Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

maro news
গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী ফণিভূষণ দাস

আমি শ্রী ফণিভূষণ দাস, এফ.এফ.এফ.এফ.নম্বর-৪৩৬০, গেজেট-শিবগঞ্জ-১৬৪৯, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর - ০৩০৬১০০০১৭, এমআইএস নম্বর - মোবাইল নম্বর ০১৭৭৩৭৪৫৭৪৬, পিতা: শশধর দাস, মাতা ঃ রাজুবালা দাস্যা, স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম: কুখি জগন্নাথপুর, ডাকঘর: গঢ়িয়াহাটা, উপজেলা: শিবপুর, জেলা: বগুড়া। বর্তমান ঠিকানা: গ্রাম: লক্ষ্মীকোলা, ডাকঘর: দেউলী, উপজেলা: শিবগঞ্জ, জেলা: বগুড়া।

আমি ১৯৬৮ সালে বগুড়া জেলার তৎকালীন গাবতলি থানার সোনাতলা হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের পর লেখাপড়া না করে বাবার সংসারে হালচাষের কাজ শুরু করি।  এরই মধ্যে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পরও তাদের হাতে ক্ষমা হস্তান্তর না করায় সারা বাংলাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।  ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুকে মোকাবেলার আ্হবান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই আহবানের পর সারা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ২৫ মার্চ রাতে পাকসেনারা ঢাকা শহরসহ সারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ করে হাজার হাজার মানুষ হত্যা এবং শহর, বন্দর, গ্রামে আগুন দিয়ে পুড়ানো শুরু করে। দেশের এই অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে আমার কি করা উচিৎ তা ঠিক করতে পারছিলাম না।  সেই সময় আমার স্কুলের একজন শিক্ষক আমাকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরামর্শ  দেন। তার পরামর্শে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে আমি দেশ ছেড়ে ভারতের পথে যাত্রা করি। তারপর তৎকালীন বগুড়া জেলার চেংগিশপুর বর্ডার পার হয়ে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে গিয়ে প্রথমে আমি একজন আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করি।

সেখানে প্রায় ২৫ দিন অবস্থানের পর মে মাসের শেষের দিকে আমি পাশের কুষমান্ডি ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে ভর্তি হই। সেখানে আরও ২০ দিন থাকার পর মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের শিলিগুড়ির পানিঘাটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। পানিঘাটায় ৩০ দিন প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের ৭ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার তরঙ্গপুর এনে  জাকির হোসেন মন্টুকে কমান্ডার করে ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটা দল গঠন করে আমাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদান করা হয়। তারপর আমাদের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার শিয়ালা সীমান্তে প্রেরন করা হয়। সেখান থেকে আমরা মাঝে মাঝেই বাংলাদেশের বিভিন্ন শত্রুসেনা ক্যাম্প আক্রমন করে আবার নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে আসতাম। এই সময়ে আমরা বাংলাদেশের ভেতরে তৎকালীন বগুড়া জেলার কুশনাই, পাগরা দেওয়ান ও হিলি পাকসেনা ক্যাম্পে আক্রমণ পরিচালনা করি। কুশনাই যুদ্ধ: তৎকালীন বগুড়া জেলার কুশনাইতে পাকসেনাদের একটা শক্ত ক্যাম্প ছিল। এই ক্যাম্প আক্রমণের উদ্দেশ্যে প্রথমে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে শত্রুর কুশনাই ক্যাম্প রেকি করার জন্য পাঠানো হয়। রেকি করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দলটি দেখতে পায় যে প্রায় প্রতি দিন সন্ধ্যার পর শত্রুরা সীমান্তের দিকে পেট্রোল ডিউটি করতে আসে। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই আমরা ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা একদিন সন্ধ্যাবেলায় ক্যাম্পের পাশের রাস্তায় এ্যাম্বুস পেতে শত্রুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। রাত ৯টার দিকে শত্রুরা পেট্রোল ডিউটিতে বের হয়। পুরা দলটি  এ্যাম্বুসের ভেতরে প্রবেশ করতেই আমরা অতর্কিতে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। প্রথম আক্রমণেই ৪/৫ জন পাকসেনা এবং ৩/৪ জন রাজাকার নিহত হলে শত্রুরা  একবারে হতবিহবল হয়ে পড়ে। তাই বাকি ৮/১০ জন পাকসেনা ও ৪/৫ জন রাজাকার আমাদের নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।  তাদের বন্দী করে আমরা বালুরঘাটে নিয়ে আসি। এই যুদ্ধে আমাদের পক্ষে হাফিজার রহমান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। ডিসেম্বর মাসে নিয়মিত যুদ্ধ শুরু হলে আমরা বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে জয়পুরহাট ডাকবাংলো শত্রুমুক্ত করি। তার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছল পেরিয়ে গেছে। তথচ সেই সব দুঃসহ দিনের স্মৃতি আজও আমার মনের আকাশের তারা হয়ে জ্বলজ্বল করে আলো ছড়ায়।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register