Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

ক্যাফে গল্পে শম্পা সাহা

maro news
ক্যাফে গল্পে শম্পা সাহা

ম‍্যাডাম

অনেক ক্ষণধরেই টিনা দরজা বন্ধ করে আছে।বাড়ির সবাই ভাবছে সামনে পরীক্ষা, ফাইনাল ইয়ার, তাই পড়ছে হয়তো।
বাড়ির বড় আদরের ছোট মেয়ে টিনা, যেমন পড়াশোনায় ভালো তেমনি ব‍্যবহারে।ও যেন কাউকে দুঃখ দিতে পারে না।সব সময় হাসিমুখ।পাড়ার বাচ্চাদেরও খুব প্রিয় টিনাদিদি।
তাদের সঙ্গে ব‍্যাট হাতে ক্রিকেট খেলা বা প্লেয়ার কম পরলে ফুটবলে লাথি মারা,সব ব‍্যাপারেই টিনা দিদি এক্সপার্ট।সরস্বতী পুজোর মূল উদ‍্যোক্তাও টিনাই।
কিন্তু না টিনা আজ পড়ছে না। পরণের হলুদ চুড়িদারের সাদা ফুলফুল ওড়নাটা মুখের ভেতর ঢেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে গলা পর্যন্ত যাতে কান্নার শব্দ ঘরের বাইরে না যায়। টিনার ছিপছিপে শরীরটা খাটের ওপর ফুলে ফুলে উঠছে শুধু।
রীতেশ আজ ওকে সরাসরি বলেছে এ সম্পর্ক ওর পক্ষে আর চালানো সম্ভব নয়।যদিও সম্পর্কের ব‍্যাপারে প্রথম দিকে রীতেশেরই উৎসাহ ছিল ভীষণ।সারা দিন পেছনে পড়ে থাকতো,অযাচিত সাহায্য করতো।পিছন পিছন কলেজ থেকে বাড়ি পর্যন্ত আসা এমনকি হাত কেটে টি পর্যন্ত লিখেছে।আর ফোন সে তো দিনে লক্ষ বার।
আর এখন!সুন্দরী নতুন বান্ধবী পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওর প্রতি সব উৎসাহ এক মাসের মধ্যেই চলে গেল!বুকের ভেতর এক উথাল পাতাল অবস্থা।ছি ছি।নিজের আকুল অবস্থায় নিজেই লজ্জা পায় টিনা।
সামনে পরীক্ষা আর ও কিনা এভাবে সময় নষ্ট করছে!মেসেজটা আবার দেখে টিনা ,বার বার দেখে।চোখের জল গাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে বইয়ের পাতায়।ভিজে যায় পাতার কোণ।টিনা জড়িয়ে ধরে বইটাকে!অদ্ভূত শান্তি পায়।এরাই তো ওর আজীবনের বন্ধু।
ছোট থেকেই টিনা জানে ও কালো।দিদি রীণার টুকটুকে ফরসা রঙের পাশে যেন ওকে আরো বেশি কালো লাগতো তার উপর আবার বাবার মত পুরুষালি চেহারা।তাইতো যখন ক্লাস সেভেন এইট থেকেই বান্ধবীরা নানা ছেলে বন্ধুর গল্প বলতো ও একা হয়ে পড়তো।আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরতো বইগুলোকে।
ওর বন্ধুরা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিতো," তোকে কেউ প্রেম করবে না কোনোদিন।"কিন্তু বাবা মায়ের বেশি বয়সের সন্তান হবার জন‍্য স্নেহটা রীণার চেয়ে ও একটু বেশিই পেতো।আর ওর মিষ্টি ব‍্যবহার।ওর সব ঘাটতি পুষিয়ে দিত।
সেই ওর জীবনেও যখন প্রেম এল তখন ও ভেসে গিয়েছিল।নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন অনুভূতি।একটু ভয় আবার একটু ভালো লাগাও।শেষ।পর্যন্ত কেউ তো ওকে ভালোবাসলো!
বডি শেমিং নিয়ে ফেসবুকে যে সব বন্ধুরা বড় বড় কথা লেখে তারাও কিন্তু সামনাসামনি ওর চেহারা নিয়ে আরেঠারে হাসাহাসি করতে ছাড়েনি।যেমন ,"এই রংটা কেন পড়েছিস",বা "এটা কেমন ক‌্যাটক‍্যাট করছে"।তাই রীতেশ ওর জীবনে আসার আগে পর্যন্ত টিনা ধরেই নিয়েছিল সমাজ মুখে যতই বড় বড় কথা বলুক শেষ পর্যন্ত মেয়েদের মূল‍্যায়ন সেই রূপের মাপকাঠিতেই হয়।
কিন্তু রীতেশের ব‍্যবহার আস্তে আস্তে ওর ধারণা বদলাচ্ছিল।কিন্তু হঠাৎই কোথা থেকে বনানী এসে সবকিছু ওলোটপালোট করে দিল।
ওদের কলেজেরই প্রফেসরের মেয়ে বনানী।অপূর্ব সুন্দরী আর মেয়েলি হাবভাব বেশ জানে।সাজগোজ ও একেবারে পারফেক্ট।
কানাঘুষোয় শুনেছিল বটে রীতেশ আর বনানীর একটা সম্পর্ক হয়েছে কিন্তু রীতেশ ওটা," জাস্ট ফ্রেন্ডশিপ", বলাতে সেটাই টিনা মেনে নেয়।
কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারে কোথাও একটা সুর যেন বেসুরো বাজছে।সেই বেতালা সুরের তার একেবারে ছিঁড়ে দিলো আজকের মেসেজটা।
বিডিও হিসেবে এই ব্লকে টিনা জয়েন করেছে কাল ই সবে।পরদিনই সব অফিস স্টাফেদের নিয়ে মিটিং। দুপুর আড়াইটের সময় একে একে সব স্টাফেরা এসে জমছে বিডিও ম‍্যাডামের ঘরে।যাবতীয় ফাইল রাখে যে ভদ্রলোক, তিনি এসে ধীরে ধীরে ফাইলগুলো নামিয়ে রাখলেন বিডিও ম‍্যাডামের সামনে।
একি মুখটা চেনা চেনা লাগছে না! হ‍্যাঁ তাইতো!মনে পড়লো,রীতেশ তো কোনো এক গ্ৰাম থেকেই কলকাতায় পড়তে গিয়েছিল।
মিটিং শেষ।"বিডিও ম‍্যাডামের কি সুন্দর ব‍্যবহার"!স্টাফেরা বলাবলি করতে করতে বেরিয়ে গেল ম‍্যাডামের কেবিন ছেড়ে।
রীতেশ ফাইলগুলো আবার আলমারিতে তুলে রাখবার জন্য গোছাতে গোছাতে বললো,"আই অ্যাম স‍্যরি টিনা!" "উঁহু, নট টিনা, বিডিও ম‍্যাডাম।ফাইলগুলো জায়গামত তুলে রাখুন প্লিজ।কাল দেখবো!"বলে মিটিং শেষে কাঁধ ব‍্যাগটা নিয়ে টিনা এগিয়ে গেলো ওর জন‍্য রাখা গাড়ির দিকে!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register