Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেসল্পে জয়িতা ভট্টাচার্য

maro news
গল্পেসল্পে জয়িতা ভট্টাচার্য

ঘাসফড়িং

চুম্বনের প্রায় কাছাকাছি এসে হঠাৎ চোখে পড়ল সেই ঘাসফড়িংটা! সে দুলে দুলে দুব্বো ঘাসের গা থেকে পিছলে গেল,হারিয়ে গেল। আবার টুকুস করে জানলায় উঁকি। আর অমনি সামনে বিরাট প্রান্তরটা ভেসে উঠল।ঘাসফড়িং দেখছে সৃজা একদৃষ্টে। মুহূর্তে উপসর্গবিহীন হয়ে যায়। শৈবালের ঠোঁট অনুভব করতে পারে না এত সূক্ষ্ম তফাত। ঠোঁট ইজ ঠোঁট। জোরে টেনে নেয় কাছে। দুপুরের এই অনুষ্ঠানে সৃজার তেমন আপত্তি নেই, কিন্তু আজ মনটা ফড়িং এর ডানায় চড়ে বেড়াতে চলে গেছে তার। শৈবাল দেহের চিচিংফাঁকে ঢুকে পড়ে। ব্যস্ত ও নিবিড় প্রেমিক । সৃজা অভ্যাস মতো ক্রিয়াশীল কিন্তু মনেজুড়ে ভাসছে সেই অনেক প্রাচীন বিস্তীর্ণ গ্রাম। একটা পুকুর,ঘাসফড়িং। দুটো ছেলে মেয়ে হাত ধরাধরি হাফপ্যান্ট, ফুলেল ফ্রক,কোকিল ডাক...... আহহহ আচমকা কামড় উন্মুক্ত পেটে......, হাত চেপে ধরে শৈবালের, উমমম, ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস, গরম কালে বৃষ্টি হলে আগাছা ভরা ওই ভিজে মাটি থেকে এমন গরম বাতাস উঠত,একটা মুখ। ঝাপসা হয়ে আছে মুখটা।কেমন যেন অস্বস্তি। কেন মনে পড়ছে না মুখটা।একটা আভাস,একটা ছায়ার মতো শরীরের ভেতর বাইরে করছে ঘাসফড়িংটা। শৈবালের গলায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, শরীর থেকে মন চলে গেলে পড়ে থাকে জীববিজ্ঞান। সৃজা নগ্ন শুয়ে আছে। জঙ্গলে ঢাকা গুহামুখ থেকে চোরাস্রোত, পাশে নিস্তেজ শৈবাল। চাষা চাষ করে অক্লান্ত। ফসল ওঠে।হয়ত এবার এইমরসুমেই। ভূমি অপরিবর্তিত থাকে কৃষক বদলে যায়। বাড়িটা ভুতুড়ে ছিল।মালিকরা চলে যায় বাবার আমলেই। তারপর কেন কেউ আসেনি। ভাঙা ইঁট, দেউল , আগাছার ফাঁকে অন্ধকার ঘর উঁকি দিত। ছেলে মেয়ে দুটো ঢুকে পড়ত দুপুরে।কামরাঙা পেকে লাল হয়ে থাকত। ঋতুরং। নোনা ফল পাড়ে ছেলেটি। আলগোছে শৈবালের বুকে মুখ রাখে সৃজা যেন ভেতরে আছে সেই সব ছবি। সেইসব দিন আর রাতের তারা দেখতে দেখতে ওরা তখন ছাদে বসে ভাবত ওই বাড়িতে ঢুকতে হবে।ভেতরে আছে পাতালপুরী।যক্ষপুরীর কথা ভাবেনি তবু সেই ঘর।অন্ধকার ঘর।
ফর্সা টানা টানা চোখ,কোঁকড়া চুল ছেলেটা। ছেলেটার মুখ আবছা কেন। অস্থির লাগছে। মা বলত মেয়েটা বরং ফর্সা সুন্দর হলে ভালো হতো। বিয়ে একটা ব্যাপার ফ্রক বয়সেও সে চিন্তা মা র। শৈবাল জামা পরে নিচ্ছে।চলে যাবে। মনটা অন্য দিনের মতো খারাপ নয় তবে ভার হয়ে আছে। শুয়ে শুয়ে দেখছে পুরুষ রূপ। শৈবাল। প্রেমিক তার। হাফপ্যান্ট ছেলেটাও বড় হলে এমনই সুন্দর হতো। অস্পষ্ট মুখ।এমন বলিষ্ঠ পুরুষ হতো সে। কাছাকাছি পুকুর অথবা যে ডোবাটা ছিলো, খুব ধীরে ধীরে সন্তর্পণে আবর্জনা ফেলে ফেলে, কখনো ইঁটের টুকরো দিয়ে অলক্ষ্যে বুজিয়ে ফেলেছে ওরা। এখন বহুতলের জন্য খুঁড়ছে মাটি। ওখানেই ফড়িং টা ঘোরাঘুরি করছে। দরজায় শৈবাল একবার পলকে ঠোঁট ছুঁয়ে যায় আর ঠিক তখনই চোখের আড়াল হয়ে গেলো দিনকর।
বিকেলের আধো ছায়া আর আঁধারে বাড়িটা কিম্ভুত। অনেকেই বলত সাপের আড্ডা। আর সেই টানে ওরা দুজনে উঁকি দিত কি ভেতরের নিকষ অন্ধকার ঘরগুলোতে, ভেঙে পড়া কড়িবরগা ,চামচিকের বাসা আর মোটা ধুলোর আস্তরণ পেরিয়ে ছেলেটা দেখাতো দেওয়ালে শ্যাওলার নন্দন তত্ত্ব। হাতে হাত।
