Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

লেন্সের কালি-গ্রাফি - ২

maro news
লেন্সের কালি-গ্রাফি - ২

অবলোকন এবং অবগাহনের পুণ্যস্নান গঙ্গাসাগর

পাহাড় হোক কিংবা সমুদ্র, প্রকৃতির সৃষ্টি সবসময়ই চোখ জুড়ানো। ভোর বেলা সমুদ্র পারের সূর্যোদয় ও যেন মনমুগ্ধকর। যদিও বা ভরা পৌষ মাসে সকাল সকাল সমুদ্র পারের হাওয়ার মোকাবিলা একটু কষ্টসাধ্য, তবুও দৃশ্য উপভোগের জন্য যে তা যথেষ্ট বাঞ্ছনীয়।
গঙ্গাসাগর যেমন দর্শনীয় একটি স্থান, তেমনই তাকে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস এবং পুরাণ কাহিনী। কালে কালে বর্তমানে গঙ্গাসাগর ঘুরতে যাওয়ার স্থান হয়ে উঠলেও, আগে এই স্থান বিখ্যাত ছিল পৌষসংক্রান্তির ভোরবেলায় পুণ্য স্নানের জন্য। বিশ্বাস এবং লোককাহিনী এমনই বলে যে, গঙ্গাসাগরে স্নান করলে নাকি জীবনের সমস্ত পাপ ধুয়ে এক মহা পুণ্য লাভ হয়।
বিশেষ করে এই পুণ্য স্নানে ভিড় হয় বয়োজ্যেষ্ঠ পুণ্যার্থীদের। পৌষসংক্রান্তি দিনের ভোর বেলা সূর্যদয়ের পূর্বে, এই স্নান করা হয়ে থাকে।
সাগরদ্বীপের দক্ষিণপ্রান্তে হুগলি নদী (গঙ্গা নদী) বঙ্গোপসাগরে এসে পতিত হয়েছে। এই সাগরদ্বীপ হল বঙ্গোপসাগরের মহাদেশীয় সোপানে অবস্থিত একটি দ্বীপ। কলকাতা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি। গঙ্গা নদীর মর্ত্যে প্রত্যাবর্তন ও সাগর রাজার পুত্রদের জীবন বিসর্জনের লোকগাঁথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বিখ্যাত তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর।
গঙ্গাসাগর মেলা দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা (কুম্ভমেলার পরে)। সাগর দ্বীপের দক্ষিণে হুগলি নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হচ্ছে। এই স্থানটি হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ। তাই প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বহু লোক তীর্থস্নান করতে আসেন; তবে বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত অবাঙালি পুণ্যার্থীদের ভিড়ই হয় সর্বাধিক।

লোকগাঁথা ও ইতিহাস

কপিল মুনির আশ্রম

কিংবদন্তি আছে, এখানে সাংখ্যদর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম ছিল। একদা কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়।
সগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং তাদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন (রামায়ণ, বালকাণ্ড, ৪৩ অধ্যায়)।
মহাভারতের বনপর্বে তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের কথা বলা হয়েছে। পালবংশের রাজা দেবপালের একটি লিপিতে তার গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে। লোক-কাহিনী অনুযায়ী এখানে কপিল মুনির একটি আশ্রম ছিল। একসময় সেটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আশ্রমটিকে কেন্দ্র করে তার ভক্তদের সমাগম বাড়তে থাকে।
প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি মকরসংক্রান্তি বা পৌষ-সংক্রান্তির পূণ্যতীথিতে লাখো লাখো লোকের সমাগম ঘটে এই সঙ্গমে। এই সমাগমকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিরাট মেলা যার নাম গঙ্গাসাগর-মেলা।

সাধুসন্তদের উপস্থিতি

হিমালয়ের সাধুসন্তরা মেলার বিশেষ আকর্ষণ। তীব্র শীত উপেক্ষা করে কেবল ছাইভস্ম গায়ে মেখে অনাবৃত অবস্থায় তারা তাদের ধর্মীয় নিয়ম পালন করে যাচ্ছেন।
সরকারের পাশাপাশি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেলায় প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে আরম্ভ করে সেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন। জাতপাত ভুলে, সমস্ত সঙ্কীর্ণতা দূরে ঠেলে ঐক্যের এক ভারতের সূচনা ঘটে এই মেলায়।

লেন্সে - সুবীর মন্ডল লেখায় - অনিন্দিতা ভট্টাচার্য্য

ক্রমশ..

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register