Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে শম্পা রায় বোস (পর্ব - ৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে শম্পা রায় বোস (পর্ব - ৮)

হায়দ্রাবাদ ভ্রমণ 

রামোজি ফিল্ম সিটি

হলুদ রঙের ঝাঁ চকচকে বাস আমাদের ফিল্ম সিটির এ গলি সে গলি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর সুদর্শন স্মার্ট গাইড দাদা ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় আমাদের সেই দ্রষ্টব্য জায়গাগুলোর সম্পর্কে এত সুন্দর ভাবে বলছেন যে দেখার সময় সেই জায়গাগুলো সম্পর্কে বেশ খানিকটা জানাও হয়ে যাচ্ছে। ভালো লাগছে। বাসের পরিবেশ টাও দারুন। সবাই খুব মন দিয়ে শুনতে শুনতে দেখে নিচ্ছে সবকিছু। যেটা দেখছি সেটার সম্পর্কে কিছু না জানলে সেটা দেখার আর আগ্রহ থাকে না। যাইহোক আমি দেখছি রামোজি ফিল্ম সিটি। শহরের মধ্যে শহর । কি নেই সেখানে কত সুযোগ সুবিধে সাজানো গোছানো একটা সুন্দর ভারতবর্ষ,,, একটা গোটা পৃথিবী। আমি ভাবছি ভেবেই যাচ্ছি। লন্ডন প্যারিস আমেরিকা সুইজারল্যান্ড সব আছে এক জায়গায় ভাবা যায়! আর সব একদম আসলের মতো। নকল বলে মনেই হচ্ছে না। ফিল্ম সিটি স্বপ্ন দেখার শহর, স্বপ্ন তৈরি করার শহর, স্বপ্নে ভেসে যাওয়ার শহর। হায়দ্রাবাদ গেলেই রামোজি ফিল্ম সিটিতে একটা দিন কাটানো মানে যে কী অসাধারণ অভিজ্ঞতা না গেলে বোঝানো সম্ভব নয়। এখানে প্রতিটি মোড়ে, প্রতিটি রাস্তার আশে পাশে বাঁকে বাঁকে উত্তেজনা। যেন মনে হয় বিস্ময়কর চমকে ভরা একটা জাদু রাজ্য । যেখান দিয়ে আমি চলছি, চলেছি বাসে বসে কখনো বা পায়ে হেঁটে সবটাই যেন স্বপ্নের মতো সুন্দর। কী পরিষ্কার রাস্তাঘাট! রাজস্থানের রাজ রাজাদের মহলগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেও আসলের সঙ্গে আলাদা করতে পারি নি। রাজস্থান আমি গিয়েছি তাই আসল নকলের তুলনা করতে পারব ,, এই আত্মবিশ্বাস ছিল আমার। কিন্তু সত্যিই আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম! এত সুন্দর করে তৈরি করা যে মনেই হচ্ছে না এটা আসল প্রাসাদ নয়। আবার রেলওয়ে স্টেশন,ট্রেন, বিশেষ করে প্ল্যাটফর্ম দেখে আমার তো ভিরমি লাগার মতো অবস্থা হয়েছিল। উফ্ একদম সত্যি কারের প্ল্যাটফর্ম! ট্রেনে উঠে কতজন ছবি তুলছে "দিল ওয়ালে দুলহনিয়া"য় শাহরুখ খানের মতো। প্ল্যাটফর্মে বসার জায়গা ছিল। কিছুক্ষণ বসেও ছিলাম।এসব দেখে আবার বাসে করে আর একটা জায়গায় যেতে হবে। এতবড় জায়গা পায়ে হেঁটে দেখা অসম্ভব। যাইহোক আবার বাসে এসে বসতেই মন চলে গেল অন্য দুনিয়ায়। আমার বিহ্বলতা কাটতেই চাইছে না। আমার বরের কনুইয়ের আর একটা গুঁতো খেয়ে সম্বিত ফিরে এল। ওর দিকে তাকাতেই বলল,,, এত আদেখলামো করার কিচ্ছু নেই। অত উত্তেজনারও কিছু নেই। একটা স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে চলছিলাম। স্বপ্ন ভঙ্গ হল ওর কথায়। ব্যাঘাত হল । ছন্দ পতন ঘটল। মুখে চোখে বিরক্তি প্রকাশ করলাম আর মনে মনে বললাম আস্ত সিংহ একটা দুর। কিছু বিশেষ বিশেষ কারণে রাগটা সামলে নেওয়ার জন্য ওকে সিংহ মশাই বলি। বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টিগ্রেটেড ফিল্ম সিটি এবং সিনেমার জাদু সহ ভারতের একমাত্র থিম্যাটিক ছুটির গন্তব্য হিসাবে যার কোন জুড়ি নেই তাকে নিয়ে উত্তেজনা হবে না? কি কথা বলছে লোকটা ! এটা আমাদের দেশের সম্পদ গর্ব করার বিষয় আদিখ্যেতা করারই মতো তো এটা। গোটা পৃথিবীর কাছে আকর্ষণীয় একটা জায়গা তার জন্য উত্তেজিত হব না? বিখ্যাত আর্কিটেক্ট নীতিশ রায়ের অসাধারণ ডিজাইন যা এই ফিল্ম সিটি কে বিশ্বের এক নম্বরে পৌঁছে দিয়েছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক রামোজি রাও এর উদ্যোগে রামোজি গ্রুপ এই ফিল্ম সিটি তৈরি করেন।প্রায় ২০০০ একরের বিশাল আয়তনের ব্যাপক সুযোগ সুবিধা এবং অসংখ্য সুন্দর সুন্দর লোকেশনের সমাহারে গড়ে ওঠা অসাধারণ বিশেষত্বের জন্য বিখ্যাত এবং বিশ্বকে বিস্মিত করা এই ফিল্ম সিটি জায়গা করে নিয়েছে গিনেস বুকে। ১৯৯৬ সালে তৈরি হয় এই রামোজি ফিল্ম সিটি। এবং ১৯৯৭ সালে এখানে স্যুটিং করে সর্ব প্রথম যে সিনেমাটি মুক্তি পায় সেটি হল "মা নান্নাকু পেলি" কতরকম চিন্তা মাথায় আসছে। বিশ্বের এমন বিখ্যাত জনপ্রিয় ফিল্ম সিটি দেখে এমন একটু আধটু আদিখ্যেতা না হয় করলামই। তাতে কী। সবচেয়ে বড় কথা একজন বাঙালির ডিজাইন করা। তার উপর তাঁর পদবী আবার "রায়"। এসব ভেবে টেবে গর্বে আমার বুক আরও চওড়া। আমিও একবার কনুই এর গুঁতো মেরে বললুম হুঁহুঁ বাবা দেখেছ "রায়" রা পৃথিবীর কোথায় কোথায় গেঁড়ে বসে তাঁদের আধিপত্য ছড়িয়েছে। একদম চুপচাপ বসো। আমাকে একদম ডিসটার্ব করবে না বলে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মুখ বেঁকিয়ে জানালার দিকে তাকালাম। ক্রমশঃ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register