শুকনো পাতা মাড়িয়ে চলে গেছে শৈবাল। বিয়ে অবশ্য হয়েছিল তার। ফ্রক থেকে শাড়ি সেই শাড়ি একটানে খুলে ফেলে আদিম নারী। রক্তপাত মনে দেহে ,সন্তানের মৃত মুখ দেখা কত জন্মের পাপ! চাঁদ বিকাশে সেইসব নিথর শিশুমুখ আজও ওড়ে জ্যোৎস্নার প্রজাপতি হয়ে।অমঙ্গলের প্রতীক চিহ্ন যোনিতে লুকোনো। সেই পাপ। বিয়ে আছে বিয়ে নেই। মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ল বিশাল এক ঈগল। সাড়াদিন ডানা ঝাপটে সব আলো নিভিয়ে দেয়। মা আছে কবরে।দুখের ভার না সইতে পেরে।বাবা তার পর। সেই বাড়ি সেইসব অন্ধকার ঘরে বসতি তখন সৃজা র। ওখানেই তো হাফপ্যান্ট ছেলেটা।আর বড় হয়নি। সে ক্রমে সুস্থ ,গ্রাম থেকে শহর,বেকার থেকে একটি আকার প্রাপ্ত নারী। একা এবং স্বাধীন। ছেলেটা অবিকল আগের মতোই থেকে গেছে। উপায় কী। তার ভালোবাসা। ছেলে তো ছেলেই। আপন মাতৃগর্ভে জন্ম হলেও ছেলে।হাত ধরাধরি ছেলেবেলা ঢুকে পরে কালো কালো ঘরে। তারপর সিঁড়ি। ভাঙা সিঁড়ি লতাপাতা ,জাল কত মাকড়ের, এভাবেই সেই ঘর আর ভাঙ্গা তোরণ। সৃজা অন্ধকারেও খোঁজ করে ফড়িং টার। ছটফটে স্বচ্ছ রং। যদি ঘরে ঢুকে পড়ে আলো দেখে ,অপেক্ষা করে সৃজা।আসে না।কখনো আসে ঘুরে ফিরে চলে যায়। কেউ আসে না পোড়ো বাড়িটায়।অস্পষ্ট মুখটা একবার পেছন ফিরে দেখে নেয় লাল ফ্রক। আবছা অন্ধকারে দুজনে চোখাচোখি, স্মিত হাসি। "মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে"।শৈবাল চলে যাবে বুঝতে পারি যেমন সমীরণ,যেমন অমিত। আমি তেমন দুঃখ পাই না ।ওরা কেউ ঘাসফড়িং ছিলো না। ভাঙা তোরঙ্গে গোখরোর বাসা।তবুও যক্ষপুরী। হাফপ্যান্ট ছেলেটা তাকায় একবার লালফ্রকের দিকে। শুধু একবার আর্ত ধ্বনি।বিবর্ণ হতে হতে অসহায় চাহনি,চোখে চোখ। তারপর ফর্সা ছেলেটা ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ছিল। সৃজা জাগিয়ে রাখতে চাইছে আপ্রাণ। ঘুমিয়ে না পড়ে।জেগে থাকতেই হবে তবে বিষ আটকাবে।নিদ্রায় বিষ ছড়িয়ে পড়ে। সবাই এখন ওর মতো ঘুমিয়ে পড়ছে সাপের ছোবলে। যারা জেগে দু একজন তাদের যন্ত্রণা খুব।
টানা টানা চোখ একটু খুলে সায়ন তাকিয়েছিল।মুখে লেগে ছিল হালকা হাসি। ফর্সা ছেলেটা নীল।সহোদর,সাথী ,জীবন।ওঝা ,ডাক্তার,সকলেই প্রয়াস করেছিল। তবু প্রতিমুহূর্তে আরো দূরে পাড়ি দিচ্ছিল সে।সৃজাকে একা ফেলে সায়ন। দুটি বিন্দু ফর্সা বাহুতে। নীল হয়ে যাচ্ছে শরীর ,আধখোলা চোখ।কী যেন বলতে চায় তাকে। অনেক কথাসবাকি ছিলো তাদের। বড়ো হচ্ছিল ওরা। ঠিকঠাক ভাইবোন নয় দুজন এক হৃদয়ের সাথী হয়ে। সেদিন গোধূলি হতে কলার ভেলায় ঊর্ণা নদীতে ভাসিয়ে দিল ওরা। কান্নার ধ্বনি মা র, আব্বার আমি চেয়ে চেয়ে দেখি। একটা ঘাসফড়িং কলার ভেলায় ওর বুকের ওপর বসে। পারে কি সব বিষ শুষে নিতে ? ওকে নিয়ে চলে গেল সায়ন। ফিরে আসে কি যে যায় কলার ভেলায়? তারপর থেকে সব পুরুষের গায়ে খুঁজেছে ঘাসফড়িং। ও জানে শৈশব।ও জানে সেইসব কৈশোর। ঘাসফড়িং এর শরীর নিয়ে সায়ন আসে। ও একই রকম আছে। সৃজা শুধু দিন গুণে গুণে এগিয়ে চলে মাঠ পেরিয়ে। তোরঙ্গটা খুলতেই হবে যে ...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register