Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

নভেলা গল্প হলেও সত্যি-তে রাজদীপ ভট্টাচার্য – ধারাবাহিক (রু)

maro news
নভেলা গল্প হলেও সত্যি-তে রাজদীপ ভট্টাচার্য – ধারাবাহিক (রু)

একাদশ পর্ব

ইন্দ্রাণীর গানের মধ্যে দিয়ে শুরু হল শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান। রবি ঠাকুরের গান ওর গলায় অপূর্ব মাত্রা পায়। আজ বেছেছিল পূজা পর্যায়ের একটা গান - তোমারি নামে নয়ন মেলিনু পুণ্যপ্রভাতে আজি, তোমারি নামে খুলিল হৃদয়শতদলদলরাজি ॥ তোমারি নামে নিবিড় তিমিরে ফুটিল কনকলেখা, তোমারি নামে উঠিল গগনে কিরণবীণা বাজি ॥

জন অ্যান্দ্রের একটা কম বয়সের ছবি রাখা হয়েছিল হল ঘরে। প্রাণোচ্ছল সেই ছবির যুবকের সাথে পলাশ কিছুতেই ওর দেখা শেষ বয়সের বৃদ্ধ মানুষটিকে মেলাতে পারছিল না। শুধুমাত্র শান্তিনিকেতন আর রবি ঠাকুরের নামে নিজের দেশ ছেড়ে ছুটে আসা একজন চিত্রকর। এদেশকে ভালবেসে গোটা জীবন দিয়ে গেলেন।

ইন্দ্রাণীর কণ্ঠস্বর ছড়িয়ে পড়ছিল চারপাশে। গানের অন্তর্গত ম্যাজিক ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছিল উপস্থিত মানুষগুলিকে ঘিরে –

তোমারি নামে পূর্বতোরণে খুলিল সিংহদ্বার, বাহিরিল রবি নবীন আলোকে দীপ্ত মুকুট মাজি। তোমারি নামে জীবনসাগরে জাগিল লহরীলীলা, তোমারি নামে নিখিল ভুবন বাহিরে আসিল সাজি ॥

কী অদ্ভুত একটা ছলোছলো পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল একটা গানেই। ইন্দ্রাণীকে মনে মনে তারিফ জানাচ্ছিল পলাশ। সাদা খোলের তাঁতের শাড়ি জুড়ে কালো বুটির কাজ। ঈশ্বরীর মতো দেখাচ্ছিল ইন্দ্রাণীকে। এমন মানুষের কাছে পরম ধন গচ্ছিত রাখাই যায় যেন। অ্যান্দ্রের কয়েকজন বয়স্ক কলিগ ও বন্ধুরা এসেছিলেন। তাঁরা একে একে স্মরণ করলেন কিছু স্মৃতি। অ্যান্দ্রের এক তুতো বোন ভিডিও কলে কিছু ব্যক্তিগত কথা জানালেন। স্ক্রিনে অ্যান্দ্রের দেশের বাড়ি, ছোটবেলার স্কুল, কম বয়সের ছবি প্রভৃতি দেখানো হল। এসব চলতে চলতেই দুটো বেজে গেছে। সবাই মিলে সারা হল লাঞ্চ। সেখানে ইন্দ্রাণী সর্বেসর্বা। যাইহোক সব মিটে গেল চারটের মধ্যেই।

সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে সবাই খুব ক্লান্ত। কিন্তু পলাশকে ফিরতে হবে। ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিল দ্রুত। ইন্দ্রাণীর চোখে যেন মেঘের ঘনঘটা। ও অনেকবার বলেছিল আজ থেকে যাওয়ার কথা। কিন্তু পলাশ জানে থাকলেই সকালে অফিস ঢুকতে দেরি হবে। অথচ আগামীকাল অডিট চলবে। একদম দেরি করা যাবে না। তাই কিছুতেই রাজি হল না। কথায় কথায় রুনার প্রসঙ্গ চলেই এল। খুব খুশি ওরা দুজনেই। এইসব মিটিয়ে বেরুতে বেরুতে ছ'টা বেজে গেল ঠিক। রেমি স্কুটি বের করছিল গ্যারাজ থেকে। সিঁড়ির গোড়ায় শেষ মুহূর্তের দু'একটা কথা ইন্দ্রাণীর সঙ্গে। একটা গাঢ় হাগ দিয়ে ইন্দ্রাণী বলল — চিন্তা কোর না এই ব্যাপারটা নিয়ে। সব দায়িত্ব আমার, আমাদের।

— এতটা সহজ নয় কিন্তু ইন্দ্রাণী। ভালো করে ভেবে দেখো। এখনো সময় আছে।

— আমি তোমাকে বিরক্ত করব না কখনোই। একটা সুতো বাঁধা রইল শুধু। তবু মাঝে মাঝে সেই টানে যদি দেখা দাও।

ইন্দ্রাণীর কপালে একটা নিঃশব্দ চুমু দিল পলাশ। ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। স্কুটিতে মোড়ে এসে দু'চার মিনিট দাঁড়াতেই পেয়ে গেল বাসটা। ওঠার সময় জড়িয়ে ধরল রেমি। কানের কাছে মৃদুস্বরে বলল — থ্যাংকস ফর দ্য প্রিসিয়স্ গিফট। অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে পলাশ। বাস হর্ন মেরে উঠতে ঘুরে পা রাখল ভিতরে। বাসটা চলতে শুরু করেছে। লাইটপোস্টের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে রেমি তখনও চেয়ে আছে বাসের জানলার দিকে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register