Wed 24 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা পাল (ছোট গল্প সিরিজ)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা পাল (ছোট গল্প সিরিজ)

গাঁটছড়া

সন্ধ্যাবেলা বগা চায়ের ঠেকে যেতেই পচা বলল,“ কিরে! কাল তো অষ্টমঙ্গলা,যাচ্ছিস তোর শ্বশুরবাড়ি?” বগা একেবারে লজ্জাবতী লতা হয়ে বলল,“ হ্যাঁ ভাই,কাল তো যেতেই হবে। ঐ গিটফিট সব খুলতে হবে। না গেলে বিচুটি কি আর রক্ষা রাখবে!” তোতলা বিট্টু বলল,“ ভাই,বৌদির কোন বোনটোন নেই? একটু দেখিস না আমার জন্য। " " আছে, হেলেঞ্চা যাই তারপর তোকে জানব।” এরমধ্যে খগেন হেঁকে বলল," ও তারাদা,জমিয়ে কড়া লিকার দিয়ে চারটে চা দাও দেখি। আর হ্যাঁ,আজ কিন্তু আমার খাতায় লিখবে না। আজ আমাদের বগা খাওয়াবে। কারণ কাল বগা শ্বশুরবাড়ি যাবে। ওখানে আমের জুস খাবে। আর আমরা শালা আঁটি হয়ে এখানে গড়াগড়ি খাবো। এই বগা,তোর শ্বশুর বাড়ি কোথায় যেনো?” এইবার বগা একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “ইটালি।” সবাই একসাথে হেসে উঠলো। বগা বলল, “ হাসিস না। আমার তো তবু জুটেছে। তোদের তো তাও জুটলো না।” তোতলা বিট্টু একটু আটকে গিয়ে বলল,“ সত্যি ভাই বগা, খোদ পশ্চিমবঙ্গে যে ইটালি আছে তা জানতাম না।” খগেন,“ আমাদের বগা যাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ইটালি।” সবাই চাটছে দেখে বগা আর বেশিক্ষণ থাকল না। যাবার সময় বগা বলল,“ চলি রে, পরশু দেখা হবে।” বলেই কেটে পড়ল।

রাতে বউকে আদর করে বলল,“ বিচুটি, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?” বিচুটি মেনি বিড়ালের মতন আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল, “ বল। ” “আমরা একসাথেই ফিরে আসবো কেমন? তুমি আবার বায়না করে থেকে যেও না যেন। তোমাকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগবে না।” বিচুটি মুচকি হেসে বলল,“ আহা! আমার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা করতে হবে না!” বগার হেঁচকি ওঠা শুরু হয়ে গেল,“ তোমার বন্ধু আছে। বান্ধবী নেই?” বিচুটি রসগোল্লার মত চোখ করে,“ কি? সাত দিন কাটল না,আমার বান্ধবীর খোঁজ? আমাকে চেনো! আমার নাম বিচুটি ।” বগা একেবারে বেলুনের মত মত চুপসে গেল। বেশ ভয় পেয়ে বলল,“ আরে দূর! তুমি যে কি? আমি তো তোমার জন্যই জিজ্ঞাসা করেছিলাম। বান্ধবীদের সাথে একটু মনের দু’চার কথা শেয়ার করতে পারতে। আচ্ছা, তোমাদের ওখানে আম বাগান আছে?” বিচুটি রেগে,“ না। বাঁশবাগান আছে,যাবে?” গতি খারাপ দেখে বগা,“ এই শোনো না,একটু কাছে আসবে? সত্যি বলছি ঘুমিয়ে পড়বো।”

শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় বগার মা বিচুটি কে বলল,“ বৌমা, আমার বগা তো একটু ভোলাভালা মানুষ। দেখে শুনে যেও।” বগা ওর বাবার আমলের পুরনো মফেটটা বার করলো। বেশ কিছুক্ষন কসরত করার পর সেটা স্টার্ট নিল। বিচুটি মুখ বেঁকিয়ে বলল,“ এই তোমার পক্ষীরাজ! মাগো,এটা করে যাব?” বগা হাসতে হাসতে বলল,“ চোখ বোজো আর দেখো কেমন টুক করে ইটালি পৌঁছে যায়।” বড় রাস্তায়ে এসে গাড়ির স্পিড বাড়ালো। বেশ খানিকটা যাওয়ার পর বগা দেখল একটা ট্যাক্সি তাকে ফলো করছে। বগা স্পিড বাড়িয়ে দিল কিন্তু ট্যাক্সি সামনে এসে ব্রেক কসল। বগা গালাগালি দিতে যাবে দেখল ট্যাক্সির ভিতর থেকে বিচুটি নামছে। মুখটা রাগে লাল আপেলের মত হয়ে আছে। বগা ভাবল যমজ হবে। পিছনের সিটের দিকে তাকিয়ে দেখল বিচুটি তো নেই। ততক্ষনে যা হবার হয়ে গেছে। ড্রাইভার সামনে এসে রেগে বলল,“ কি দাদা? নিজের জিনিস অন্যের গাড়ির বনেটের উপর পড়ে আছে আর আপনি চলে যাচ্ছেন!” বগা চুপ করে নিজের মোফেটের দিকে তাকিয়ে রইল। বিচুটি চেঁচিয়ে উঠল,“ কি দেখছো?” বগা শান্তভাবে,“ তুমি তো ছিলে আমার পিছনের সিটে। তুমি ট্যাক্সির বনেটের উপরে গেলে কি করে?” রাস্তায় লোক জমে গেছে। উৎসুক পাবলিকের তো অভাব নেই। বেগতিক দেখে বগা আবার গাড়ি স্টার্ট করল। দুপুর একটার সময় শেষমেশ বগা পৌঁছালো শ্বশুরবাড়ি।

দুপুরে পঞ্চ ব্যঞ্জন খাওয়ার পর একটু শুতে যাবে ঠিক তখনই পাড়াতুতো শালিরা এসে হাজির। তাদের আবদার মেলা চলছে, নিয়ে যেতে হবে। বগার কোন ফন্দিই কাজ হলো না। নিজের একটা ছোট শালা,বিচুটি আর বিচুটির বান্ধবীদের নিয়ে মেলায় গেল। বিচুটি সবাইকে বলে দিল কেউ যদি হারিয়ে যায় তাহলে এই নাগর দোলনার কাছে এসে অপেক্ষা করতে। সবাই সবার মত মেলা ঘুরছে। বগার নজর পুতুল নাচের দিকে। মন দিয়ে পুতুল নাচ দেখছে ঠিক তখনই বিচুটি,“ এই শুনছো,দৌড়াও!” সবাই দৌড়াচ্ছে। বগা তো হকচকিয়ে গেল। দেখল মেলাশুদ্ধ লোক দৌড়াচ্ছে। বগাও দৌড় লাগালো। দৌড়াতে দৌড়াতে বলল, “ আমরা দৌড়াচ্ছি কেন?” বিচুটি,“ আরে,এখানে তো ঘোড়দৌড় হয়। ঘোড়ার পেটে বেশি মাল পড়ে গেছে। ক্ষেপে গিয়ে লাইন থেকে বেরিয়ে পড়েছে। ঘোড়ার সামনে পড়লে আর রক্ষা নেই। তুমিও দৌড়াও।” বগা চেঁচিয়ে বলল, "কোন দিকে যাব ? ঘোড়া তো দেখতে পাচ্ছি না। শুধুই তো লোক দৌড়াচ্ছে।” বলতে বলতে দেখে বিচুটি নেই। মানুষের ধাক্কায় বগা একেবারে কুপোকাত। পদপৃষ্ট হয়ে জীবন যায় যায় আর কি! চোখ বোজার আগে দেখে তার সামনে একটা খচ্চর দাঁড়িয়ে মাথা নাড়ছে। বগা ফিসফিস করে বলল,“ এ বাবা! এ তো খচ্চর,ঘোড়া কই? এক্কেবারে ঘেঁটে ঘ "

হাসপাতালে জ্ঞান ফিরতেই দেখলো ঝাপসা চারটে মূর্তি বগার দিকে ঝুঁকে আছে। পায়ে ট্রাকশন দেওয়া। তোতলা বিট্টু,“ কিরে! আমাদের ছেড়ে আর যাবি ইটালি!”

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register