। বিয়ে দেবে, ঘর দেবে - তারপর ব্যস - জানতি হো, মেরি দাদাজী বো পাত্থর কে উপর বৈঠকে হুক্কা ভি পি লেতে থে।" না থামালে বুড়ি বকতেই থাকবে, আর এরকম কহানী এখানে এসে থেকে প্রচুর শুনছি। প্রসঙ্গে ইতি টানতে বললাম, " দো চার তিল কি চিট্টি তো খিলাও ঔর চলো, তেজাজী কা মেলা লাগ রহা হ্যয়। নারিয়ল নহি তোড়োগে?"
কত যে লৌকিক দেবতা আছে রাজস্হান জুড়ে, সংখ্যাতত্বের হিসেবে আনা মুশকিল। তেজাদশমী আজ। বিরাট মেলা। গতবারও এসেছিলাম। তেজাজীর মন্দিরও আছে বালাজী মন্দিরের পাশে। তেজাজী বা তেজা মহারাজ এখানে শিবের জাতক হিসেবে পূজ্য। অবশ্যই গ্রামীণ এবং কিছুটা অন্ত্যজশ্রেণীদের মধ্যে। প্রামাণ্য তথ্য বলে, তেজাজীর জন্ম - মৃত্যুর মধ্যে ফারাক ২৭ বছরের (1074 -1103)। স্বল্প অবসরেও তাঁর বীরত্ব, তাঁর মানবিকতার কথা এতো বছরেও লোকের মুখে মুখে ফেরে। আজমিঢ় এ দেখেছি তেজাজীর মন্দির। ব্রম্মাদিদির কাছে শুনেছি যোধপুরে বিশাল মন্দির আছে তেজাজীর। নিয়ম সব জায়গায় এক। পূজারী হবেন অন্ত্যজ মালী শ্রেণীর মানুষ। ব্রাম্হণ কক্ষনো না। সান্তারা আন্টি, অনিতাদিদি, আমার কামওয়ালী বাঈ কৌশল্যা, সবাই জানে, কিভাবে সাপে কাটা মানুষকে সারিয়ে তুলতেন তিনি, কিভাবে গাইদের বাঁচিয়েছিলেন ডাকুর হাত থেকে, মেয়েদের প্রতি তাঁর সন্মান, শ্রদ্ধা, সব। তেজাজী মারা যাবার পর তাঁর বাল্যবিবাহের স্ত্রী সতী হয়েছিল। লড়াইয়ের সময় অসময়ে শহীদ হয়েছিলেন তাই, নাহলে প্রিয়তমার জীবন্ত দাহ তে তাঁর আপত্তি থাকত নিশ্চয়ই। এটা অবশ্য এক্কেবারেই আমার ধারণা। রাজপুত আভাশ্রী তাবলে এতো কিছু জানে না। বলে, ওতো গাওবালী দের মেলা। সে যাক গে, রঙ ঢালা বন্দেজ শাড়ী পরা মেয়ে, বৌ দের ভীড় কিন্তু উপছে পড়েছে চুড়িওয়ালার ঠেলাগাড়িতে । বাতাসী, মানে গোলগাপ্পা, মানে ঘুপচুপ, মানে আমাদের জিভে ঝোল টানা ফুচকা না খেয়ে মেলা থেকে ফিরিনি কিন্তু।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register