Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গারো পাহাড়ের গদ্যে সিন্টু কুমার চৌধুরী

maro news
গারো পাহাড়ের গদ্যে সিন্টু কুমার চৌধুরী

সু সম্পর্ক

কিভাবে ভুলে থাকা যায় সেই সবুজ তেপান্তরের ঢেউ দোলানো ক্ষেত! ক্ষেত জুড়ে নরম অদূরে মাটির আল ধরে বাবার ডান হাতের তর্জনী নরম হাতের তালুতে ছোট্ট ছোট্ট কচি আঙুলে শক্ত করে পেঁচিয়ে বাবার পিছন পিছন আদুল পায়ে হাঁটা। ক্ষেতের কাছে পৌঁছে বাবা হাঁক পারতেন “ও আহম্মদ ভাই, কি করো, কি করো! এতো অল্প সময়ে এতোটা ক্ষেতের আগাছা সরালে! কাছে এসো একটু জিরিয়ে নাও। তামাক এনেছো? আসো দুটো টান দিয়ে আমাকে একটান দিও।” আহম্মদ জেঠু উল্টো উত্তরে বলে উঠতেন, “কি যে বলেন! আমরা পাঁচ জোড়া হাতে কতোটা আর করলাম! রোদ বাড়লে না হয় জিরিয়ে নিব, আপনি যান।” খোকাকে কেনো আনতে গেলেন, এই রোদে, ভাদ্রের রোদে ভীষণ তেজ, মুখ পুড়ে কালছে হবে।” সুবল কাকু, তপন দা, আহম্মদ জেঠুরা মাঝ ক্ষেত থেকে আলের পাড়ে এসে তামাক সাজায়, এঁর হাত থেকে ওঁর হাতে ঘুরতে থাকে। আহম্মদ জেঠু হঠাৎ আমার পানে চেয়ে বলেন, “না এলেই পারতে, খোকা। এই তেজা রোদে মুখখানা সিঁদুরে হয়ে গেছে।” বাবা বলেন, “ বারন আমিও কি করিনি! সেই এক রা জেঠুর গান শুনবে। তাই আনলাম।” “কিযে বলেন বাবু! আমার গান! আমি আবার কখন গায়েন হলাম?” বাবা আহম্মদ কাকার সলাজ কথার জবাবে বলতেন, “ তার আমি কি জানি? যার জেঠু সেই জানে।” কিছুটা কাদা মাখা হাত আমার ছোট মাথাটার কাছে এসে হঠাৎ থেমে যায়। জেঠু বলে উঠেন, “এই যে বাবা সোনা, এত্তো ভালো বাসো আমায়! আমিতো অশিক্ষিত মানুষ শুধু শুনে শুনে গুনগুন করি। আসছে পূর্ণিমায় গাজী পীরের পালা গানে শুনাবো।” আমি ফিরে আসি ঘরে, ঠাকুরমাকে বলি। ওনি খুশি দিন গুনেন। আজ শুক্লপক্ষের সপ্তমী রবিবার। রবিতে রবিতে আট। আসছে রবিবার। গাজী পীরের গীতের আসর। এমন আসর বছর জুড়ে বসতো। হঠাৎ একরাতে চিৎকার চেঁচামেচি করা যেন সদর দরজায় আঘাত হানে হাতুড়ি সাবলে ঘরে কান্নার রোল উঠে মা ঠাকুরমা গয়না খুলে কাপড়ের পুটলি বাঁধে, নগদ টাকা নামের রঙিন কাগজ গুলো গুছিয়ে নিয়ে আমরা ভোর রাতে গ্রাম ছাড়ি নিরাপদে, তবে অনেকটা গোপনে আহম্মদ জেঠুই স্টেশন পর্যন্ত এলেন, “বাবু কিছু ভাববেন না আমি আগলে রাখবো এই বাড়ি ঘর।” এমন ভাবে আগলানোর চেষ্টা করে নিজের জীবন দিলেন।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register